• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০১৯, ০৮:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০১৯, ০৮:৫৮ পিএম

পাঠাও-উবার আশ্রয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী ঢাকায়

পাঠাও-উবার আশ্রয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী ঢাকায়

পাঠাও-উবারসহ বিভিন্ন রাইড শেয়ার কোম্পানিতে যানবাহন চালানোর মাধ্যমে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন স্তরের কিছু নেতা ও বিপুল সংখ্যক কর্মী ঢাকায় প্রবেশ করেছেন। মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক কর্মীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে রাইড শেয়ার প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছেন। এতে তারা নিরাপদ অনুভব করছেন।

রাইড শেয়ারিং করেন- এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পেয়েছে দৈনিক জাগরণ।

কর্মসূত্রে ঢাকায় বসবাসরত বিপুল সংখ্যক তরুণ যেমন মোটর সাইকেল ও প্রাইভেটকার দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির রাইড শেয়ারিংয়ে যুক্ত হয়েছেন, তেমনি ঢাকার বাইরের দূরদূরান্তের জেলাগুলো থেকেও বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকায় এসে রাইড শেয়ার করছেন। তারা মোটর সাইকেলকেই বেছে নিয়েছেন। কেননা, অল্প বিনিয়োগে এর দ্বারা অর্থসংস্থান অনেকটা সহজ।

তথ্য মিলেছে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, নোয়াখালী, দিনাজপুর, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, নাটোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরসহ এসব জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিপুল সংখ্যক তরুণ ঢাকায় রাইড শেয়ারিং করছেন মোটর সাইকেল দিয়ে। এর মধ্যে বড় একটি অংশ বিএনপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল নেতা কর্মী-সমর্থক, জামায়াতের অঙ্গসংগঠন ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মী বা সমর্থক। উল্লেখিত জেলাগুলোর কয়েকটি জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত।

অফিস কাজের ফাঁকে ফাঁকে পাঠাওয়ে মোটরসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ার করেন ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানির কর্মী মো. রাজু। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে পূর্বপরিচিত রাজু বলেন, পান্থপথ সিগন্যালে একদিন এক ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। তার নাম ইমরান। তার বাড়ি সাতক্ষীরায়। কয়েকদিনের মধ্যে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। একটা সময় ইমরান হতাশার সঙ্গে তার জীবনের নানা কথাবার্তা প্রকাশ গিয়ে বলেন, তিনি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ছাত্রশিবির কর্মী। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল থেকে পাওয়া প্রাণনাশের হুমকি ও বেশকিছু রাজনৈতিক মামলা খেয়ে ঢাকায় এসে রাইড শেয়ার করছেন। যে মোটরসাইকেল দিয়ে রাইড শেয়ার করছেন, সেটা ঢাকা থেকেই কেনা, দলের এক সামর্থবান সিনিয়র নেতার কাছ থেকে ধার নিয়ে তিনি এটি কিনেছেন।

রাজু বলেন, এসব শোনার পর আমি তাকে একটু এড়িয়ে চলতে শুরু করি। একদিন তার ফোন বন্ধ পাই। সেই যে বন্ধ, আর পাইনি প্রায় একমাস ধরে।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা ছাত্রদল কর্মী আনোয়ার হোসেন সম্পর্কে তথ্য জানা যায় ঢাকার রামপুরার বাসিন্দা আওয়ালের কাছ থেকে। রাজুর সঙ্গে ইমরানের পরিচয় যেভাবে, আনোয়ারের সঙ্গে আওয়ালের পরিচয়ও সেভাবে। ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আওয়াল মাঝেমাঝে পাঠাওয়ে রাইড শেয়ার করেন।

আওয়াল বলেন, গত বছরের আগস্টের এক রাতে বনশ্রীতে একটি চা দোকানে আনোয়ারের সঙ্গে পরিচয়। ভালোই কথাবার্তা বলতে পারে আনোয়ার। সেদিন রাতে দুজনের ফোন নম্বর আদান-প্রদান হয়। এরপর থেকে মাঝেমাঝে যোগযোগ হত, দেখাও হত। দু’তিন মাসের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠতা হয়। প্রতিদিনই বনশ্রীতে আড্ডা দিতাম। একদিন সে আমার কাছে চাকরি চায়। জানায়, চাকরি না পেলে মরে যাওয়া ছাড়া আর রাস্তা নেই। পরে সে জানায়, কামারখন্দে তার নামে ৫টি নাশকতার মামলা আছে। এসব এড়ানোর জন্যই তিনি ঢাকায় চলে এসেছেন এবং বিভিন্ন জনের পরামর্শে রাইড শেয়ার করছেন। এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না, চাকরি দরকার। 

আওয়াল আরও বলেন, এসব জানার পর আমার মধ্যে একটু ভয় কাজ করে। তার সঙ্গে সম্পর্ক গুটানোর চেষ্টা করি। কিন্তু আনোয়ার আমার পেছনে লেগেই থাকত। একটা পর্যায়ে তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলে সম্পর্ক শেষ করি।

এ ধরনের আরও কিছু ঘটনা জানতে পেরেছে দৈনিক জাগরণ।

পুলিশের কাছে এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। তবে দৈনিক জাগরণের কাছ থেকে শুনে তারা শঙ্কিত। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন পদস্থ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, এটি হয়ে থাকতে পারে। আমি নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করি। তবে এটা যদি হয়েই থাকে, তাহলে তো খুবই খারাপ খবর। কেননা, এই রাইড শেয়ারিংয়ের অজুহাতে ঢাকায় জমে যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। যদি কোনো রাজনৈতিক সংঘাত ঘটে, তাতে যে এসব নেতাকর্মী অংশ নেবে না, এর গ্যারান্টি নেই। অবশ্যই এটি নিয়ে আমরা দ্রুতই কাজ শুরু করব।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই।

তবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাষ্য- এ ধরনের একটি ইঙ্গিত তারা পেয়েছেন, এটি নিয়ে তাদের একটি কাজ চলমান আছে।

পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের আরেকজন পদস্থ কর্মকর্তা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি রাইড শেয়ারিং কোম্পানির মাধ্যমে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী ঢাকায় কাজ করেন, সেটা ঢাকার রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। তারা তো ভেতরে ভেতরে সংক্ষুব্ধ। যে কোনো সময় কোনো রাজনৈতিক সংঘাতে তারা নিজেদের নিয়োজিত করে ফেলতে পারে। খুব দ্রুতই আমরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করব।

আরএম/ এফসি