• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০১৯, ০৯:৫৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০১৯, ০৪:৪৫ পিএম

নেত্রকোনার ৫৭টি নদী পরিণত হয়েছে ফসলের মাঠে

নেত্রকোনার ৫৭টি নদী পরিণত হয়েছে ফসলের মাঠে
অস্তিত্ব হাড়াতে বসেছে নেত্রকোনার কংস, ধনু, মগড়া, সোমেশ্বরীসহ ছোটবড় ৫৭ টি নদী- ছবি: জাগরণ

 

অস্তিত্ব হাড়াতে বসেছে নেত্রকোনার কংস, ধনু, মগড়া, সোমেশ্বরীসহ ছোটবড় ৫৭ টি নদী। নদীর নাব্যতা হারিয়ে পরিণত হয়েছে ফসলের মাঠে। কোনো কোনো নদী ধু ধু বালুচর। নিয়মিত খননের এর অভাবে এসব নদীতে জেগে উঠেছে চর। নদীর নব্যতা হারানোতে জেলেরা হারাচ্ছে কর্মসংস্থান। অন্যদিকে, নদীতে পানি না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশও পড়েছে হুমকির মুখে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খননের জন্য সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে।

সোমবার (১২ জুন) ১৮৯৭ সালে এক ভূমিকম্পের পর জেলার বড় বড় কয়েকটি নদী বিলুপ্তির পথ ধরে। বর্তমানে নেত্রকোনার ছোটবড় ৫৭টি নদী অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। প্রতিবছর পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা বালি ও পলিতে ভরাট হওয়া নদীগুলো এখন প্রায় মৃত। খননের অভাবে জেলার কংস, সুমেশ্বরী, মগড়া, ধনুসহ প্রায় সব কটা নদীতে চলছে ধান সহ বিভিন্ন মৌসুমী শাকসবজির আবাদ। এক সময়ের খরস্রোতা নদী এখন পরিণত হয়েছে ফসলের মাঠে। 

অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ হওয়ায় প্রতি বছর আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষি ফসল। এ ছাড়াও কৃষি ও ব্যবসা বাণিজ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা।

বারহাট্টা উপজেলার চল্লিশকাহনীয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন ফকির জানান, কংস মগড়া ধনু নদীতে আজকাল পানি নেই বললেই চলে। যেভাবে নদীগুলো ভরে যাচ্ছে তাতে আগামী এক দশকে অস্থিত্ব বিলীন হবে সবকটা নদীর। জেলার প্রতিটি নদী খনন করা প্রয়োজন।

সদর উপজেলার কুমারপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিন বলেন, নওয়াপাড়ার খালটি এখন স্থানীয়রা দখল করে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করছে। কেউ দেখছে না। একারণে বিলের পানি সময়মত নামছে না। বোরো মৌসুমে সঠিক সময়ে ধান রোপন করা যায় না। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। 

নেত্রকোনা সদর লক্ষীগঞ্জ এলাকার ডা. মো. মানিক মিয়া বলেন, লক্ষীপুর এলাকার মগড়া নদীর বুকে এখন বোরোর চাষাবাদ হয়। বাদাম, লাউ কুমরাসহ নানান জাতের শাকসবজিও হচ্ছে। এখন আর একে কেউ নদী বলবে না। ফসলের মাঠ হয়ে গেছে।

সদর উপজেলার বোবাহালা গ্রামের আ. রাজ্জাক বলেন, আমার বয়স ৫০ বছর। আমি ছোটকালে দেখছি দুর্গাপুর থেকে বয়ে আসা সোমেশ্বরী নদী দিয়ে ধান ও পাটের বড় বড় নৌকা ও কার্গো এক কথায় নদী পথে বিভিন্ন হাট বাজার ও বন্দর পর্যন্ত যাতায়াতে একমাত্র মাধ্যম ছিল। এখন খেলার মাঠ হয়ে গেছে।

কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের সেওড়াগঞ্জ গ্রামের রমজান আলী জানান, দুর্গারের খোরস্রাতো সোমেশ্বরী নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এমনকি বিখ্যাত সুস্বাদু মহাশোল মাছ পাওয়া যেতো। প্রবাহমান কংস ও সোমেশ্বরী নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষক নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে হাজার হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদ করতো। এ নদ-নদী বালি ও পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদী নাব্যতা হারিয়েছে, মাছের অবাধ বিচরণ বন্ধ হয়ে গেছে, সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে, নদী ভরাট হবার কারণে অকালে বন্যায় ফসল বিনষ্ট সহ প্রাকৃতিক বিপর্ষয় নেমে এসেছে।

পাহাড়ি ঢলে নদীর নাব্যতা হারিয়েছে স্বীকার করে সুমেশ্বরীসহ জেলার সবক’টা নদী খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানান, নেত্রকোণা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান। এরই মধ্যে নেত্রকোনার দুইশো ঊনষাট কিলোমিটার নদী খননের জন্য সার্ভে করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্লান অনুযায়ী নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। 

সারাদেশে দুই হাজার সাতশ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা দেশে প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার নদী খননের প্রকল্প শুরু হয়েছে বলে জানান হাওর ও জলাশয় উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মজিবুর রহমান। চলমান প্রকল্পে নেত্রকোনার ৪টি উপজেলায় নদী খনন কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে সবকটা নদী খনন করে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। 

টিএফ