• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০১৯, ০৪:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০১৯, ০৪:০৬ পিএম

প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে অপহরণের পর দলবদ্ধ ধর্ষণ

প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে অপহরণের পর দলবদ্ধ ধর্ষণ

মামলা করার অপরাধে প্রতিব্ন্ধী গৃহবধূকে আদালতের সামনে থেকে অপহরণের পর দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্বামী এবং তার সহযোগিতাদের বিরুদ্ধে। এর ফলে মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন গৃহবধূ। সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই গৃহবধূ বর্তমানে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বরিশাল নগরীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে ফজলুল হক এভিনিউ সড়ক থেকে প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে অপহরণ করা হয়। গৃহবধূ গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া গ্রামের বাসিন্দা।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ জানান, ‘পারিবাকি প্রস্তাবের মাধ্যমে ২০১৩ সালে স্বরূপকাঠীর নেছারাবাদ উপজেলার কুড়িয়ানা আদাবাড়ি গ্রামের বিনেন্দ্র মিত্রর পুত্র প্রবীর মিত্রর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বর পক্ষের দাবি অনুযায়ী নগদ দুই লাখ টাকা, তিন ভরি স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল যৌতুক হিসেবে দেয়া হয়।

কিন্তু বিয়ের এক বছর না হতেই স্বামী প্রবীর মিত্র ও তার পরিবারের লোকেরা গৃহবধূকে তার বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা এনে দিতে বলে। তাদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন শারীরিক প্রতিবন্ধী গৃহবধূ। সেই থেকে তার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার। এমনকি এক সময় ঘর থেকেও বের করে দেয়া হয় তাকে।

এ ঘটনায় গৃহবধূ বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন নির্যাতিত গৃহবধূ। আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক স্বামীসহ তিনজনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন পুলিশকে। সে অনুযায়ী গৃহবধূর শাশুড়ি আরতি মিত্র ও দেবর পার্থ মিত্রকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

গৃহবধূ জানান, ‘গত ১৬ এপ্রিল মামলার কার্যক্রম শেষ করে দুপুরে আদালত থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে আদালতের সামনে ফজলুল হক এভিনিউ সড়কে অপরিচিত এক লোক তাকে কথা শোনার জন্য পথরোধ করে। কৌশলে তার মুখে রুমাল ধরলে অচেতন হয়ে পড়েন গৃহবধূ। প্রায় দুই ঘণ্টা পরে জ্ঞান ফিরতে একটি পরিত্যক্ত নির্জন ঘরের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন গৃহবধূ। দেখতে পান তার চার দিক ঘিড়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বামী প্রবীর মিত্র, ননদ জামাই মানব চন্দ্র, গৌরাঙ্গ নাথসহ আরো কয়েকজন অজ্ঞাত লোক।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলা দায়েরের খেসারতের কথা বলে স্বামী ও ননদের জামাইসহ অজ্ঞাত কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করে। পরে পথচারীদের সহযোগিতা নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছালে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে গাইনী বিভাগে ভর্তি করে দেন।

এদিকে, ঘটনার দুদিন পরে অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে স্বামী প্রবীর মিত্র গৃহবধূর পূর্বের যৌতুক মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে। এসময় বিচারক তাকে জেলে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

এ প্রসঙ্গে শেবাচিম হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক খুরশীদ জাহান বলেন, ‘ধর্ষণের ফলে গৃহবধূর অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাছাড়া ওই গৃহবধূ আর কখনো মা হতে পারবে কিনা বিষয়টি নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমরা তাকে ভালোভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখছি। তাছাড়া তার নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। তাই তাকে আইনি সহায়তার জন্য হাসপাতালের ওসিসিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

অপরদিকে ওসিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘গৃহবধূর অভিযোগ শোনা হয়েছে। আপাতত তার চিকিৎসা চলছে। তাছাড়া এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা হবে। সে বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অবহিত করেছি।

কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি প্রথমে আমার জানা ছিল না। এমনকি কেউ অভিযোগ নিয়েও আসেনি। পরে জানতে পেরে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি। গৃহবধূ বর্তমানে ওসিসি’র তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কেএসটি