দেশের পুঁজিবাজারের চলমান দরপতনের নেপথ্যে কেউ কেউ আছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারে বার বার এমন ঘটনা (পতন) ঘটছে, তার মানে এর পেছনে কেউ না কেউ আছে। একবার ১৯৯৬ সালে, আরেকবার ২০১০ সালে তা হয়েছিল।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এসব মন্তব্য করেন।
বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, সামনে জাতীয় বাজেট। পুঁজিবাজারে দিকে আমাদের খেয়াল রয়েছে। অর্থনীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের একটা সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং শেয়ারবাজার ভালো হওয়া দরকার। এ সময় সাংবাদিকরা বন্ধের দিনে বৈঠক করার কারণ জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারাই তো পত্রিকায় লিখছেন, মার্কেট নাই হয়ে গেছে। কোথায় দেখলেন মার্কেট ফল (পতন) করছে? সূচক পাঁচ হাজার ৯০০ হয়ে গিয়েছিল। এখন পাঁচ হাজার তিনশ আছে।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অর্থনীতি ভালো হলে বাজার ভালো হবে। পুঁজিবাজারে এমন ওঠা-নামা হতেই পারে। বাজারে এখন আমি খারাপ কিছু দেখি না। পাঁচ হাজার ৯০০ থেকে পাঁচ হাজার ৩০০ হয়েছে, এতে কী এমন হয়ে গেছে! সব জায়গার পুঁজিবাজারে ওঠা-নামা আছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ভয় দেখালে হবে না। আমাদের পুঁজিবাজার অন্য জায়গার থেকে ভিন্ন। বাইরে থেকে যারা পুঁজিবাজারে আসেন তারা বোঝেন এবং পড়ালেখা করে আসেন। কিন্তু দুঃখজনক আমাদের এখানে পুঁজিবাজার বোঝেন এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা খুবই কম। সবাই যদি বুঝতো তাহলে বাজার নিয়ে আমাদের এতো শক্তিশালী কমিশন দরকার ছিল না। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে অনেক আইন-কানুন করা হচ্ছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা কাউকে জোর করে পুঁজিবাজারে আনতে পারি না। এখানে যার খুশি সে আসবে। যার ইচ্ছা হবে না, সে আসবে না। তবে সামনে বাজেট, আমরা চাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা আসুক। ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভালো কোম্পানিগুলো এখানে আসবে না। আসলে খারাপ কোম্পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে তারাও খারাপ হয়ে যাবে। তবে আমি মনে করি, এ মুহূর্তে বাজার পরিস্থিতি খারাপ নয়। এখন মূল্য আয় অনুপাত (পিই) বেশ কম ১৫ থেকে ২০ এর মধ্যে আছে। একসময় মূল্য আয় অনুপাত ৯০ হয়ে গিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, টানা তিন মাস ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দাভাব চলছে। এতে তালিকাভুক্ত প্রায় তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এই কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে হাওয়া হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে চরম লেনদেন খরা। এমন ভয়াবহ মন্দার কারণে গত দুই সপ্তাহ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে বিক্ষোভ করেছেন। ফলে দুই সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের বেশ দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। দফায় দফায় বৈঠক করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় বিদেশ থেকে ফিরে বন্ধের দিনে বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী।
এআই/এসএইচএস