• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০১৯, ১০:৪১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৬, ২০১৯, ০৫:০৪ পিএম

১০৪ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে সবিতা গ্রন্থাগার

১০৪ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে সবিতা গ্রন্থাগার

 

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বালুভরা আরবি উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারটি ১০৪ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসছে। গ্রন্থাগারটি একদিকে বিদ্যালয়ের খ্যাতি যেমন বৃদ্ধি করেছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহোরনের সুযোগ প্রসারিত করেছে। 

১০৪ বছর বয়সের প্রাচীন এই বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে জাতির নিরবিচ্ছিন্ন সেবা করে যাচ্ছেন। লাইব্রেরীতে প্রদর্শিত বাংলাদেশসহ বিশ্বের বরেণ্য মনিষীদের ছবি এক অনন্য দৃষ্টান্ত। স্কুল পর্যায়ে এমন সমৃদ্ধ এবং দর্শনীয় লাইব্রেরী বিরল ঘটনা। 

 

 

এর পাশাপাশি নিজ বিদ্যালয়টির উন্নয়ন, জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন এ প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। তাদেরই একজন সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। বর্তমানে তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব পদে নিয়োজিত রয়েছেন। তারই প্রচেষ্টায় কেবলমাত্র বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সক্রিয় উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে সবিতা চক্রবর্তী স্মৃতি গ্রন্থাগার। কোন মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ে এমন সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার কোথাও আছে বলে প্রতীয়মান হয়নি। 

 

 

এই গ্রন্থাগারে মোট ৩ হাজার ৭২৬টি বই রয়েছে। বইয়ের তালিকায় রয়েছে- স্থানীয়, জাতীয় এবং বিশ্বখ্যতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের জীবনী, শিল্পী সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, ক্রীড়াবিদ, রাজনীতিবিদ, চলচিত্রকার, চলচিত্র শিল্পী, ইতিহাসবিদদের জীবনী, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন লেখা, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক নোভেল, কাব্যগ্রন্থ, রবীন্দ্র রচনাবলী, নজরুল রচনাবলী, ধর্মীয় গ্রন্থ সামগ্রী, গবেষনামুলক লেখা, শিশুতোষ লেখাসহ সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যম এই গ্রন্থাগারটিকে করেছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। 

 

 

গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক মাসুদা আক্তার জানালেন, ছাত্রছাত্রীদের গ্রন্থাগারে এসে বই পড়ার আগ্রহ বেশ। সপ্তাহে ৫ দিনই প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ১টি করে বই নেয়ার সুবিধা আছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই পুনরায় ফেরত দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের বই এবং শিশুতোষ বই পড়তে বেশি আগ্রহী বলে মনে হয়। এই গ্রন্থাগারের উল্লেখযোগ্য এবং বিরল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খ্যতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের ছবি টানিয়ে রাখা। সংগৃহীত বইগুলোর মতই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের শিক্ষা, সাংস্কৃতি, সাহিত্য, ক্রীড়া, রাজনীতি, শিল্পী, দার্শনিক, চলচিত্র শিল্পী, চলচিত্রকার, নাট্যকার, ঔপন্যাশিক, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়কদের দুষ্প্রাপ্য সব ছবি এখানে চারিদিকের দেয়ালে সারিবদ্ধভাবে টানানো রয়েছে। এসব ছবির মধ্যে বঙ্গবন্ধু থেকে মাও সে তুং, রবীন্দ্রনাথ নজরুল থেকে শেক্সপিয়ার, হাছনরাজা থেকে লালন ফকির, কোনটাই বাদ পড়েনি। দুষ্প্রাপ্য এই কালেকশন সত্যিই যে কোন মানুষকে অভিভূত করে। ছবির এই গ্যালারিতে মোট ৩ শতাধিক ছবি ঠাঁই পেয়েছে। ছবির তালিকা আরও বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। 

 

 

বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র প্রীতম কুমার চক্রবর্তী ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী যুথি আক্তার তারা দুজনেই এই লাইব্রেরীর নিয়মিত পাঠক। তারা বেশির ভাগ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই পড়ে থাকে। তারা বলেছে এই গ্রন্থাগরে বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং জতির জনক বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সঠিক এবং বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি।

 

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোত্তালেব হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েল পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন থেকে শুরু করে সবদিকে তার গঠনমূলক ভূমিকা অতুলনীয়। একমাত্র তারই নজরদারী এবং উদ্যোগে এই বিদ্যালয়টি একটি আদর্শ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এ রকম একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি নিজেকে নিয়ে গর্ব বোধ করছি। 

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুকমল কর্মকার বলেন, এই বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। একটি লাইব্রেরী এলাকার শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে যথেষ্ট সহায়ক। কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা মানুষকে জ্ঞানী করে না। জ্ঞান অর্জনে বই পড়ার কোন বিকল্প নাই। বালুভরা আরবি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সচিব বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নসহ লাইব্রেরীটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। 

 

 

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, আমার পূর্বপুরুষ থেকেই এলাকার মানুষের কল্যাণমুখী কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। আমার দাদু বালুভরা আরবি উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি তারও আগে বর্তমান জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরে অনুরূপ আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। যেখানে আমার কিছু করার সুযোগ বা সাধ্য রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা আমাকে যে সুযোগ ও যোগ্যতা দিয়েছেন তার দায়বদ্ধতা থেকেই এলাকা এবং এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে পারা গৌরবের মনে করি। সেই চেতনা বোধ থেকেই আমি আমার গ্রাম, আমার এলাকা এবং আমার স্কুলের জন্য এসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। 

টিএফ