• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০১৯, ১০:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৪, ২০১৯, ১২:২৯ এএম

টাইফয়েড রোগীর পথ্য

টাইফয়েড রোগীর পথ্য

 

টাইফয়েড জ্বর সম্বন্ধে জানে না বা এর নাম শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে টাইফয়েড জ্বরের ভয়াবহতা, যিনি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন।

যেহেতু শীত পেরিয়ে আস্তে আস্তে গরম পড়া শুরু করেছে অর্থাৎ আবহাওয়া বদলাতে শুরু করেছে, আর ঠিক এই সময়ে দরজায় কড়া নাড়ে নানা রকম রোগ বালাই। এসব রোগ বালাইয়ের মধ্যে টাইফয়েড জ্বর অন্যতম।

টাইফয়েড পানিবাহিত রোগ। সালমনেলা টাইফি ও প্যারাটাইফি জীবাণু থেকে এই রোগ হয়। দূষিত পানি বা দূষিত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এই জীবাণু যদি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তবে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। আবার অনেক সময় টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায়। 

সাধারণত, টাইফয়েডের জীবাণু দেহে প্রবেশের ১০-১৪ দিন পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।

জ্বরই এই রোগের প্রধান লক্ষণ। আক্রান্তের শরীরের তাপমাত্রা ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকে। সঙ্গে, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, মুখের ভেতর ঘা, দুর্বলতা ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা চামড়ায় লালচে দানা দেখা দেয়া টাইফয়েডের প্রাথমিক লক্ষণ।

আর শরীরের তাপমাত্রা টানা ৩ দিনের বেশি ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, টাইফয়েডের চিকিৎসা যদি যথাসময়ে শুরু না হয় তবে তা দেহে রক্তক্ষরণ, অগ্নাশয়ের প্রদাহ, মেরুদণ্ডে সংক্রমণ কিংবা কিডনির জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। 

টাইফয়েড রোগে সুস্থতার জন্য রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর রোগীর  অবস্থা বুঝে রোগীকে ৭-১৪ দিনের অ্যান্টিবায়টিক মেডিসিন বা ইনজেকশনের কোর্স কমপ্লিট করতে হয়। না হলে টাইফয়েডের জীবাণু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় না বরং পিত্তথলিতে অবস্থান নিয়ে পিত্তথলির ক্ষতিসাধন করে।

পাশাপাশি, রোগীকে সহজপাচ্য অথচ পুষ্টিকর এবং সুষম খাবার দিতে হয়, যাতে করে রোগী এই রোগের ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে। 

যেমন খাবার খেতে হবে

টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত রোগীর দেহে পুষ্টি উপাদানের হজম ও শোষণে ব্যাঘাত ঘটে। পাশাপাশি, রোগীর খাদ্য গ্রহণে অনীহা এবং রোগীর দেহের মেটাবলিক রেট প্রায় ১০% পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাই, টাইফয়েড রোগীর খাদ্য নির্বাচন করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে।

রোগীর দ্রুত আরোগ্যের জন্য রোগীকে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত অথচ সহজপাচ্য এবং সুষম খাবার দেয়া উচিত।


দ্রুত শক্তি যোগাতে পারে এমন তরল

যেহেতু, টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে, তাই এসময় তার ক্যালরি চাহিদাও বেড়ে যায়। এসময় ক্যালরি চাহিদা পূরণের জন্য দ্রুত শক্তি যোগাতে পারে যেমন- গ্লুকোজের পানি, ডাবের পানি, ফলের রস, লাচ্ছি- এই ধরনের খাবার বেশি করে দিতে হবে। পাশাপাশি, লেবু, আদা বা তুলসি চা-ও দেয়া যেতে পারে।

এই ধরনের স্বাস্থ্যকর পানীয় দেহে দ্রত শক্তি যোগানোর পাশাপাশি দেহের পানিশূন্যতা এবং ইলেক্ট্রোলাইটস ইমব্যাল্যান্স দূর করতে সাহায্য করে।


ফুটানো পানি

টাইফয়েড মূলত পানিবাহিত রোগ। তাই পানি পানের ক্ষেত্রে নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা। পানি খুব ভালোভাবে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। পাশাপাশি রোগীর প্লেট, গ্লাস, চামচ ফোটানো পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এসময়, সবচেয়ে ভালো হয় ভালো কোনো ব্রান্ডের বোতলজাত পানি পান করা।


সহজপাচ্য খাবার

টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সহজে হজম হয়, খুব বেশি চিবোতে না হয় এবং গিলতে সুবিধা হয় এমন খাবার দিতে হবে। নরম ভাত, সিদ্ধ আলু, সফট কুকড সব্জি, পোসড ডিম, দুধ, বাচ্চা মুরগীর মাংস বা স্যুপ, সুজি, সাগু, বার্লি- এই ধরনের সহজপাচ্য খাবার রোগীকে অল্প অল্প করে বারে বারে দিতে হবে। যার ফলে, রোগীর ওজন এবং পুষ্টি উভয়ই ঠিক থাকে।


ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল

টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিদিন, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল এবং ফলের জুস গ্রহণ করা উচিত। সম্ভব হলে প্রতিদিন ১-২ গ্লাস কমলা, মালটা বা আনারসের জুস গ্রহণ করতে হবে। এইসব ফলে থাকা ভিটামিন-সি ইনফেকশন, অরুচি, শরীরের প্রদাহ কমানো এবং শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, ফল এবং ফল কাটার ছুরি এবং অন্যান্য জিনিস খুব ভালোভাবে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

আর হ্যাঁ, মেডিসিনের পাশাপাশি, আক্রান্ত রোগীর মাথা এবং শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে দিনে বেশ কয়েকবার মুছে দিতে হবে। এতে করে রোগী কিছুটা হলেও ভালো অনুভব করবে। রোগীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিছন্নতার ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।

একইসঙ্গে, আক্রান্ত রোগীকে বাসি, পচা বা ফ্রিজের খাবার এবং পানি ও উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার দেয়া উচিত নয়।
 
আর, টাইফয়েড থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে রাস্তায় তৈরি যেকোনো খাবার যেমন- চটপটি, ফুসকা, শরবত পরিহার করতে হবে। সচেতন থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।
    
এফসি