• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০১৯, ০৯:০৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৯:০৭ পিএম

ডায়াবেটিস রোগীরা দৈনিক কোন খাবার কতটুকু খাবেন

ডায়াবেটিস রোগীরা দৈনিক কোন খাবার কতটুকু খাবেন

সুস্থ থাকার জন্য একজন ডায়াবেটিস রোগীকে প্রতিদিন সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অর্থাৎ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শর্করা, আমিষ এবং চর্বি জাতীয় খাবার সঠিক এবং সুষম পরিমাণে রাখতে হবে।

একজন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খাদ্যতালিকায় শর্করা, আমিষ এবং চর্বি জাতীয় খাবার সঠিক পরিমাণে রাখতে হলে অবশ্যই নিচের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করতে হবে। যেহেতু, প্রতিটি ডায়াবেটিস রোগী একজন স্বতন্ত্র মানুষ, তাই তাদের খাদ্য চাহিদা এবং খাদ্য তালিকাটিও স্বতন্ত্র হতে হবে।

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার

একজন ডায়াবেটিস রোগীর দৈনিক মোট ক্যালরি চাহিদার ৫০-৬৫% আসবে শর্করা জাতীয় খাবার থেকে। অর্থাৎ ভাত, রুটি, মুড়ি, চিড়া, খই, নুডুলস, পাস্তা, মিষ্টি, আলু, পরিজ, কর্নফ্লেক্স থেকে। তবে কার ক্যালরি চাহিদা কত হবে তা মূলত নির্ভর করবে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা, কাজের ধরণ, লিঙ্গ, বয়স এবং অন্যান্য আর কী শারীরিক জটিলতা আছে এসবের উপর।

ফাইবার বা খাদ্যআঁশ জাতীয় খাবার     

ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের বেশি পরিমাণে ফাইবার বা আঁশসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

একজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের ফাইবার বা খাদ্যআঁশের চাহিদা যতটুকু, একজন ডায়াবেটিস রোগীর ফাইবার চাহিদাও ঠিক ততটুকু। 

একজন ডায়াবেটিস রোগীকে প্রতিদিন ২০-৩৫ গ্রাম আঁশসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। যার মধ্যে ১০-২৫ গ্রাম দ্রবণীয় আঁশ (ওটমিল, মটর, শিম, ডাল, বার্লি, আলু, কমলা, গাজর ও সাইট্রাস ফল) থেকে গ্রহণ করতে হবে। 

বাকিটা আসবে অদ্রবণীয় আঁশ (বিভিন্ন ফলের খোসা, গমের রুটি, বাদামি ভাত জাতীয় খাবার) অর্থাৎ যেগুলো পানিতে মেশে না, প্রায় অবিকৃত হয়ে পাচনতন্ত্র পার হয়।

প্রোটিন জাতীয় খাবার 

একজন ডায়াবেটিস রোগীর দৈনিক মোট ক্যালরি চাহিদার ১০-২০% আসবে প্রোটিন (মাছ , মাংস, ডিম, দুধ, ডাল) থেকে। অর্থাৎ প্রতি কেজি বডিওয়েট-এর জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, বিশেষ অপুষ্টি না থাকলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

ফ্যাটজাতীয় খাবার

একজন ডায়াবেটিস রোগীর দৈনিক মোট ক্যালরি চাহিদার ২০-৩৫ % আসবে ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার থেকে। এর মধ্যে-

১. সম্পৃক্ত চর্বি  অর্থাৎ (রেড মিট, মাখন, পনির, মার্জারিন, হাইড্রোজেনেটেড চর্বি, ঘি, দুধ, ক্রিম) থেকে আসবে < ১০%।

২. পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (কুসুম তেল, সূর্যমুখীর তেল, ভুট্টার তেল) থেকে আসবে <১০%।

৩. মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (অলিভ অয়েল, ক্যানলা অয়েল, সরিষার তেল, রাইসরিষার তেল, বাদাম তেল, তিলের তেল) থেকে আসবে > ১০%।

৪. কোলেস্টেরল (লাল মাংস, ডিমের কুসুম, ঘি, পনির, মাখন, ক্রিম, অর্গান মিট) থেকে আসবে < ৩০০ মিলিগ্রাম/দিন।

৫. ট্রান্স ফ্যাট : বিস্কিট, কুকিজ, কেক, সুইট মিট, রেডি টু ইট সিরিয়ালস <১%।

সুতরাং, বুঝতেই পারছেন শুধুমাত্র তেল, মাখন বা ঘি থেকেই আমরা ফ্যাট পাই না, অন্যান্য অনেক খাবার থেকেই আমরা ফ্যাট পাই। যদি সেসব বিষয় আমাদের জানা না থাকে তবে প্রতিদিন, চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ ফ্যাট গ্রহণ করার সম্ভাবনা থাকে। আর অতিরিক্ত ফ্যাট গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ, ওবিসিটি, উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্য দায়ী।  
 
দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ

‘আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের’ মতে, একজন ডায়াবেটিস রোগীর দৈনিক সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ ২৩০০ মিলিগ্রামের মধ্যে সীমিত রাখা উচিত। তবে লবণ গ্রহণের পরিমাণ যদি ১০০০-১৩০০ মিলিগ্রামের কম হয় তবে তা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্য আরও ভালো। সুতরাং, যাদের প্লেটে কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস আছে আপনার ভালোর জন্য বাদ দিন এই অভ্যাস।

ডায়াবেটিস রোগটি একেবারে সারাজীবনের একটি রোগ। তাই এই রোগে সুস্থ থাকতে হলে সচেতনতা প্রয়োজন। আপনি কী খাচ্ছেন বা কতটুকু খাচ্ছেন এই ব্যাপারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, সুস্থ থাকতে সঠিক পরিমাণে সুষম এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন।

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড

এফসি