• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০১৯, ০৭:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৯:০৪ পিএম

পহেলা বৈশাখের খাওয়া-দাওয়া এবং সাবধানতা 

পহেলা বৈশাখের খাওয়া-দাওয়া এবং সাবধানতা 

আর মাত্র কয়েকদিন পর পহেলা বৈশাখ। আর বৈশাখ মানেই অন্যরকম আনন্দ। নানা আয়োজনে বাঙালি এই দিনটিকে বরণ করে নেয়। নানারকম আচার অনুষ্ঠান ঢাক-ঢোল আর বাদ্য বাজিয়ে বছরের প্রথম দিনটিকে স্বাগত জানায় বাঙালি। সেই সাথে নানা পদের লোভনীয় খাবারের আয়োজন দিনটিকে করে তোলে একবারে অন্যরকম। সব কিছুতেই শতভাগ বাঙালিয়ানা। মাটির সানকিতে পান্তা ভাত, ইলিশভাঁজা, কয়েক পদের ভর্তা, কাঁচা মরিচ আর কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে মূলত শুরু হয় দিনটি। চিড়া, মুড়ি, খই আর নানা রকম মিষ্টি তো থাকেই। তবে আনন্দের আতিশয্যে বুঝে না বুঝে খেয়ে যাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং উৎসবের পরের দিনগুলো যাতে বিরহে না কাটে তাদের জন্য আজকের প্রতিবেদন।

পরামর্শ দিয়েছেন  আছিয়া পারভীন আলী শম্পা

 

পান্তা খাবার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত 

● যেহেতু বছরের অন্যান্য দিনের খাদ্যভাস থেকে কিছুটা ভিন্নতা দিয়ে শুরু হয় বছরের প্রথম দিনটি তাই একটু বাড়তি সাবধানতা দরকার। বাঙালি উৎসবের প্রথম দিনের প্রধান আকর্ষণ থাকে পান্তা ভাতের সাথে নানাপদ। পান্তা ভাত সহজ পাচ্য হলেও যাদের আইবিএস আছে তাদের জন্য রাতের ঠাণ্ডা ভাতকে পান্তা করে খেলে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সকালে গরম ভাতকে ঠাণ্ডা করে পান্তা করে খাওয়া যেতে পারে। তবে গরম ভাতের পান্তার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ঠাণ্ডা ভাতের পান্তার চেয়ে বেশি তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা ঠাণ্ডা ভাতের পান্তা খেতে পারেন। পান্তা ভাত এমনিতেই অনেক খানি খাওয়া যায় তাই পরিমাণটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। না হলে উৎসবের দিনে সুগার বেড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এছাড়া যাদের ওজন বেশি তারাও পান্তা ভাত খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণটা খেয়াল রাখবেন।

● শর্করা জাতীয় খাবার যেমন- মুড়ি, চিড়া, খই-এই খাবারগুলো ও পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

আপনি সুস্থ বা অসুস্থ যেমন অবস্থায় থাকেন না কেন, খাবার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যার যার প্রয়োজন মতো খাবার খেতে হবে।

ভর্তা খাবার ক্ষেত্রে সাবধানতা 
  
● যাদের গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা আছে তারা শুকনো মরিচ না খেলেই ভাল করবেন। পাশাপাশি শুকনো মরিচ দিয়ে বিভন্ন রকম ভর্তা খেলে সারাদিন অস্বস্তিতে কাটতে পারে। ডাল, আলু, মাছ ভর্তা বা যে ভর্তাই খান না কেনো পরিমাণে কম খাবেন এবং যাদের হজমের সমস্যা আছে তারা ভর্তা বানাতে কাঁচা মরিচ ব্যবহার করতে পারেন।

● যাদের ডায়াবটিস আছে তারা আলু ভর্তা না খেয়ে ডাল ভর্তা খেতে পারেন। না হলে শর্করা গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তবে আলু ভর্তা যদি খেতেই হয় তবে ভাতের পরিমাণ কমিয়ে নেবেন।

● যাদের ইউরিক এসিডের সমস্যা রয়েছে বা ক্রিয়েটিনিন বেশি তারা ডাল ভর্তা, বরবটি বা শিম ভর্তা এবং মাছ ভর্তা পরিহার করবেন।

মিষ্টি খাবার ক্ষেত্রে সাবধানতা 

● বৈশাখের দিন রাস্তা-ঘাটে সব জায়গাতে নানা রকম মিষ্টি বাতাসা, রসগোল্লা, লাড্ডু পাওয়া যায়। আর মিষ্টি দেখে লোভ সামলানো বেশ কঠিন। তাছাড়া বাঙালি আপ্যায়ন মিষ্টি ছাড়া একেবারেই অসম্পূর্ণ। শেষ পাতে মিষ্টি না হলে কি চলে?
যারা সুস্থ আছেন এবং যাদের ওজন কম তারা ইচ্ছেমত নানারকম মিষ্টি খেতে পারলেও যাদের ওজন বেশি, ডায়াবেটিস আছে এবং যারা ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যাতে ভুগছেন, তাদের অবশ্যই মিষ্টি খাওয়া বাদ দিতে হবে।

● অনেকেই ভাবেন যাক কেবল আজকেই তো খাব তবে, কেবল একটি দিনের অনিয়ম পরবর্তী কয়দিন বা কয়েক সপ্তাহ আপনাকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে হলে উৎসবের দিনগুলোতে ও আমাদের সংযত থাকতে হবে। যাতে পরের উৎসবগুলো ও সুন্দরভাবে কাটানো যায়। তবে মিষ্টি যদি সুগার ফ্রি হয় তবে পরিমিত পরিমাণে খেতে পারেন। 

গরম থেকে বাঁচতে যা করবেন

● বছরের প্রথম দিনটি উদযাপন করতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বের হওয়া বৈশাখ উদযাপনের অংশ। তবে এ সময় সূর্যের প্রচণ্ড তাপ থাকায় গরমে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তারা রোদে বের হলে মাথা ব্যথাতে কষ্ট পাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই বাইরে বের হবার আগে ঘর থেকে ১ গ্লাস চিনি ছাড়া আঙুর, তরমুজ বা মাল্টার জুস খেয়ে বের হবেন।

● গরমে ঘামের সাথে ইলেক্ট্রোলাইটস বের হয়ে যায় তাই এই দিনটিতে বাইরে বের হলে পানির পাশাপাশি ডাবের পানি খাবেন তাহলে শরীর শীতল থাকার পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইটস ইম্ব্যালেন্সও দূর হবে। এছাড়া রোদ থেকে বাঁচতে অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হবেন তাহলে শুধু রোদ না বৃষ্টি থেকেও বেঁচে যাবেন।

● বাইরে থেকে ঘরে ফিরে চায়ের বদলে এদিনটিতে আরও এক গ্লাস চিনি ছাড়া ফলের জুস খাবেন তাহলে ক্লান্তি দূর হবার পাশাপাশি অনেক ফ্রেশ লাগবে।     

ছবি : সংগৃহীত

লেখক :  পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড

এসএমএম