বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের মধ্যে যৌথ নেতৃত্ব গড়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় দলের যৌথ নেতৃত্বে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে আমরা যৌথ নেতৃত্ব গড়ে তুলেছি। সেই যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা আজকে জনগণের কাছে যেতে পেরেছি।

সোমবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এবং বর্তমান ছাত্রদল নেতারা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল বলেন, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই তিনি মুক্ত হবেন, দেশের মানুষ ও গণতন্ত্র মুক্ত হবে।

তিনি বলেন, একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, চক্রান্তর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রবিহীন করা হচ্ছে। সেজন্য গণতন্ত্রের জন্য যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের রাজনীতি দূরে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে, চক্রান্ত করা হচ্ছে। সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারকে কেড়ে নিয়ে, রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়ে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আজকের সংকটটা কোথায়? সংকট হচ্ছে, একটি সুপরিকল্পিত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রবিহীন করা হচ্ছে। সেই জন্যেই গণতন্ত্রের যারা নেতা, গণতন্ত্রের যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন; গণতন্ত্রকে যারা অতীতে প্রতিষ্ঠা করেছেন, বাংলাদেশে তাদেরকে আজকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিচারবিভাগ, প্রশাসন থেকে শুরু করে মিডিয়া পর্যন্ত তারা রেহাই দিচ্ছে না। আমরা যারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করি, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নেত্রীকে মুক্ত করবার জন্য দেশে গণতন্ত্রকে ফিরে আনার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে হবে। লড়াই করতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে আমরা যৌথ নেতৃত্ব গড়ে তুলেছি। সেই যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা আজকে জনগণের কাছে যেতে পেরেছি।

তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে আজকে আমাদের গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং আমাদের নেতাকর্মী যারা মিথ্যা মামলায় আটক হয়ে আছে তাদেরকে মুক্ত করতে হবে।

এ সময় দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন, গণআন্দোলন সৃষ্টি করি। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা নেত্রীকে মুক্ত করব দেশকে মুক্ত করবো গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো।

শ্রীলংকার ভয়াবহ হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এটাকে সবসময় নিন্দা জানিয়েছি। গতকালও নিন্দা জানিয়েছি। যারা হতাহত হয়েছে তাদের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করছি এবং আমাদের যারা আহত হয়েছেন তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। এই ধরনের হত্যাকাণ্ড টেররিস্ট এক্টিভিটিস কে নিন্দা করি।

সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আজ আমার মন বারবার শুধু এ কথাটিই বলছে, দেশনেত্রী আর বেশি দিন জেলে থাকবেন না। তাকে আর বেশি দিন কারাগারে আটকে রাখতে পারবে না সরকার। আজ ছাত্ররা জেগেছে, জনগণ জেগেছে এবার বেগম খালেদা  জিয়ার মুক্তি হবেই হবে।

এ সময় ছাত্রদল নেতাদের উদ্দেশে দুদু বলেন, যাই করি না কেন যা কিছুই হোক না কেন নেত্রীকে (খালেদা জিয়া) বের করে আনতে নেতাকে (তারেক রহমান) ফিরিয়ে আনতে আপনাদেরকে কাজ করতে হবে। সে কাজ করার উপযুক্ত ক্ষেত্র এখন তৈরি হয়েছে। সেই কাজের অগ্রভাগে আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

জবি শিক্ষার্থীদের প্রতি আস্থার কথা জানিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আজ আমি নিশ্চিত, আমার মন বলছে খালেদা জিয়া আর বেশি দিন জেলে থাকবেন না। কারণ আজ জগন্নাথের ছেলেরা জেগে উঠেছে। এর আগেও জগন্নাথের ছেলেরা যখনই জেগে উঠেছে তখনই বাংলাদেশে অন্যায় নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিছু না কিছু ঘটেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিপ্লবীদের একটি বড় অংশ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক খালেক হাওলাদারের সভাপতিত্বে এ প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন,  যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।

টিএস/একেএস