• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০১৯, ০৯:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২২, ২০১৯, ০৩:১৩ এএম

‘নিয়মিত ও মৌসুমী আমলকারীর প্রাপ্তি নিশ্চয় এক হবে না’

‘নিয়মিত ও মৌসুমী আমলকারীর প্রাপ্তি নিশ্চয় এক হবে না’
-প্রতীকী ছবি

পবিত্র শবে বরাত আজ। মুসলমানদের জন্য মহিমান্বিত ও বরকতময় রাত। এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকেন। অনেকে রোজা রাখেন, দান-খয়রাত করেন। অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন।

তবে আমলকারীদের সবার প্রাপ্তি এক হবে বলে মনে করেন না অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের এই শিক্ষক মনে করেন, সারা বছর যারা আমল-ইবাদত করে আল্লাহর কাছে পাপ থেকে মুক্তির ফরিয়াদ জানান এবং যারা বিশেষ বিশেষ দিনে (যেমন আজ) এই ফরিয়াদ জানাবেন, তাদের সবার প্রাপ্তি নিশ্চয়ই এক হবে না।

জানতে চাইলে দৈনিক জাগরণকে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একজন ভিক্ষুক যদি প্রতিদিনই কারও কাছে ভিক্ষা চান একদিন না একদিন তিনি ভিক্ষা পান। কিন্ত হঠাৎ একদিন ভিক্ষা চাওয়া ভিক্ষুক ভিক্ষা পেতে পারেন, আবার নাও পেতে পারেন। তেমনি সারা বছরের আমলকারী আর মৌসুমি আমলকারীর মধ্যেও তেমন পার্থক্য থাকতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হায়াত-মউত যার যার কর্মফল। 

ওয়াজ মাহফিলে বিষয়গুলো সেভাবে তুলে ধরা হয় কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ফজলুর রহমান বলেন, তারাতো তা তুলে ধরেন না।

হাল আমলের ওয়াজ মাহফিলকারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা ওয়াজ মাহফিল করে ২০ হাজার, ৩০ হাজার বা ৫০ হাজার টাকা নেন, এই টাকার কমে তারা ওয়াজ করতে যান না। মাহফিলে বিশেষ আড়ম্বরপূর্ণ তাদের যাতায়াত। তিনি বলেন, অথচ নবীজী হযরত মুহম্মদ (সঃ) উটের পিঠ থেকে নেমে মুসল্লিদের কাছে পায়ে হেঁটে যেতেন। মানুষের সঙ্গে মুসাফা (হাত মেলানো) করতেন। এখনকার মাহফিলকারীরা তো রাস্তার পাশে মুসল্লিদের এড়িয়ে গাড়িতে ছোটেন, হেলিকপ্টারে ওড়েন।

তিনি বলেন, কিন্তু এই টাকা কোত্থেকে আসে, তা ভাবতে হবে। মানুষ মনক্ষুণ্ণ হয়ে দিলে তো হবে না। তিনি আরও বলেন, এতকিছু লাগে না। পীর লাগে না। মনে মনে আল্লাহ-রাসুলের নাম নিলেই হয়। তাদের পথ অনুসারে চললেই হয়। এতো টাকা খরচ করে মাহফিলকারী বা পীরের পেছনে ঘোরার দরকার নেই।

উল্লেখ্য, রোববার রাতে শবে বরাত পালন করছেন মুসল্লিরা। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ রাতটি মুসলিম উম্মাহ সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে। এই মর্যাদাপূর্ণ রাতে মহান আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য তার অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেয়।

ইবাদত-বন্দেগীর পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ হরেক রকমের উপাদেয় খাবার তৈরি করা হবে। এসব খাবার বিতরণ করা হবে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে। অনেকে রাতভর ইবাদত করে ভোরে কবরস্থানে যাবেন। চিরনিদ্রায় শায়িত আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করবেন।

পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য, দেশ-জাতির কল্যাণ ও বিশ্বশান্তি কামনা করেছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, মানবজাতিকে আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ ও ক্ষমা লাভের অপার সুযোগ এনে দেয় পবিত্র এই রজনী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, সব ধরনের কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করি।

এছাড়া বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, বিকল্পধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও শবে বরাত উপলক্ষে মোবারকবাদ জানানো হয়েছে। 

 ইসলামিক ফাউন্ডেশন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আজ বাদ মাগরিব থেকে রাতব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ফজরের পর আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান।

এমএ/একেএস