• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৪, ২০২১, ০১:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৪, ২০২১, ০১:৫৮ পিএম

আমদানি বাড়ছে

আমদানি বাড়ছে

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক আমদানিতে যে ‘খরা’ নেমে এসেছিল, তা কাটতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার আমদানির যে সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গেলে বছরের নভেম্বরে ৪৮১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত মার্চে দেশে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি। এমনকি গত ১০ মাসের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি।

২০২০ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৫৩৩ কোটি ৪১ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। পরের দুই মাস ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আমদানি হয় যথাক্রমে ৪৭২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার ও ৪২৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের পণ্য।

এরপরেই শুরু হয় করোনাভাইরাসের ধাক্কা। সেই ধাক্কায় এপ্রিলে আমদানি খাতে ব্যয় ২৮৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে কম আমদানি খরচ।

পরের দুই মাস মে ও জুন মাসে যথাক্রমে ৩৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ও ৪৮০ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৪২২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয়। আগস্টে আমদানি হয় ৩৮০ কোটি ৬০  লাখ ডলারের পণ্য।

সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আমদানি খাতে ব্যয় হয় যথাক্রমে ৪৬৫ কোটি ২৫ লাখ ও ৪৩৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের পণ্য।

সর্বশেষ নভেম্বর মাসে তা বেড়ে ৪৮১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে আমদানি হয়েছিল ৪৩৯ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে ২০১৯ সালের নভেম্বরের চেয়ে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি হয়েছে।

আর অর্থবছরের পাঁচ মাসের হিসাবে অর্থাৎ গত বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ২ হাজার ১৮৮ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ কম।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমদানি ব্যয় কমেছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর পুরো অর্থবছরে (জুলাই-জুন) কমেছিল ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

আমদানি বাড়তে শুরু করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর। তিনি জানান, আমদানি বাড়ায় স্বস্তি ফিরে আসছে। এর ফলে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। গতি ফিরবে অর্থনীতিতে।

আমদানি বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আহসান মনসুর বলেন, “টিকা আসার খবরে সবাই এখন নড়েচড়ে বসেছে। যে উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারী এত দিন বসে ছিলেন; পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল, তারা সবাই আবার পরিকল্পনা সাজিয়ে আমদানি শুরু করে দিয়েছেন। সে কারণেই আমদানিতে গতি এসেছে।”

এদিকে আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়নও (রিজার্ভ) খানিকটা কমেছে। গত ৩০ ডিসেম্বর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল।

৭ জানুয়ারি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) নভেম্বর-ডিসেম্বর মেয়াদের ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

বুধবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৫৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৮-১৯) চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয় চীন থেকে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে ১ হাজার ৩৬৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল ওই অর্থবছরের মোট আমদানির ২৬ দশমিক ১ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরের আমদানির মোট তথ্য পাওয়া গেলেও দেশভিত্তিক আমদানির তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের মধ্যাঞ্চলীয় উহান শহরে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এরপর তা বিভিন্ন দেশে ছড়াতে শুরু করলে প্রায় সব দেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।

মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। ওই সময় বাংলাদেশে পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়।