• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৫, ২০২১, ০৩:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৫, ২০২১, ০৩:৩০ পিএম

ভিক্ষুকদের ‘অবলম্বন’

ভিক্ষুকদের ‘অবলম্বন’

“সত্যি কথা বলতে আমার লজ্জা নেই, এক সময় চুরি করছি, পুলিশের বাড়ি খাইছি, জেল খাটছি, মানষের লাথি-গুতা খাইছি, সব শেষ হওয়ার পর দীর্ঘদিন ভিক্ষা করছি, মানুষ চরম অসম্মান করছে, দুর দুর করে তাড়াই দেছে। এখন ডিসি স্যার আমাগে একটা কারখানা করে দেছে। আমরা এই কারখানায় মাসিক বেতনে চাকরি করছি। এখন আর কেউ আমাগে খারাপ চোখে দ্যাহেনা, ডিসি স্যারের “অবলম্বন” কারখানায় কাজ করি পরিচয় দিলি মানুষ আমাগে সম্মান করে।” এমনটি বললেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের চৌরখুলী গ্রামে গড়ে ওঠা প্যাকেজিং কারখানা “অবলম্বন” এর শ্রমিক অলী আকবর মোল্লা।

জেলা প্রশাসকের প্যাকেজিং কারখানা অবলম্বনে চাকরি করা শুধু আলী আকবর মোল্লাই নয় একে একে তাদের ফেলে আসা জীবনের গল্প শুনালেন হিরু মোল্লা (৭৫), লুৎফা বেগম (৬২), নিহারুন বেগম (৬০), মোতাহার মোল্লা (৭০), অন্ধ জহর আলী মিয়া (৮০), আনোয়ারা বেগম (৬৫), সরলা বেগমসহ (৬৮) ৪৩ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তাদের সকলের বাড়ি একই গ্রামে। তারা নিজেদের সংসার চালাতে, ছেলে-মেয়ের জীবন বাঁচাতে ভিক্ষাবৃতিসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করেছেন। কোনোদিন তারা একটু ভালোবাসা বা সম্মান পাননি কখনো। মানুষের চরম ঘৃণা ও অবহেলার পাত্র হয়ে বেঁচেছেন এতদিন।

কোটালীপাড়া উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ও ভিক্ষুকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার দিক-নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগে চৌরখুলী গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে প্যাকেজিং কারখানা ‘অবলম্বন’। সেখানে অমিত হাসান নামের একজন উদ্যোক্তা, লাবনী মণ্ডল নামের একজন প্রশিক্ষক ও ১০ জন সেলসম্যান নিয়োগ দিয়ে উপজেলার ৪৩ ভিক্ষুককে হাতে-কলমে কাজ শিখিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কাগজের প্যাকেট। বাজারজাত করা হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের ফলের দোকান, মুদি দোকান ও ফেরিওয়ালাদের কাছে। বিনিময়ে অবলম্বনের শাপলা, জবা, সূর্যমূখী, গোলাপ ও জুঁই গ্রুপের কর্মীরা মাসিক বেতন তিন হাজার টাকা করে পাচ্ছেন এবং লভ্যাংশের ২০ ভাগ পাবেন এসব কর্মীরা।

ভিক্ষুকদের ভিক্ষাবৃতি বাদ দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা ও একটি সম্মানের জায়গায় অবস্থান করে দেওয়ায় অবলম্বন প্যাকেজিং কারখানাটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকার সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। শুধু কোটালীপাড়াই নয় জেলা প্রশাসন গোপালগঞ্জের বাকি চারটি উপজেলায়ও প্যাকেজিং কারখানা তৈরি করে জেলার ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জেলা ভিক্ষুকমুক্ত করবেন এমনটি প্রত্যাশা জেলাবাসীর।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেছেন, “পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। মানুষ এখন উন্নত জীবন চায়, উন্নত পরিবেশে বসবাস করতে চায়, সেখানে ভিক্ষুক থাকবে কেন? অসম্মানের জীবন কেন মানুষ বেছে নিবে? তাই গোপালগঞ্জে কোনো ভিক্ষুক থাকবে না। আর তাই ভিক্ষুকদের পূনর্বাসন করতে আমরা কোটালীপাড়ায় ভিক্ষুক পূনর্বাসন প্রকল্প ‘অবলম্বন’ নামে একটি প্যাকেজিং কারখানা চালু করেছি। সেখানে ওই উপজেলার ৪৩ জন ভিক্ষুক ভিক্ষাবৃতি ছেড়ে দিয়ে এখন প্যাকেট তৈরির কাজ করছেন। অভিশাপের জীবন থেকে সাধারণ জীবনে ফিরে এসেছে। গর্বের সঙ্গে তারা এবং তাদের ছেলেমেয়েরা মানুষের কাছে পরিচয় তুলে ধরতে পারছেন।”

অচিরেই আমরা জেলার বাকি চারটি উপজেলায়ও ভিক্ষুক পূনর্বাসন প্রকল্প তৈরি করে সকল ভিক্ষুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে গোপালগঞ্জ জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত জেলা ঘোষণা করবো বলে তিনি উল্লেখ করেন।