• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১২, ২০১৯, ১০:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১২, ২০১৯, ১০:০৭ পিএম

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দিন দিন বাড়ছে : সুলতানা কামাল

দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দিন দিন বাড়ছে : সুলতানা কামাল
সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল-ফাইল ছবি

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দিন দিন বাড়ছে। একটি রাষ্ট্রে সমান অধিকার, সমান মানবিক মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। কিন্তু কল্পনা চাকমা অপহরণের মাধ্যমে দেশে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে আমরা তার মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি।

বুধবার (১২ জুন) বিকালে কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সুলতানা কামাল বলেন, কল্পনা চাকমাকে উধাও করে দেয়ার মাধ্যমে আমরা একটি পুরো জনগোষ্ঠীকে উধাও করছি এ দেশ থেকে। সে সব জনগোষ্ঠীর মনোবল সাহস ও সংগ্রামী চেতনাকে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। দেশে ন্যায়-বিচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয় বলে সুলতানা কামাল মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, কল্পনা চাকমা আমাদের নারী আন্দোলনের অন্যতম প্রতীক হয়ে রয়েছে। এ দেশ অনুন্নত ধাপ পেরিয়ে উন্নয়নশীল ধাপে রূপান্তরিত হচ্ছে কিন্তু আমরা আজও সভ্য হয়ে উঠতে পারিনি।

ধানমণ্ডির ২৭/এ অবস্থিত উইমেন্স’স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউভিএ) মিলনায়তনে ‘কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৩ বছর : ন্যায় বিচারের দাবিতে ও মামলার বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য লুৎফুননেছা খান এমপি, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবীর, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখি দাশ পুরকায়স্থ, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, লেখক ও সাংবাদিক বিপ্লব রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সহ সাধারণ সম্পাদক জুয়েল হাউই বক্তব্য রাখেন।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনিরা ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সঞ্চালনা ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুণী ত্রিপুরা।

লুৎফুননেছা খান বলেন, কল্পনা চাকমা একজন প্রতিবাদী সংগ্রামী ছিলেন। তিনি শুধু নারীদের জন্য সংগ্রাম করেন নি তিনি নারী-পুরুষ সবার জন্য সংগ্রাম করেছেন। নারীরা ভাষাগত, লিঙ্গগত পার্থক্যের কারণে তারা আরও বেশি অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। তিনি ১৯৯৭ সালের সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি করেন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আদিবাসীদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

খুশী কবির বলেন, বাংলাদেশ ধর্ম-নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও রাষ্ট্রে অমুসলমানদের জায়গা খুবই নিচু পর্যায়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী উপজাতি ক্রমাগত সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে। অপহরণের সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

রাখী দাশ পুরকায়স্থ বলেন, কল্পনা চাকমা পাহাড়ি জাতির সংগ্রামের প্রতীক।

সঞ্জীব দ্রং বলেন, ২৩ বছর পেরিয়ে গেলো তদন্ত প্রকাশ করতে না পারা ও প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় না আনা রাষ্ট্রের জন্য চরম লজ্জার। 

দীপায়ন খীসা বলেন, সরকার উপজাতিদের সাথে প্রতারণা করেছে। কল্পনা চাকমা অপহরণের সাথে জড়িত এবং মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা গ্রেফতার হননি।

বিপ্লব রহমান বলেন, কল্পনা চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম একে অপরের প্রতিশব্দ। পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনও ঘটনার প্রতিবাদ করলে গুম ও হত্যার শিকার হতে হয়।

চঞ্চনা চাকমা বলেন, সমতল ও পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কণ্ঠরুদ্ধ করে কাউকে আধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না বলে তিনি মনে করেন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অধিকার কর্মী, সাংবাদিক, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

টিএস/এসএমএম