• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০১৯, ০৮:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৭, ২০১৯, ০৮:২৩ পিএম

ডিএনসিসির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ডা. মাহমুদা আলীকে অব্যাহতি

ডিএনসিসির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ডা. মাহমুদা আলীকে অব্যাহতি

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও প্রোগ্রাম অফিসার ডা. মাহমুদা আলীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রকল্পের ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডা. মাহমুদা আলী দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে অডিটে উল্লেখ করা হয়েছে। অডিট আপত্তির ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি। সঠিক তদন্ত হলে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি’ প্রকল্প কার্যক্রমের আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিট হিসেবে ডিএনসিসি অন্তভুক্ত রয়েছে। আর এই প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডিএনসিসির একজন সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব ও প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হাকিম মজুমদার, এনডিসির স্বাক্ষরিত ২০১৮ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে এ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, এই প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে ডিএনসিসির সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা আলী ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে শুধুমাত্র ২০১৬-১৭ অর্থবছরের (অডিটে) নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) বিপরীতে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৪ টাকার আপত্তি রয়েছে।

অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী অনিয়মিতভাবে ব্যয়িত অর্থের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ১ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ডিএনসিসিকে পত্র দেয়া হয়।
 
প্রকল্প পরিচালকের ওই চিঠিতে বলা, বিশেষ কারণ ছাড়া সরকারি চাকরির বিধিমালায় একজন কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে ৩ বছর থাকার কথা। কিন্তু ডা. মাহমুদা আলী টানা ৫ বছর ধরে এই প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মরত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই চিঠি ইস্যু করা হবে। 

ডিএনসিসির সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে বর্তমান এই প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার ডা. মাহমুদা আলীর পরিবর্তে অন্য একজন দক্ষ সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়।

সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের চিঠির আলোকে ডা. মাহমুদার বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এখনো ২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৪ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি। তবে গত জুন মাসে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পের প্রোগাম অফিসারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

ডা. মাহমুদার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ, ডিএনসিসির মিরপুর অঞ্চল-২ এর স্বাস্থ্য বিভাগটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন। তার নিয়ন্ত্রিত লোকজনের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন শাখাটি পরিচালিত হচ্ছে।

সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি শিশুদের জন্য ২৫ টাকা এবং বড়দের জন্য ৫০ টাকা। এর বদলে একেকটা জন্ম নিবন্ধনে জনগণের কাছ থেকে ৫০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএনসিসির একজন কর্মচারী জানান, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ২০০৬ সালে সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পদে যোগদানের পর থেকে অল্প সময়ে তিনি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার বিরুদ্ধে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সনদে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ চাকরির শুরু থেকেই রয়েছে। তিনি অফিসে হাজিরা দিয়েই সার্বক্ষণিক ডিএনসিসির নগর ভবনে স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে নানা তদবিরে ব্যস্ত থাকেন। অফিসের ওয়াজেদ এবং অন্যান্য স্টাফের মাধ্যমে সব নথিপত্র বাসায় নিয়ে যান।

ডিএনসিসির নামে ইউনিসেফের দেয়া বরাদ্দকৃত প্রকল্পের অর্থও লোপাট হচ্ছে। এসব বিষয়ে মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব এবং প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কারণ ডা. মাহমুদা আলীকে কোনো প্রকল্পের দায়িত্বে রেখে তদন্ত করলে তদন্ত নিরপেক্ষ হবে না বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ কর্মচারীরা।

এ ব্যাপারে ডা. মাহমুদা আলী বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। একটি মহল তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য এসব অভিযোগ আনছেন।

আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও সরকারি অডিট আপত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে সরকারের ফান্ডে টাকা জমা দিতে হয়নি। বিল-ভাউচার মিলিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। 

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মামুনুর রহমান মামুন দৈনিক জাগরণকে বলেন, ডা, মাহামুদা আলীর বিরুদ্ধে যেহেতু অডিট আপত্তি আছে। এ কারণে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাকে আর কোনো প্রকল্পের  দায়িত্ব দেয়া হবে না। অডিট আপত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু সরকারের টাকা, এটা জমা না দিলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টিএইচ/ এফসি