• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০১৯, ১০:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২০, ২০১৯, ১০:৪৯ এএম

ঢাকা উত্তর সিটির হালচাল 

৩০ নং ওয়ার্ডের বড় সমস্যা মাদকদ্রব্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড

৩০ নং ওয়ার্ডের বড় সমস্যা মাদকদ্রব্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড -ছবি : জাগরণ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড রাজধানীর আদাবর থানার একটি অবহেলিত জনপদ। এই এলাকার প্রধান সমস্যা মাদকদ্রব্য, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এ এলাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই মারামারির ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিএনসিসির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়াও এই এলাকায় মশার উপদ্রব কম। তবে মাঝে মধ্যেই গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা হয়।

তবে মুনসুরাবাদ ১১,১২,১৩ নম্বর এবং আদাবর ১৬,১৭ নম্বরসহ বায়তুল আমান হাউজিং এর ৫ নম্বর রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে কিছু অংশ গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেখানে পানি জমে। ফলে বর্ষাকালে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়াও ঢাকা ওয়াসার পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজগুলো স্লাব লাগানোর পর সংস্কার না করায় রাস্তা চলাচলে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধান দেখতে চায় এলাকাবাসী। 

সম্প্রতি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও মাদক ব্যবসার কর্তৃত্বের বিষয় নিয়েও এলাকায় চাপা ক্ষোভ রয়েছে। আদাবর শ্যামলী হাউজিং ৬ নম্বর রোডের সি ব্লকের মাথায় মাদকদ্রব্য নিয়ে হরহামেশাই মারামারির ঘটনা ঘটছে। যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। 

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মান্নান দৈনিক জাগরণকে বলেন, এলাকার পরিবেশ ভাল। তবে মাদকদ্রব্য সেবনকারীদের কারণে ৬ নম্বর রোর্ডের মানুষ সব সময় আতঙ্কে থাকে। এ বিষয়ে আদাবর থানা পুলিশের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।

ডিএনসিসির ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডটিতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করে। এলাকার রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে মুনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ হানিফ বলেন, সামান্য বৃষ্টি আসলেই এখানকার রাস্তাঘাটে পানি ওঠে। ফলে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বে শ্যামলী রিং রোড, পশ্চিমে বুড়িগঙ্গা নদী, উত্তরে মিরপুর, দক্ষিণে-মাহাম্মাদী হাউজিং। ঘনবসতি এলাকা হলেও চলতি বর্ষা-মৗসুমে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মতো এখানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া রোগী নেই বলেই চলে। তারপরও ডেঙ্গু সচেতনতায় এই ওয়ার্ডের ১০ জন ডাক্তার নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিটি মসজিদে, লিফলেট, বিতরণ, মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত কমিটি কাজ করছে। 

৩০ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকাগুলো হচ্ছে, হোলি লেন, চৌধুরী গলি লেন, গোল্ডেন স্ট্রিট, মোহনপুর, আদর্শ ছায়ানীড়, হোসনাবাদ স্ট্রিট, উত্তর আদাবর। আদাবর, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, পিসিকালচার হাউজিং, মনসুরা হাউজিং, সুনিবিড় আবাসিক এলাকা, ঢাকা হাউজিং।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অবিভক্ত মোহাম্মদপুর থানা বিভক্ত হয়ে আদাবর, শেরে-ই বাংলা নগরসহ মোট ৩টি থানা গঠিত হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডটি পূর্বে ছিল ৪৩ নাম্বার ওয়ার্ড। আদাবর থানার অন্তর্ভুক্ত এই ওয়ার্ডটির আয়তন ৪ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে ছোট বড় সব মিলিয়ে ১ কিলোমিটার রাস্তা ভাঙা রয়েছে। যা সংস্কার করা প্রয়োজন।

এলাকার সব ধরনের চুরি ছিনতাই অপকর্ম বন্ধ হলেও মাঝেমধ্যে রিংরোড সড়কে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বলে জানান আদাবরের স্থায়ী বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক জানান। তবে তিনি বলেন, মানুষ এখন শান্তিতে দিন রাতে চলাফেরা করছে। রাস্তাঘাটের খুব একটা সমস্যা নেই। 

গত বুধবার (১৮ জুলাই) ঢাকা উত্তর সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসেম (হাসু) দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমার এলাকায় রাস্তাঘাটের কোনো সমস্যা নেই। চলতি বষা মৌসুমে সব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রবণতা রয়েছে। কিন্ত আল্লাহর রহমতে এই এলাকায় কোনো ডেঙ্গুরোগী আছে এখন পর্যন্ত এমন কোনো খবর পাইনি। এলাকায় কোন হানাহানি নেই মানুষ শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।

৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সচিব মাহাবুবর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ে ওয়াড ৩০ নম্বর ওয়ার্ড অনেক বড়। ২৯ নম্বরে ১১২ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োজিত রয়েছে, আর ৩০ নম্বরে মাত্র ৬৫ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজন কর্মী মারা গেছে। পরিচ্ছন্নকর্মী বাড়ানোর বিষয়ে মেয়র বরাবর অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। আজও তার বাস্তবায়ন ঘটেনি। 

আদাবর রিংরোডের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, কাউন্সিলর নিজের প্রশংসা করবে এটাই স্বাভাবিক। এলাকায় মশার উপদ্রব কম তা সত্য। এখানে পানি ও গ্যাস থাকে না। এ সমস্যাগুলো সমাধান করার কথা কাউন্সিলরের কিন্তু বাস্তবে করা হচ্ছে না। 
 
আদাবর ২৬৪ নম্বর বাড়ির মালিক বাবলু মিয়া দৈনিক জাগরণকে বলেন, এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আদাবর থানার বর্তমান সংসদ সদস্য সাদেক খান এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সচেতন থাকায় সব ধরনের চুরি, ছিনতাই অপকর্ম বন্ধ হয়েছে। নতুন দুই একটি ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই। 

তবে আদাবরের বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, এখানে মাদক নিয়ে প্রতিদিন মারামারির ঘটনা ঘটে। প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি আরও বলেন, সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সি ঘোষণা করেছে। অথচ এ অঞ্চলে মাদকসেবীরা মাদক নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটাচ্ছে।
 
টিএইচ/একেএস