• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০১৯, ১১:৩৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৮, ২০১৯, ১১:৩৮ এএম

রিকশা তুমি কার?

কেতাবে ৮০ হাজার ৪৭৩, বাস্তবে ১০ লাখেরও বেশি

কেতাবে ৮০ হাজার ৪৭৩, বাস্তবে ১০ লাখেরও বেশি


কত রিকশা চলছে রাজধানীতে? কেতাবে আছে ৮০ হাজার ৪৭৩টি। তবে বাস্তবে ১০ লাখেরও বেশি। প্রতিদিনই রাজধানীর সড়কে নামছে নতুন নতুন রিকশা। আসল-নকল লাইসেন্সে সয়লাব রাজধানী।

প্রকৃত পক্ষে এখন রাজধানীর সড়কে কত রিকশা চলছে, নিয়ম বহির্ভূতভাবে কে কত লাইসেন্স দিয়েছে, তার কোন সঠিক হিসেব নেই কারো কাছেই। দক্ষিণের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ৯ লাখেরও বেশি রিকশা কোথা থেকে লাইসেন্স পাচ্ছে, তা তার জানা নেই। আর উত্তরের (ডিএনসিসি) মেয়র বলেছেন, কাজের চাপে রিকশার লাইসেন্সের বিষয়টি নিয়ে এখনও তিনি বসতে পারেননি। 

রাজধানীতে বসবাসকারী মধ্যবিত্ত মানুষের প্রধান বাহন হচ্ছে রিকশা। তবে এই রিকশাই এখন শহরের সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর প্রধান অন্তরায়। রিকশা তৈরি, সড়কে নামিয়ে দেয়া, চালকের প্রশিক্ষণ’ এসবে নেই কোন নিয়মনীতি। যাদের দেখার দায়িত্ব সেই সিটি করপোরেশনই জানে না, কার দেয়া নিবন্ধন বা লাইসেন্সে রাজধানীতে চলছে অতিরিক্ত সোয়া ৯ লাখেরও বেশি রিকশা। দুই সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত রিকশার সংখ্যা মাত্র ৮০ হাজার ৪৭৩টি। আর চলছে ১০ লাখেরও বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে। কি করছেন তাদের দায়িত্বশীলরা? অবৈধ রিকশা উচ্ছেদে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না?

অনুসন্ধানে জানা যায়, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে রাজধানীতে চলাচলের জন্য ১৯৮৬ সালে  ৬০ হাজার ৪৭৩টি রিকশার নিবন্ধন বা লাইসেন্স দেয়া হয়েছিলো। এর পর ৯০ সালে ১০ হাজার এবং ৯৮ সালে ১০ হাজার রিকশার লাইসেন্স দেয়া হয়। এই নিবন্ধিত ৮০ হাজার ৪৭৩টি রিকশার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) চলে ৫২ হাজার ৭৫৩টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ২৬ হাজার ৭২০টি। 

তবে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার রাইটস (বিলস), ঢাকার ট্রাফিক বিভাগ, পুলিশ, রিকশা মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন, সিটি করপোরেশন ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে চলাচলকারী রিকশার প্রকৃত সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। সিটি করপোরেশন ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ কয়েকটি সংগঠন এসব রিকশার লাইসেন্স দিয়েছে। আর ২৫টির মত সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে অবৈধ এসব রিকশা। 

রাজধানীতে রিকশা চলাচলের অনুমোদন অর্থাৎ লাইসেন্স বা নিবন্ধন দেয়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র দুই সিটি করপোরেশনের। এই করপোরেশন থেকে রিকশার জন্য নেয়া লাইসেন্স প্রতি বছর বছর নবায়নও করতে হয়। অথচ এসবের এখন কোন বালাই নেই। রিকশার মালিক-চালক কেউই মানছেন না এসব নিয়ম-নীতি। আর এসব যাদের দেখার দায়িত্ব সেই দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও অজ্ঞাত কারণে হাত গুটিয়ে বসে আছেন।

নগর-পরিকল্পনাবিদ যা বললেন : 

রাজধানীতে অবৈধ রিকশার বিষয়ে নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘যান্ত্রিক বাহনের সঙ্গে একই রাস্তায় পায়ে চালিত রিকশা চলছে। রিকশার গতিবেগের কারণে যান্ত্রিক সব বাহনের গতিও কমে যায়। এতে গাড়ি বেশিক্ষণ রাস্তায় থাকে এবং যানজট তৈরি হয়।’

আকতার মাহমুদ বলেন, ‘গণপরিবহন চলে এমন রাস্তায় রিকশা না চলাই ভালো। অবৈধ তো নয়ই, বৈধ রিকশাও চালাতে হবে ছোট সড়ক এবং পাড়া-মহল্লায়।’

দক্ষিণের মেয়র যা বললেন : 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এ বিষয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘আমি জেনেছি দুই সিটি করপোরেশনের নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা ৮০ লাখের একটু বেশি। কিন্তু সেখানে চলছে ১০ লাখেরও বেশি। এ পরিসংখ্যানও আমার কাছে আছে। অর্থাৎ ৯ লাখেরও বেশি রিকশা চলছে রাজধানীতে। কোথা থেকে এরা লাইসেন্স পাচ্ছে, তা আমার জানা নেই। তবে শুনেছি কিছু রিকশার নাকি লাইসেন্স দিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।’ শিগগিরই অবৈধ রিকশা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করবেন বলেও জানান সাঈদ খোকন।

উত্তরের মেয়র যা বললেন :

রাজধানীতে চলা অবৈধ রিকশার বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘রাজধানীতে বৈধ রিকশার চেয়ে অবৈধ রিকশাই অনেক গুণ বেশি। এটা শুনেছি, তবে কাজের চাপে বিষয়টি আমার দেখা হয়নি।’ শিগগিরই দুই মেয়র মিলে বসে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসবেন বলে জানান আতিকুল ইসলাম।

এমএএম/আরআই 
 

আরও পড়ুন