• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০১৯, ০৫:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১১, ২০১৯, ০৫:৫১ পিএম

চলছে কোরবানির পশু জবাই ও গোশত কাটাকুটির প্রস্তুতি

চলছে কোরবানির পশু জবাই ও গোশত কাটাকুটির প্রস্তুতি
চলছে ছুরি-চাপাতি শান দেয়ার কাজ-ছবি : জাগরণ

ছুরি, চাকু, দা, বটি, চাপাতি- পশু জবাই ও গোশত কাটার কাজটি সহজ করতে এসবের কোন বিকল্প নেই। কোরবানির পশু কেনার পাশাপাশি তাই চলছে ছুরি চাকু কেনার ব্যস্ত। এখন কামারশালায় চলছে তুমুল ব্যস্ততা। দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে কামাররা।

রাজধানীর কারওরান বাজার, শাহজাহানপুর, মালিবাগ বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থায়ী কামারশালায় দেখা গেছে, দোকানিরা নাওয়া-খাওয়া ভুলে একের পর এক হাতুরি পিটিয়ে তৈরি চলছেন ছুরি, চাকু, চাপাতি। সেই সঙ্গে চলছে শান দেয়ার কাজ। কাঁধে করে এক ধরনের যন্ত্র নিয়ে পাড়া-মহল্লা ঘুরছেন শানধাররা। কথা হয় শানধার মাসুদের সাথে। তিনি জানালেন, কোরবানির ঈদে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এবারও ব্যস্ততা বেড়েছে।  

কারওরান বাজার ও শাহজাহানপুর কাঁচাবাজারে কামালশালার সবক’টি দোকান পাশাপাশি। সামনের অংশটুকু প্রায় একই রকম দেখতে। সেখানে ছুরি আর ছুরি। হঠাৎ দেখলে হাত পা কেমন ঠাণ্ডা হয়ে আসে। কোরবানির এসব উপকরণের কিছু ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে উপরের দিকে। নিচে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বটি, ছুরি, চাকু, চাপাতি আরও কত কী সরঞ্জাম। 

সবচেয়ে বড় ছুরিটির নাম ‘জবাই ছুরি’। পশু জবাই করার জন্য বিশেষ উপযোগী করে বানানো। তাই এর নাম দেয়া হয়েছে ‘জবাই ছুরি’। ১৮ থেকে ২২ ইঞ্চির মতো লম্বা এই ছুরি সামনের অংশ হাতির শূরের মতো বাঁকানো। কিছুটা উপরের দিকে ওঠে গেছে। শক্ত হাতে ধরতে হয়। তাই কাঠের হাতল। আলমগীর নামে এক দোকানি জানান, এই ছুরি বানাতে অনেক কসরত করতে হয়। ভালো মানের লোহার পাত লাগে। এ জন্য দামও বেশি। তার দেয়া তথ্য মতে এই ছুরির দাম ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

কারওয়ানবাজারের কামার রতন একই কথা জানালেন ‘চাহিদা বেশি থাকায় এর দাম একটু বেশি’। পশু জবাইয়ের পরের কাজটি চামড়া ছাড়ানো। একটু সতর্কতার সঙ্গে করা চাই। এ জন্য প্রয়োজন ছোট এক ধরনের চাকু বায় ছুরি। এই ছুরির নাম ‘ছিলা ছুরি’। এই ছিলা চাকুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ‘ছিলা ছুরি’ কিনতে ভিড় করতে দেখা গেলো দোকানগুলোতে। দাম প্রতিটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কোনটির আবার কাঠের হাতল। সে ক্ষেত্রে দাম একুট বেশি। কোনোটা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের ছুরিটির নাম ‘সাইজ ছুরি।’ এ ছুরি দিয়ে গোশত ‘সাইজ’ করা হয়। দোকানি এই ছুরিকে ‘কামেলা ছুরি’ বলা হয়। এই ছুরির দাম ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। হাঁড় কেটে ছোট করার কাজে লাগে যে ধারাল যত্ন অবশ্যই লাগে সেটি হলো ‘চাপাতি’। চাপাতি আবার ছোট বড়ো রকমের হয়ে থাকে। দোকানগুলো দেখা গেলো বিভিন্ন সাইজের চাপাটি শান বা ধার দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ পুরনো চাপাতির ‘লবন পানি খাওয়া’তে বা ধার দিতে নিয়ে এসেছেন। দোকানিরা জানালেন রেললাইনের রেল পাত কেটে ভালো মানের চাপাতি তৈরি। একেকটি চাপাতি দেড় কেজির মতো ওজন। দাম ওজনভেদে ৬০০ থেকে শুরু করে ২৫০০ টাকা। গাড়ির স্প্রিংয়ের তৈরি চাপাতি পাওয়া যাচ্ছে। দাম প্রায় কাছাকাছি। চায়নিজ কুড়ালের চাহিদাও রয়েছে। তবে দাম কিন্তু কম নয়। হাতলও কাঠের ফার্নিচারের মতো সুন্দর রং করা। আর চকচকে ধার। এগুলো খুব বেশি একটা কামারের দোকানগুলো পাওয়া যায় না। নামি-দামি শপিং মলে আমদানি করা এসব চায়নিজ কুড়ালের দাম ৯০০ থেকে ২২০০ টাকা। এক সেট পাওয়া যাচ্ছে ২৫০০ থেকে শুরু করে ৭০০০ টাকা।  

ছুরি চাপাতি-ই শেষ কথা নয়। গোশত মেঝেতে রেখে কাটার জন্য আরেকটি জরুরি উপকরণ- ‘হুগলা পাতার পাটি বা চাটাই’। কারওরান বাজার, শাহজাহানপুর রেললাইন, মালিবাগ বাজার, কমলাপুল, বাড্ডা-মেরুল ও মেরাদিয়া হাট সংলগ্ন এখন হুগলার বিশাল বাজার। থাম দিয়ে রাখা হয়েছে চাটাইগুলো। এসব চাটাই বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে শুরু করে ১৫০ টাকা করে। পাশেই ‘খাটিয়া’ বা ‘চাকতি’। কেউ কেউ ‘কুন্ডা’  বলে থাকেন। তেতুল গাছের গুঁড়ি কেটে তৈরি করা হয়েছে চাকতি। এর উপর পশুর হাঁড় রেখে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করা হয়। মেরুল-বাড্ডাসহ স’ মিল এলাকাগুলো এসব গুড়ি দেখা যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লা বিশেষ করে হাট সংলগ্ন অস্থায়ী দোকানগুলো বেশ রমরমা ব্যবসা চলছে এই কুণ্ডা বা চাকতির। দাম আকার অনুযায়ী।  

বিক্রি-বাট্টা কেমন- এই প্রশ্নে একাধিক দোকানি জানালেন, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যস্ততা বেড়েছে। সে সঙ্গে কেনাকাটাও। হাফর টানা আর টু টাং হাতুরি পেটার কাজ চলবে সকাল অবধি।

ঈদের দিন বৃষ্টি পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টি হাত থেকে বাঁচতে কোরবানিস্থলে শামিয়ানা টানিয়ে দিতে দেখা গেছে মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। 

এমএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন