• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০১৯, ০৮:২২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৩, ২০১৯, ০৮:২২ এএম

যেকোনো সময় বাঁধতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

রূপনগর বস্তি নিয়ে মুখোমুখি দুই সিন্ডিকেট

রূপনগর বস্তি নিয়ে মুখোমুখি দুই সিন্ডিকেট

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর, চলন্তিকা ও আরামবাগ বস্তির আগুনে ভস্মীভূত জায়গা নিয়ে আগের দখলদার ও নতুন করে দখল করতে চাওয়া স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে যেকোন সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন বস্তিবাসী। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বস্তি ভাড়া, অবৈধ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির আয় থেকে কোটি টাকার ধান্ধাপাতি নিয়ে মুখোমুখী অবস্থানে রয়েছে দালাল সিন্ডিকেট। ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছে পুরো তিনটি বস্তির। এতে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ঘরের জায়গা। এরমধ্যে স্থানীয় যুবলীগ নেতা সোহেল রানা সব দালালের নিয়ন্ত্রণকর্তা।

দুলাল নামে প্রশাসনের এক দালাল গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল ও ভাড়া তোলেন। এ জন্য তাকে গ্যাস দুলাল বলেই সবাই চেনে।

স্থানীয় নিঃস্ব একাধিক ভাড়াটিয়া বলেছেন, দালালদের মধ্যে রয়েছেন- সালাম মিয়া, আলমগীর হোসেন, রহিম শিকদার, সামশু মিয়া, মিনহাজুল আবেদীন, জাহাঙ্গীর আলম। মূলত এরাই এ বস্তির সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উল্লেখিত দালালদের কাছ থেকে মাসে মাসে কোটি টাকা তুলে নিত। একসঙ্গে রাজনৈতিক অফিসে বসেই ধান্ধাপাতির সব টাকা ভাগবাটোয়ারা হতো বলে জানা গেছে।

অপরদিকে রূপনগর, চলন্তিকা ও আরামবাগ বস্তির মধ্যে কয়েকজন মালিককে খুঁজে পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সালাম মিয়া, মিনু বেগম, মাজেদ মিয়া, ময়না বেগম। এরকম আরো অর্ধশত মালিক রয়েছেন। সাংবাদিক ও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন।      

জানা গেছে, ভাড়াটিয়ারা প্রতি মাসে ঘর ভাড়া বাবদ ২ হাজার ৭০০ টাকা, বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৩০০ টাকা আর গ্যাস বিল বাবদ ৫০০ টাকা করে দিতে হতো। তাদের মালিকের ২০টি ঘর ছিল। ২০ ঘর থেকেই মালিক গ্যাস বিল বাবদ ৫০০ টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা তুলতেন। ভাড়া পরে দিলেও চলত, তবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলের টাকা সবার আগে নিতেন। পানির জন্য ১০০ করে টাকা দেয়া হতো। কোনো বাসাতেই গ্যাস আর বিদ্যুতের মিটার ছিল না। তবে পানির মিটার থাকলেও বাকি সবই ছিলো অবৈধ সংযোগ। মালিকরা পানির বিল ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন বলে শুনেছি।

স্থানীয় লোকজন বলেছেন, রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর, চলন্তিকা, আরামবাগ বস্তি থেকে মালিকরা প্রতি মাসে উপার্জন করেন কয়েক কোটি টাকা। রুম কিনে তা ভাড়া দেয়া, বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ দিয়ে টাকা উপার্জন করছেন তিন বস্তির মালিকধারী প্রভাবশালীরা। তাদের সহযোগিতায় রয়েছেন অবৈধ সংযোগ দেয়ার লাইনম্যান ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা।

এদিকে, রাজধানীর রূপনগরে আগুনে পুড়ে যাওয়া বস্তির জায়গা নিয়ে আগের দখলদার এবং নতুন করে দখল করতে চাওয়া স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বিরোধে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে যেকোনো সময় সংঘর্ষে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। 

স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই বস্তির জায়গা দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। আগে যার দখলে ২০টি ঘর ছিল তাকে ১০টি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। আবার যার ১০টি ঘর ছিল তাকেও ৫টি ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। স্বেচ্ছায় ছেড়ে না দিলে দেখে নেয়া হবে বলে হুমকিও দেয়া হয়েছে। বুধবার (২১ আগস্ট) রূপনগর ঝিলপাড় বস্তির ঘর মালিক, ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জায়গার দখল নিয়ে যেকোনো সময় সংঘর্ষ হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাদের।

জানা যায়, বস্তির তিন অংশ ঝিলপাড়, আরামবাগ ও চলন্তিকা নিয়ন্ত্রণ করতেন কারেন্ট দুলাল ওরফে গ্যাস দুলাল, রহিম শিকদার ও শামসু। তারা মূলত অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুতের লাইন দিতেন এবং কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন। তবে তারা কখনো ঘর ভাড়ার টাকায় ভাগ বসাতেন না। জায়গা যাদের দখলে ছিলো তারাই ঘর ভাড়া তুলতেন। দুলাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই এলাকায় সবাই দুলালকে এক নামে চেনে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা তার। 

সিন্ডিকেটের সদস্য রহিম শিকদার নামে আরেক জন বলেন, আমি টাকা তুলে সবাইকে ভাগ করে দেই। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, গ্যাস-বিদ্যুতের অফিসের লোকসহ অনেককে এই টাকার ভাগ দিতে হয়। এখানে অবৈধ গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ চলে। তাই আমিও দিয়েছি। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, বস্তির চারদিক ঘিরে ক্ষমতাসীন  যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বেশ কয়েকটি অফিস রয়েছে। এসব অফিসও অবৈধ জায়গাতেই। স্থানীয়রা জানান, এসব অফিসের ছেলেরাই ঘর ভাড়া তুলতো। তাদের বেশির ভাগই চাঁদাবাজি, প্রভাব খাটানো ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। বস্তির জমিও মূলত তাদেরই দখলে ছিল।

এ সিন্ডিকেটের যারা এতদিন কোটি টাকা উপার্জন করে আসছিলেন, আগুন লাগার পর কেউ বস্তিবাসীর খোঁজ নিতে আসেননি। শুধু রুমের মালিকরা নয়, যারা অবৈধ বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি বিল নিচ্ছিলেন তারা আগুন লাগার পর একবারও আসেননি।

ঘরের জায়গার মালিক মিনহাজুল বলেন, তারা অনেক প্রভাবশালী। তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল। হয়তো কিছু ঘরের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এটা তো সরকারি জায়গা, কিছুই করার নেই। আবার অনেকে ছাড়তে রাজি নন। কারণ তাদের ক্ষমতা আছে। কয়েকদিন ধরে যেভাবে শুনছি, তাতে মনে হচ্ছে যেকোনো দিন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধতে পারে।

এবিষয়ে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বস্তির চারদিকে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যাতে কেউ গণ্ডগোল পাকাতে না পারে সে কারণে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। 

এইচএম/টিএফ
 

আরও পড়ুন