• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০১৯, ০৩:৩৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২৮, ২০১৯, ০৩:৪৪ পিএম

অরক্ষিত রাজধানীর ৭ ফ্লাইওভার

অরক্ষিত রাজধানীর ৭ ফ্লাইওভার

বি শে ষ   প্র তি বে দ ন

...............................................

● ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য, ঘটছে হত্যাকাণ্ডের গুরুতর ঘটনা

● মগবাজারে ফ্লাইওভারে বেশিরভাগ সময় বাতি জ্বলে না

● অন্ধকারে ওঁৎপেতে থাকে দুষ্কৃতকারীরা

● ফ্লাইওভারের নিচে মাদকসেবীদের আস্তানা

● ফ্লাইওভারগুলোতে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি

...............................

রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলোতে রাতে ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাইওভারগুলো (উড়াল সেতু) চলে যায় ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে। ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য হিসেবে বদনামের খাতায় রয়েছে রাজধানীর খিলগাঁও, মগবাজারসহ ৭ ফ্লাইওভার। এসব ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন প্রাইভেট গাড়ি, সিএনজি কিংবা মোটরসাইকেল চালকরা।

মহসিন নামে কুড়িল এলাকার বাসিন্দা জানান, রাতে ফ্লাইওভার অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। ছিনতাইকারীদের আনাগোনার পাশাপাশি বখাটে তরুণরা বেপরোয়া গতিতে যান চালিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) দিবাগত রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুর ফ্লাইওভারে যাত্রীবেশি দুষ্কৃতকারী মিলন নামের এক পাঠাও চালককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে তার মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। 

শাহাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শহিদ জানান, প্রাথমিকভাবে এটিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। এ কারণে রাজধানীর পেশাদার ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার তদন্তে ফ্লাইওভারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। 

জানা গেছে, মহাখালী, মৌচাক ও যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে বেশিরভাগ ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করেন না। গত জুলাই মাসে এমন ছিনতাইয়ে শিকার হন নিখিল ভদ্র নামের এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি রাতে মোটরসাইকেলযোগে হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে কাজলার বাসায় ফিরছিলেন। সায়েদাবাদ এলাকায় আসামাত্র ৪ ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি। 

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে খিলগাঁও ফ্লাইওভারে গিয়ে দেখা যায়, উড়াল সেতুর বিশাল দূরত্বে কোথাও কোনও পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নেই। অনেকস্থানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। জ্বলছে না কোনও বাতি। এ অবস্থাতেই খুব দ্রুত যানবাহন চলাচল করছে। রাত গভীর হলে যানবাহন চলাচল কিছুটা কমে যায়। সেই সুযোগে ওঁৎপেতে থাকা ছিনতাইকারীরা যাত্রীদের ওপর হামলা করে। মেরে-ধরে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়। 

মগবাজারে ফ্লাইওভার চালু হওয়ার কয়েক দিন পর থেকেই ল্যাম্পপোস্টগুলোতে বাতি জ্বলছে না। মূল ফ্লাইওভারে নেই কোনও সিসি ক্যামেরা। অভিযোগ রয়েছে, বৈদ্যুতিক খুঁটির গোড়া থেকে চোর-চক্র বৈদ্যুতিক তার কেটে নিয়ে যাওয়ায় রাতের অন্ধকারে ডুবে থাকে ফ্লাইওভারটি। আর ছিনতাইকারীরা এই সুযোগটি ব্যবহার করছে।  

রাজধানীতে মোট ৭টি ফ্লাইওভার চালু রয়েছে। মগবাজার ফ্লাইওভারের আগে কুড়িল ফ্লাইওভার চালু করা হয়। এরপরই একে একে মহাখালী, খিলগাঁও, বনানী ও তেজগাঁও এলাকার আরও ৪টি ফ্লাইওভার চালু হয়। যানজট নিয়ন্ত্রণে এগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি না থাকায় সেগুলো অরক্ষিত থাকে। অপরাধী ও ছিনতাইকারীদের ভয়ে রাতে ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল আরোহীরা যখন-তখন বিপদে পড়ছেন। এসব ফ্লাইওভারের নিচে মাদকসেবীদের আস্তানা হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। বেশিরভাগ ফ্লাইওভারের নিচে সকাল ও সন্ধ্যায় চলে মাদক বিক্রির রমরমা ব্যবসা। 

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, ফ্লাইওভারে ছিনতাইকারীচক্র তাদের কাজের সুবিধার জন্য রাত এবং বৈরী আবহাওয়াকে বেছে নেয়। ঝড়, বৃষ্টি কিংবা কুয়াশাচ্ছন্ন রাতের সুযোগ খোঁজে তারা। বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে ম্যানেজ করে ফ্লাইওভারের ল্যাম্পপোস্ট দীর্ঘদিন  অচল করে রাখা হয় এমটিও অভিযোগ উঠেছে। ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীরা চলন্ত গাড়ি থেকে সাইড লাইটসহ পার্টস ভেঙে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। নজরদারি কম থাকায় দুর্বৃত্তরা ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের জন্য নিরাপদ জোন হিসেবে ফ্লাইওভার বেছে নিয়েছে। গত বছর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর এক তরুণীর বস্তাবন্দি মরদেহ ফেলে পালিয়ে যায় ঘাতকরা।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ জিয়া খান বলেন, ফ্লাইওভারগুলো রাজধানীর পরিবহনসেবায় কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এলেও রাতে ফ্লাইওভারগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়ে। ঘটে যায় গুরুতর অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ফ্লাইওভারগুলোতে নিরাপত্তা বিধান করা। অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করা।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, জনবল সঙ্কটের কারণে ফ্লাইওভারে সার্বক্ষণিক পুলিশ রাখা যাচ্ছে না। তবে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বিট করে ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। লোকবল বাড়লে সেক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক পুলিশের ব্যবস্থা করা হবে।

এইচএম/একেএস

আরও পড়ুন