• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯, ০৫:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৯, ০৫:৩৭ পিএম

‘দুই বছরের মধ্যে গণপরিবহনে ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে’

‘দুই বছরের মধ্যে গণপরিবহনে ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে’
বক্তব্য রাখেন ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন-ছবি : জাগরণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, প্রতিদিন শহরে বিভিন্ন দুর্ঘটনা হচ্ছে। এসব দুর্ঘটনায় অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন। হতাহতও হচ্ছে বহু। এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। তবে এসব দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশ ঘটছে পথচারীদের অসচেতনতার কারণে।

শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের কাউন্সিল হলে ‘গণপরিবহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মেয়র বলেন, গণপরিবহনের শৃঙ্খলা আনতে এরই মধ্যে  ধানমণ্ডি-নিউমার্কেট, এয়ারপোর্ট-গুলিস্তান এবং উত্তরায় চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। তবে কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়ায় উত্তরা চক্রাকার বন্ধ রয়েছে। পুরান ঢাকায় চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দুই বছরে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে গণপরিবহন খাতে।

তিনি বলেন, গত এক দশকে নগরী যেভাবে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, সে অনুযায়ী নগরের সেবাদাতা সংস্থাগুলো প্রবৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম হয়নি। ফলে যখন পরিবহনে সমস্যা দেখা দেয়, তখন তা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। আবার যখন মশাবাহিত রোগ দেখা দেয় তখন তা নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হয়। তবে এখন সময় এসেছে সক্ষমতা বাড়ানোর এবং সমন্বয়হীনতা দূর করানোর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেবাদাতা সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে এবং সমন্বয়হীনতা দূর করতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

মেয়র প্রকৌশলীদের ইলেকট্রিক গণপরিবহনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আহবান জানান।

ঢাকা মহানগর উত্তর ট্রাফিকের ডিসি প্রবীর কুমার রায় বলেন, ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরও পথচারীররা সেসব ব্যবহার করছেন না। এজন্য বনানীতে আমরা জনসেচতনতার জন্য একটি মডেল চালু করেছি। তিনি বলেন, কেউ যদি ওই সড়কে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে সড়ক পারাপারের চেষ্টা করেন. তবে তাকে এক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। এ সময় তাকে ৫ মিনিটের চেয়ে যে জীবনের মূল্য বেশি সে বিষয়ে বোঝানো হয় এবং ট্রাফিক আইনের গুরুত্ব বুঝিয়ে সচেতন করা হয়।

ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) পুরকৌশল বিভাগ এবং নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ যৌথভাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

আইইবির পুরকৌশল বিভাগের সভাপতি প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তৃতা করেন আইইবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, সম্মানী সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মনজুর মোর্শেদ, পুরকৌশল বিভাগের সম্পাদক প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশের সভাপতি অমিতোষ পাল, সাধারণ সম্পাদক মতিন আবদুল্লাহসহ আরও অনেকে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, নগর গণপরিবহনের সমস্যা সমাধানে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বা এসটিপি করা হলেও তার তেমন কোনও বাস্তবায়ন নেই। ছাত্র আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রী ৫-৬টি নির্দেশনা দিলেও তারও কোনও বাস্তবায়ন নেই।

তিনি বলেন, শহরে সিটি টার্মিনাল নেই। কেন্দ্রীয় ট্রাফিক সিস্টেম এখনও গড়ে তোলা সম্ভব হয় নি। দেশে ভাল ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার বা ট্রাফিক ইকোনোমিস্ট নেই। গণপরিবহনের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হলে দুর্বলতাগুলোর সমাধান করে পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশের গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিচালনা, সরবরাহ ও আইনগত অনেক ক্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। এ ক্রুটিগুলোর সমাধান করা ছাড়া পরিববহন ব্যবস্থার উন্নতি করা সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের শহরের সড়ক যোগাযোগের নানান সমস্যা রয়েছে। বেশিরভাগ সড়ক উত্তর ও দক্ষিণ মুখী। এ কারণে পূর্ব-পশ্চিমমুখো চলাচলকারীরাও উত্তর-দক্ষিণমুখো সড়কে প্রবেশ করায় বিপত্তি ঘটছে।

তিনি বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ ভাগ প্রতিবন্ধী রয়েছে। তাদের কথা মাথায় রেখে আমরা তেমন কোনও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি নি। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে  নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

 ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, কয়েক বছর ধরে আমরা শুনতে পাচ্ছি, শহরে কয়েক হাজার বাস নামানো হবে। কিন্তু দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি দেখছি না।

তিনি বলেন, যে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করার আগে খুব চিন্তা-ভাবনা করে করতে হবে। কোন কারণে ব্যর্থ হলে সেটা নিয়েও গবেষণা করতে হবে। বছরের বেশিরভাগ সময় গ্রীষ্মকাল থাকায় এয়ার কন্ডিশন সিস্টেমের বাস বাড়ানো এবং ওয়ার্ডভিত্তিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।

রাজধানীর গণপরিবহন গবেষক প্রকৌশলী ড. আবদুল আল মামুন বলেন, সিস্টেম ডেভেলপ করা গেলে ঢাকা শহরের গণপরিবহন পুরোপুরি শৃঙ্খলায় আনা সম্ভব হবে। এ জন্য ‘বিজনেস মডেল’ গ্রহণ করে, তারই আলোকে ঢাকার গণপরিবহনগুলো কার্যকরভাবে গড়ে তুলতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকের সঞ্চালনা করেন আইইবির পুরকৌশল বিভাগে ভাইস-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।

টিএইচ/এসএমএম

আরও পড়ুন