• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯, ১০:৩১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯, ১০:৫৬ এএম

নিরাপত্তার কারণে রাতের তাজিয়া মিছিল সকালে 

নিরাপত্তার কারণে রাতের তাজিয়া মিছিল সকালে 

আজ (১০ সেপ্টেম্বর) পবিত্র আশুরা। কারবালার শোকাবহ এ দিনটি মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি পবিত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ যথাযথ মর্যাদায় ও কর্মসূচিতে আশুরা পালিত হচ্ছে।

আশুরাকে ঘিরে পুরান ঢাকার হোসেনী দালান এলাকাকে নিরাপত্তা বলয়ে নেয়া হয়েছে। মূল ভবনের আশপাশে র‌্যাবের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও কেনাইন স্কোয়াড টিমের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে কুকুর এবং অটোমেটিক ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়া নিরাপত্তার দিক চিন্তা করে শিয়াদের সোমবার মধ্যরাতের তাজিয়া মিছিল সকালে নেয়া হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে অন্যান্য কর্মসূচিও।

সোমাবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কেনাইনের সদস্যদের কুকুরের মাধ্যমে হোসেনী দালানের আশপাশ তল্লাশি করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে প্রায় ১ হাজার পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, নিরাপত্তার দিক চিন্তা করে সোমবার দিনগত মধ্যরাতের শিয়াদের মিছিল ও অন্যান্য কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিতব্য মিছিলটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সহকারে সম্পন্ন করা হবে। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

গত ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা হোসেনী দালানে বোমা হামলা চালায়। এতে দু’জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি দক্ষিণের পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ গত বছরের এপ্রিল মাসে ওই চার্জশিট অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তা ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিচারিক আদালতে আসে। ওই হামলায় ১৩ জনের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযানের সময় ৩ জন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। আসামিরা সবাই জেএমবি সদস্য।

এরপর থেকেই নিরাপত্তার স্বার্থে হোসেনী দালানে সিয়াদের সকল কর্মসূচি সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি সায়েন্স ল্যাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের গাড়ির অদূরে বোমা নিক্ষেপ করে জঙ্গিরা। এ ঘটনার প্রটোকল অফিসারসহ ২ জন আহত হন।

এছাড়া গুলিস্থানে পুলিশের পিকআপে বোমা নিক্ষেপে ৩ পুলিশ ও এক আনসার সদস্য আহত হন। পাশাপাশি মালিবাগে সিআইডির অফিসের সামনে পাকিং করা পিকআপে বোমা পেতে রাখা এবং পুরান পল্টন ও ফার্মগেইটের খামার বাড়ির পাশে বোমা ফেলে রাখার বিষয়টি পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এরপরই পুলিশ কমিশানর জন সাধারণের নিরাপত্তার কথা ভেবে হোসেনী দালানে কঠোর নিরাপত্তার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে শিয়াদের সব কর্মসূচি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ কমিশনার বলেছেন, এবারও পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া শোক মিছিলে ছোরা, কাচি, ব্লেড, তরবারিসহ কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের শরীর রক্তাক্ত করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাজিয়া মিছিলে নিজের শরীরে আঘাত করে রক্তাক্ত করা নিরুৎসাহিত করে আসছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ২০১৫ সালে জঙ্গি হামলার পর গত চার বছর ধরে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
 
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে অনুষ্ঠিতব্য তাজিয়া শোক মিছিলকে ঘিরে নিরাপত্তার স্বার্থে ১৩ নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এর আগে, বিষয়টি নিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর শিয়া নেতাদের সঙ্গে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারের বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ শিয়া সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শোক মিছিলে ১৩ নির্দেশনা হচ্ছে, ১. শোক মিছিলের নির্ধারিত রুট ও সময়সীমা (নির্ধারিত সময়ে শুরু ও শেষ) মেনে চলতে হবে। ২. তাজিয়া শোক মিছিলে কোনো পাইক যেন অংশ নিতে না পারে, সে বিষয়টি আয়োজক সংস্থা নিশ্চিত করবে। ৩. তাজিয়া শোক মিছিলে অংশ গ্রহণকারীদের নিশানের উচ্চতা ১২ ফুটের বেশি হবে না। ৪. তাজিয়া শোক মিছিল ও অন্যান্য অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আয়োজক সংস্থা প্রতিটি সমবেত স্থানে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। ৫. আয়োজক সংস্থা পর্যাপ্তসংখ্যক আইডি কার্ডসহ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ছবিসহ তালিকা সংশ্লিষ্ট উপ-পুলিশ কমিশনারের অফিসে পাঠাবেন। ৬. তাজিয়া শোক মিছিলে সব প্রকার ধারালো অস্ত্র, ধাতব পদার্থ, দাহ্য পদার্থ, ব্যাগ, পোটলা, লাঠি, ছোরা, চাকু, তরবারি/তলোয়ার, বর্শা, বল্লমের ব্যবহার এবং আতশবাজি নিষিদ্ধ। পোশাকের সঙ্গেও এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। ৭. শোক মিছিল চলাকালীন রাস্তার মাঝে বিভিন্ন অলিগলি থেকে আগত লোকদের মিছিলে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। মিছিলে অংশ গ্রহণ করতে হলে মিছিল শুরুর স্থানে যেতে হবে। ৮. শোক মিছিল শুরুর স্থানে প্রবেশের আগে সবাইকে আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর ও হাত দিয়ে দেহ তল্লাশি করে ঢুকতে দিতে হবে। তল্লাশি ব্যতীত কোনো অবস্থায় কাউকে মিছিলে ঢুকতে দেয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী রাখতে হবে। ৯. শিয়া সম্প্রদায়ের প্রতিটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইমামবাড়া ও শোক মিছিলে অংশ গ্রহণকারীদের সমাবেত স্থান এবং এর আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। সন্ধ্যার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। ১০. শোক মিছিলে উচ্চমাত্রার শব্দ তৈরি করার ঢাকঢোল, বাদ্যযন্ত্র, পিএ সেট ব্যবহার করা যাবে না। ১১. শোক মিছিল চলাকালীন সময়ে মিছিলের মধ্যে যেন কোনো গ্যাপ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ১২. তাজিয়া মিছিলে পাঞ্জা মেলানোর সময় শক্তি প্রয়োগ করে ভীতিকর পরিস্থিতি ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা তৈরি করা যাবে না। ১৩. শোক মিছিল ও আশুরাকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে কাউকে চাদর গায়ে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না।

এইচ এম/একেএস

আরও পড়ুন