• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯, ০২:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৯, ০২:৫৩ পিএম

রাজধানীতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ

রাজধানীতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ
রাজপথে পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনায় নষ্ট হয় নাগরিক পরিবেশ  - ছবি : জাগরণ

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও অলি-গলিতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অব্যবস্থাপনার কারণে রাস্তার ওপর ময়লা-আবর্জনা ফেলে নগরীর পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নগরবাসী সিটি করপোরেশনকে সব ধরনের ট্যাক্স দিচ্ছে, কিন্তু পরিবেশসম্মত সেবা পাচ্ছে না। 

অভিযোগ উঠেছে, ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত স্থান না থাকায় নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা যত্রতত্র ময়লা ফেলছে। এ কারণে একদিকে নগরীর পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে নগরবাসীকে রাস্তা চলাচল করছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসীনতাও দায়ী। 

নগরীর যেসব এলাকায় ময়লা-আবর্জনা রাস্তায় ফেলা হচ্ছে সেই এলাকাগুলো হলো- ইস্কাটন, মগবাজার ওয়ারলেস গেট মূল সড়ক, ভিকারুননেছা স্কুল সংলগ্ন রমনা থানার গলি, সচিবালয়ের সামনের রাস্তা, বায়তুল মোকাররম মার্কেটের মূল সড়ক, কমলাপুর রেল স্টেশনের রাস্তা প্রভৃতি।

কন্টেইনার উপচে রাস্তায় পড়ে থাকে আবর্জনা    - ছবি : কাশেম হারুন

জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে ভ্রাম্যমাণ মানুষের দ্বারা সৃষ্ট বর্জ্য যত্রতত্র ফেলা থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০০টি করে মোট ৫,৭০০টি ওয়েস্ট বিন স্থাপন করা হয়। আরো ওয়েস্ট বিন স্থাপনের কাজ চলছে। এ ছাড়াও ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একটি করে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে ৪৩টির কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। আর ১৫টি এসটিএসের অভ্যন্তরে পাশ্ববর্তী এলাকার রাস্তা হতে কন্টেইনারসমূহ উত্তোলন করে পরিবেশসম্মতভাবে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। আরো ৮টি এসটিএস শিগগিরই উন্মুক্ত করা হবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আরো ১৩টি এসটিএস স্থাপনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহে প্রাইমারি কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হিসেবে এনজিও/সিবিও কাজ হয়েছে। এর মাধ্যমে ৬০০ ভ্যানগাড়ি এবং ৩ হাজার জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োজিত রয়েছে। সূত্র জানায়, দক্ষিণ সিটিতে প্রতিদিন প্রায় ৭৫০ ট্রিপের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টন বর্জ্য মাতুইল স্যানেটারি ল্যান্ডফিলে চূড়ান্ত অপসারণ করা হয়।

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী সাবরিনা দৈনিক জাগরণকে বলেন, রাস্তায় ময়লার কন্টেইনার রাখার কারণে স্কুল ছুটির সময় প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আর দুর্গন্ধ তো আছেই। দ্রুত এসব সরানোর দাবি তার। 

বর্তমানে রাজধানীতে জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ। এই সংখ্যক মানুষের জন্য রাস্তার বরাদ্দ থাকার কথা ৩০ শতাংশ। সেখানে আছে ৯ শতাংশ। ঢাকার দুই সিটিতে প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে বর্জ্য হয় ৭০ থেকে ৮০ টন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিছন্নতাকর্মী কাজ করছে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ জন। 

রাজধানীর রাস্তায় যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা   - ছবি : কাশেম হারুন

জানা গেছে, ময়লা অপসারণ, রাস্তা ঝাড় দেয়া, সারফেস ড্রেন পরিষ্কার, ডিসিসির স্টর্ম স্যুয়ারেজ পরিষ্কার, বিউটিফিকেশ ও বিজ্ঞাপন সেল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড স্থাপনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অন্যতম প্রধান কাজ। জনবল সংকট ও আন্তঃবিভাগ সমন্বয়হীনতার কারণে নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শক্তিশালী হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

মগবাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল মোমেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, ইস্কাটন এলাকায় রাস্তার ওপর ময়লার কন্টেইনার রাখা হয়েছে। এখানে একটি বিশাল শপিংমলের সামনে ময়লার কন্টেইনার রাখায় মানুষের যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। পাশাপাশি মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে মিনিবাসগুলো নামার সময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসবের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) খামখেয়ালিপনা দায়ী। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য ডিএনসিসির হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 

মগবাজারের স্থায়ী বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন তো মেয়র হতে ভোট লাগে না। এ কারণে যেনতেনভাবে ময়লা রাখা হচ্ছে। জনসাধারণের খোঁজ নিচ্ছেন না মেয়র। মগবাজার এলাকার রাস্তা থেকে কন্টেইনার দ্রুত সরানোর দাবি তার। 

রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনায় নষ্ট হয়ে নাগরিক পরিবেশ    - ছবি : কাশেম হারুন

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, সিটি করপোরেশন নান্দনিক করার জন্য সব সময় সচেষ্ট। তবে কিছু সমস্যার কারণে রাস্তার ওপর ময়লার কন্টেইনার রাখতে হচ্ছে। মগবাজার এলাকায় জায়গার অভাবে ময়লা ফেলার স্টেশন স্থাপন করা যাচ্ছে না। জায়গা পেলেই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উপ-প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মিল্লাতুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, অনেক সময় ময়লার গাড়ি সরানোর পর আবার সেখানে ময়লা রাখছে স্থানীয়রা। এজন্য রাস্তায় যানজট থাকে। স্থায়ীভাবে এসব এলাকায় ময়লার কন্টেইনার রাখা হয় না। যেসব স্থানে রাখা হয়েছে তা দ্রুত সরানো হবে।

টিএইচ/ এফসি

আরও পড়ুন