• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৩:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৩:১৫ পিএম

শাহজাহানপুর কলোনির বস্তি উচ্ছেদ, এলাকায় আনন্দ মিছিল

শাহজাহানপুর কলোনির বস্তি উচ্ছেদ, এলাকায় আনন্দ মিছিল
শাহজাহানপুর কলোনির বস্তিতে উচ্ছেদ অভিযান

রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলওয়ে কলোনি বস্তিতে গড়ে উঠেছিল মাদকের রমরমা ব্যবসা। মাদককে ঘিরে ওই এলাকায় প্রতিদিনই ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা লেগেই থাকতো। পাশাপাশি রেল কর্মচারীরা মাদকসেবীদের উপদ্রপে অতিষ্ট ছিল। এসব সমস্যা সমাধানে অবশেষে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে সেই মাদকের ডেরা বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে আনন্দ মিছিল বের করেন এলাকার রেল কর্মচারী ও তাদের স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া সন্তানরা। দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হওয়ায় এ উচ্ছেদকে তারা সাধুবাদ জানিয়েছেন। 

বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মচারীদের আবাসনের জন্য রাজধানীর শাহজাহানপুরে এই কলোনি গড়ে উঠে। ২৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা ওই কলোনিতে চারতলা ভবন রয়েছে ১০৮টি। যা রেলওয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির আড়াই হাজার চাকরিজীবী পরিবারের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় ক্রমান্বয়ে ২৫ একর জায়গার রেলওয়ে কলোনি দিনে দিনে সংকুচিত হতে থাকে। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিকদের দখলে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠে। প্রথমে ক্লাব ঘর দিয়ে অবৈধ দখল শুরু হলেও শেষে কলোনিটি বস্তিতে পরিণত হয়। এই অবৈধ দখলের মাধ্যমেই কলোনিতে মাদকের রমরমা ব্যবসা শুরু হয়।

রেলওয়ে কলোনির স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, গত ১০-১২ বছর আগে কলোনিতে ৩টি ক্লাব ঘর তৈরির মাধ্যমে অবৈধ দখল শুরু হয়। এরপর  রিকশা গ্যারেজ ও বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠে। সর্বশেষে ১ হাজার ঘরের বিশাল বস্তি গড়ে উঠে। কলোনির সরকারি ভবন থেকে বস্তিতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, কলোনিতে বহিরাগত বখাটে ও মাদকসেবীদের আগমনে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী একপর্যায়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েন। ছেলে-মেয়েরা বখাটেদের উৎপাতে স্কুল-কলেজে যেতে পারতো না। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ৩টি ক্লাব ঘর ও বস্তিতে জমতো মাদকের আসর। গাঁজা, মদ ও ইয়াবা থেকে শুরু করে নানা রকম মাদকের ব্যবসাও চলতো। কলোনির বাসিন্দারা মাদক ব্যবসার বিষয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্থানীয় রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ক্যাডাররা দলবল নিয়ে কলোনির বাসিন্দাদের একাধিকবার মারধরও করেছেন। এরপর থেকে কেউ আর ভয়ে প্রতিবাদ করেননি।

রেলওয়ের মেক্যানিকেল বিভাগের কর্মকর্তা মজিদুর রহমান বলেন, অবৈধ এই বস্তিতে শুধুমাত্র বহিরাগতরাই থাকতো না, মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের বস্তি ও ক্লাব ঘরে নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল। সারাদিন কলোনিতে মাদকসেবীরা মাদক কেনার জন্য আসত। বিশেষ বিশেষ জায়গায় বসত মাদক সেবনের আসর।

রেলওয়ের তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা ও কলোনির বাসিন্দা মো.স্বপন বলেন, মাদক সেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আতঙ্কে সন্ধ্যার পর কেউ বিল্ডিং এর বাইরে যেতে চাইতো না। প্রতিদিন ক্লাব ঘরগুলোতে চলত মাদক সেবন। তবে এখন বস্তি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আশা করি, এ অবস্থা আর থাকবে না।

এ বিষয়ে শাহজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল হক বলেন, এমন কিছু অভিযোগ আমরাও শুনেছি। কিন্তু কলোনি থেকে মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করা হয়নি। এখন অবৈধ উচ্ছেদ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এরপর যাতে বহিরাগতরা না যেতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। 

অবৈধ উচ্ছেদের বিষয়ে রেলওয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের অভিযান চলছে। এই অভিযান প্রথম ধাপে ৪দিন চলবে। অভিযান শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

এইচএম/একেএস

আরও পড়ুন