• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯, ০৯:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯, ১০:০৯ এএম

ক্যাসিনোতে জড়িত শতাধিক নেপালি

ক্যাসিনোতে জড়িত শতাধিক নেপালি
ক্যাসিনো

রাজধানীতে ক্যাসিনোতে জড়িত রয়েছেন প্রায় শতাধিক ভিনদেশি নাগরিক। এর সিংহভাগই নেপালের অধিবাসী।এছাড়া রয়েছেন ভারত ও বার্মার নাগরিক। এসব ভিনদেশিদের বৈধ কোনো ওয়ার্ক পারমিট বা কাগজপত্র নেই। যদিও থেকে থাকে, এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এ সব ভিনদেশিরা ক্যাসিনো চালানোতে পারদর্শী। মুলত আমাদের দেশের ক্ষমতাসীন দলের যেমন যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতারাই এদের দিয়ে ক্যাসিনো পরিচালনা করছেন। এদের দেয়া হচ্ছে মোটা অংকের মাসিক বেতন। 

৪টি ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযানের পর র‌্যাবের প্রাথমিক তদন্তে প্রায় অর্ধশত বিদেশি জড়িত থাকার তালিকা পেয়েছে। তারা ক্যাসিনোতে খেলা পরিচালনা করে থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্যরা হলেন- নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ দাস,প্রদীপ কুমার, রাজকুমার, অজয় পাকরাল, হেমন্ত রায়, বিনোদ মানালী ও ছোট রাজকুমার। 

এদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর পাশাপাশি ক্যাসিনো থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্যনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এসব ক্যাসিনো থেকে চাঁদার টাকা তুলতেন মহানগর দক্ষিণের যুবলীগ সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের চাচা আলী হোসেন। তিনি সম্রাটের স্পর্শকাতর  সব বিষয়ে তদারকি করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও অনেক চাঁদাবাজ। 

কে এই দীনেশ ও রাজকুমার, এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক গোয়েন্দা সদস্য জানান, নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ ও রাজকুমারের আদি নিবাস নেপালের থামেলে। তাদের হাত ধরেই মূলত ঢাকায় ক্যাসিনো ব্যবসার বিস্তৃতি লাভ করেছে। প্রতিটি ক্যাসিনো চালুর আগে তারা কাকরাইলে যুবলীগ নেতা সম্রাটের অফিসে গিয়ে দেন দরবারের মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে হয়। তার অফিসের সিসি ক্যামেরার রেকর্ড পরীক্ষা করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে বলে গোয়েন্দারা মন্তব্য করেন। 

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, দীনেশ ও রাজকুমার অবৈধ ক্যাসিনো খোলার পর হুমড়ি খেয়ে পড়েন জুয়ারিরা। এ অবস্থা দেখে একের পর এক ক্যাসিনো খুলতে থাকেন তারা। আর দেশ থেকে নিয়ে আসেন ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের। সেই সঙ্গে প্রতিটি ক্যাসিনোতে ২০ থেকে ২৫ জন করে নেপালি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েও কামিয়ে নেন মোটা টাকা। আবার নেপালিদের বেতনও হয় মার্কিন ডলারে। একজন কর্মকর্তার বেতন মাসে কমপক্ষে ১ হাজার ডলার। ভিজিট ভিসায় আসা এসব কর্মচারীরা প্রতিমাসে পালা করে দেশে যাওয়ার সময় ডলার নিয়ে যান। মাঝে মধ্যেই টাকা পাঠাতে হুন্ডিরও আশ্রয় নেন। গত চার বছর এভাবে দেশ থেকে শুধু নেপালেই কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। দীনেশ ও রাজকুমার রাজধানীতেই অবস্থান করছেন। তবে তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

এদিকে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের এজাক্স ক্লাব চালু হয় যুবলীগ নেতা আরমান, তছলিম ও খোরশেদের তত্ত্বাবধানে। সেখানেও নেপালি নাগরিক ছোট রাজকুমারকে দিয়ে ক্যাসিনোটি চালু করেন তারা। এই ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন সম্রাটের জন্য চাঁদা ২ লাখ টাকা পাঠাতে হয়।
 
এছাড়া দীনেশ ও রাজকুমারের অংশীদারিত্বে উত্তরায় এপিবিএন অফিসের উল্টো পাশে একটি ভবন ভাড়া করে চালু করা হয় একটি ক্যাসিনো। তাদের পার্টনার হন তছলিম নামের এক স্থানীয় যুবলীগ নেতা। এরপর ওই এলাকায় সম্রাটের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের মাধ্যমে আরও কয়েকটি ক্যাসিনো গড়ে তোলা হয়। প্রতিটি ক্যাসিনোতে সম্রাটের চাঁদা দিনে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ২০১৫ সালে ক্যাসিনো খোলার মাধ্যমে বাংলাদেশে অবৈধ এ ব্যবসা শুরু করেন নেপালের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী দীনেশ ও রাজকুমার। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বিনোদ মানালী। নেপাল ও ভারতের গোয়ায় তাদের মালিকানায় ক্যাসিনো ব্যবসা রয়েছে। ভিক্টোরিয়ায় ক্যাসিনো চালুর কয়েক মাসের মধ্যেই বাবা নামের এক নেপালি নাগরিকের কাছে ক্যাসিনোটি বিক্রি করে দেন তারা। তখন থেকে বাবা ও তার ম্যানেজার হেমন্ত মিলে ক্যাসিনোটি চালাতে থাকেন।

অপরদিকে এই ক্লাবের মালিক নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও ছোট রাজকুমার। ভারতীয় আরও দু’জন অংশীদার থাকলেও তাদের নাম জানা যায়নি। এই ক্যাসিনো থেকে সম্রাটের প্রতিদিনের চাঁদা ৩ লাখ টাকা। এর বাইরে আরমানের নিজের চাঁদা ১ লাখ টাকা। 

অন্যদিকে ঢাকার নামকরা জুয়ারি সেন্টু ২০১৬ সালে কলাবাগান ক্লাবে ক্যাসিনো খোলেন নেপালি নাগরিক দীনেশ, রাজকুমার ও অজয় পাকরালের সঙ্গে অংশীদারিত্বে। এখান থেকে প্রতিদিন ২ লাখ টাকা করে চাঁদা নিতেন সম্রাট। এখান থেকেও চাঁদা তুলতেন আরমান। অভিযোগ আছে, চাঁদার অঙ্কে বনিবনা না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ওই ক্লাব বন্ধ করে দিতেন  সম্রাট। অনেক দেনদরবার করেও আর ক্যাসিনোটি চালু করতে পারেননি সেন্টু।

জানা গেছে, সম্রাটের চাচা হিসেবে পরিচিত পুরনো ঢাকার ব্যবসায়ী আলী হোসেন এই ক্লাবে ক্যাসিনো চালু করেন। দীনেশ ও রাজকুমার তার ব্যবসায়িক অংশীদার। আলী হোসেনের নামে ক্যাসিনোটি চললেও এর মূল মালিক সম্রাট নিজেই, যদিও কাগজে-কলমে তার নাম নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তারপরও তার চাঁদার টাকা আলাদা। প্রতিদিন চাঁদার পরিমাণ ৩ লাখ টাকা।

এছাড়া রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক প্রধান সড়কের পাশের একটি ভবনে অবস্থান সৈনিক ক্লাবের। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের নামে এই ক্লাব চলে। আর এটি নির্ধারিত টাকায় ভাড়া নিয়ে ক্যাসিনো খোলেন যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দিন ও এ টি এম গোলাম কিবরিয়া। তাদের অংশীদার নেপালি নাগরিক প্রদীপ। এই ক্লাব থেকে প্রতিদিন ২ লাখ টাকা চাঁদা পান সম্রাট।

এবিষয়ে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীতে ক্যাসিনো মানে বিত্তবানদের কোটি টাকার জুয়া খেলা, মাদক সেবন ও অবৈধ অস্ত্র দিয়ে মানুষকে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হবে। রাজধানীতে কোনো প্রকারের ক্যাসিনো চলতে দেয়া হবে না। রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালী হলেও কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান পুলিশ কমিশনার।
 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, অবৈধ ভাবে থাকা ভিনদেশি জুয়াড়ি ও মদ্যপায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নেপাল, বার্মা ও ভারতের নাগরিকদের বিষয়ে স্ব স্ব দেশের দুতাবাসের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। 

এইচএম/বিএস 
 

আরও পড়ুন