• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৩, ২০১৯, ০৪:৫৩ পিএম

মতিঝিলের ‘ক্লাব পাড়া’ এখন যেন ভুতুড়ে বাড়ি  

মতিঝিলের ‘ক্লাব পাড়া’ এখন যেন ভুতুড়ে বাড়ি  
কমে গেছে ক্লাব চত্বরে আনাগোনা

ক্যা সি নো 

রাজধানীর মতিঝিলের আলোচিত ‘ক্লাব পাড়া’ এখন যেন ভুতুড়ে বাড়ি। দিনভর কোলাহল আর হইচই লেগে থাকা এই পুরো এলাকা এখন নীরব নিস্তব্ধ। নেই কোলাহল, নেই হইচই। সন্ধ্যার পর এখন আর আসে না আগের সেই দামি গাড়ি, নামি মানুষ। ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর বদলে গেছে ক্লাব পাড়ার দৃশ্যপট। 

মতিঝিলের এই ক্লাব পাড়ায় অবস্থিত মোহামেডানসহ বেশিরভাগ ক্লাবেরই রয়েছে গর্বিত ইতিহাস। তবে গত দুই দশকে ক্লাবগুলোর ব্যয় মেটাতে ফুটবল-ক্রিকেটের পাশপাশি ক্লাবগুলোর ভেতরে চালু করা হয় জুয়া। সময়ের বিবর্তনে জুয়া রূপ নেয় ক্যাসিনোতে। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানের পর বেরিয়ে আসতে থাকে ক্লাব পাড়ার ‘ক্যাসিনো’ সমাচার। গুলশানের বাসা থেকে আটক হন এই ক্লাবের সভাপতি যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এর পর একে একে মোহামেডানসহ অর্ধডজন ক্লাবে চলে র‌্যাবের অভিযান। বেরিয়ে আসে ক্যাসিনো এবং ক্যাসিনো সম্রাটদের সাতকাহন। অভিযানে এসব ক্লাব থেকে ক্যাসিনো বোর্ড, জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও মাদকসহ কোটি কোটি টাকা জব্দ করা হয়।

মতিঝিলের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, ভিক্টোরিয়া, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অবৈধভাবে ক্যাসিনো ও জুয়া খেলা হতো। তবে ক্লাব পাড়ায় র‌্যাবের বড় ধরনের অভিযানের পর বদলে গেছে ক্লাব পাড়ার দৃশ্যপট। গতকাল (শুক্রবার) বিকেলে সরেজমিনে মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেসব ক্লাবে এখন পিন পতন নীরবতা। ফকিরেরপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো উচ্ছেদ অভিযানের পর সিলগালা করে দেয়া হয় এ দুটি ক্লাব। কোনো কোনো ক্লাবে আবার তালা ঝুলতে দেখা যায়।

আরামবাগের স্থানীয় বাসিন্দা বদিউল আলম দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘র‌্যাবের ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের পর ক্লাব পাড়ার সেই রমরমা ব্যবসা আর নেই। নেই সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত কোটিপতিদের আড্ডা। এখন আর আসে না নতুন মডেলের দামি গাড়ি, নামানো হয় না টাকার বস্তা। এখন এই এলাকায় এলে মনে হয় না এই সেই ক্লাব পাড়া।’ 

দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব 
দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের প্রধান ফটকে এখন তালা ঝুলছে। এই ক্লাবে বিকাল থেকে সারারাত চলতো জুয়া ও ক্যাসিনো। সন্ধ্যার পর এই ক্লাবের সামনে থাকতো অনেক গাড়ি। থাকত নারীদেরও আড্ডা, জানান এক দোকানি। 

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব 
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব জনশূন্য। এই ক্লাবের বাড়তি টিনশেড ঘরে জুয়া হতো বলে স্থানীয় লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান। তবে সেগুলো এখন আর নেই। ক্লাবগুলোর সামনের বড় বাতিগুলো অনেকটাই নিষ্প্রভ। কর্মকর্তারা কেউ কেউ গা-ঢাকা দিয়েছেন। 

আরামবাগ ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের প্রধান ফটক খোলা থাকলেও ভেতরে আলো দেখা যায়নি। খুঁজে পাওয়া যায়নি ক্লাবের কোন কর্মকর্তাকে। একজন গার্ড ও পিয়নের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, র‌্যাবের অভিযানের পর ক্লাবটির কোনো কর্মকর্তা এখানে আসেন না। আর আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সামনেও কাউকে দেখা যায়নি।

অনুমোদনহীন ক্যাসিনো বোর্ড এসেছে যেভাবে— 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর জানিয়েছে, কখনো জুতার সরঞ্জাম, কখনো কম্পিউটার এবং মোবাইল পার্টস, আবার কখনো ফার্নিচার- এসব নামে দেশে বিভিন্ন সময়ে আমদানি হয়েছে ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত ডিজিটাল জুয়ার সরঞ্জাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতির সুযোগ নিয়ে সরাসরি ক্যাসিনোর নামে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেইম, ক্যাসিনো ওয়ার গেইম টেবিল ইত্যাদি সরঞ্জাম আমদানি হয়।

জানা যায়, ক্যাসিনোতে জুয়ায় ব্যবহৃত প্রতিটি মেশিন ও সরঞ্জামের দাম প্রায় লাখ টাকা থেকে তিন কোটি টাকা। যেখানে বেনামে এসব সরঞ্জাম এনে কোটি কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি দেয়া হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে মোট পাঁচটি আমদানিকারকের হাত ধরে আসা এসব চালানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য-প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত এই ধরনের সরঞ্জামের আমদানিকারক এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স, ন্যানাথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, পুস্পিতা এন্টারপ্রাইজ, বি পেপার মিলস লিমিটেড ও এ থ্রি ট্রিড ইন্টারন্যাশনাল।

পুলিশের তালিকায় রাজধানীতে দেড় শতাধিক ক্যাসিনো 
রাজধানীতে ক্যাসিনো-জুয়া খেলা হয় এমন দেড় শতাধিক স্পটের তালিকা রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের (ডিএমপি) কাছে। ডিএমপির ৮টি অপরাধ বিভাগ এবং ৪টি গোয়েন্দা বিভাগের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে এ তালিকা করা হয়েছে। তালিকা ধরে ধরে অভিযান চলছে। চলমান অভিযানের মুখে এসব ক্লাবের অধিকাংশই বন্ধ। আর যেন চালু না হয় সেই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এমএএম/এফসি/এসএমএম

আরও পড়ুন