• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ১১:১৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ১১:১৭ এএম

অতিরিক্ত ফি

ঢাকার দুই সিটিতে নতুন ট্রেড লাইসেন্স ও নবায়ন সংখ্যা কমেছে!

ঢাকার দুই সিটিতে নতুন ট্রেড লাইসেন্স ও নবায়ন সংখ্যা কমেছে!
ঢাকার দুই সিটির লোগো

নতুন ট্রেড লাইসেন্স ও নবায়ন করতে ৬ গুন টাকা বাড়ানোর কারণে কমতে শুরু করেছে ট্রেড লাইসেন্সের কাজ। লাইসেন্স নবায়ন না করেই বাসায় ফিরছেন দুই সিটির অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। 

ঢাকা দুই সিটির ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা না করে এক ধাপে প্রতি ট্রেড লাইসন্সের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)এক ধাপেই ৫শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। এ কারণে দুই সিটিতে নতুন লাইসেন্স ও নবায়ন সংখ্যাও কমেছে। 

ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-১ কামারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী নাম রফিকুল ইসলাম। তার মুদি দোকানের ট্রেড লাইন্সেস নবায়ন করতে আসেন। এসে জানতে পারেন বিশাল অংকের ফ্রি বাড়ানো হয়েছে। মাথায় হাত দিয়ে বাসায় ফেরেন। তিনি গত ১০ অক্টোবর দৈনিক জাগরণকে বলেন,ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা না করে এক সঙ্গে সরকার ৫-৬ গুন টাকা বাড়িয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বৈধ ব্যবসা করতে দিতে চায় না। তিনি বলেন,ট্রেড লাইন্সেস ছাড়া ব্যবসা করবো। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,সরকার নগরবাসীকে নানা ভাবে বেকায়দায় ফেলেছে। অনেক জায়গায় দোকান ভাড়া বাড়ছে। বেচা-বিক্রি বাড়েনি,আমরা কি ভাবে ব্যবসা করে খাবো।

জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ছয় হাজার টাকা ব্যয়ে গত বছর নতুন ট্রেড লাইসেন্স করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সারোয়ার আলম। তিনি এবার লাইসেন্স নবায়ন করতে আগের চেয়ে টাকা কম লাগবে ভেবে নবায়ন করতে দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-১ এ কার্যলয়ে এসে দেখেন বিশাল ফারাক। মাথায় হাত দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তিনি সোমবার (১৪ অক্টোবর) দৈনিক জাগরণকে বলেন, ভাই আপনারা ছোট ব্যবসায়ীদের কথা লেখেন। আমাদের কথা করপোরেশন কোন চিন্তা না করে ট্রেড লাইন্সেসের ফি বাড়িয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পঙ্গু করতে চায়। তিনি বলেন,গত বছরের তুলনায় এবার লাইসেন্স নবায়ন করতেই ১২ হাজার টাকা লাগছে। এতেই বিপাকে পড়েন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। 

গত মাসে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫ এর কার্যালয়ে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে যান ১৯ ধলপুরের মুদি ব্যবসায়ী আবদুল বারেক। তিনি ওই অফিসের কর কর্মকর্তার সঙ্গে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না করে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গালাগাল করতে করতে বেরিয়ে পড়েন। আবদুল বারেক  দৈনিক জাগরণকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গতবার তার ট্রেড লাইসেন্স করতে সব মিলে খরচ হয়েছিল ৩ হাজার টাকা। এবার তার কাছে চাওয়া হচ্ছে ১১ হাজার টাকারও বেশি। 

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-৫ এর ট্রেড লাইসেন্স শাখার লাইন্সেস সুপারভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভাই বিষয়টি করপোরেশন করেছে। এটি কি আমাদের বিষয় ওনি আমাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে কি লাভ। অথচ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন সরকার ফি বাড়ায়নি।সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা এই অতিরিক্ত টাকা ঘুষ হিসেবে নিচ্ছেন। একবারে এত বেশি মাত্রায় ফি বাড়ার বিষয় কেউ বুঝতে চাইছেন না।

ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন,লাইসেন্স হালনাগাদ করতে উৎস কর দিতে হতো ৫শ’ টাকা সেখানে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৬ গুণ বৃদ্ধি করে ৩ হাজার টাকা একটি ট্রেড লাইসেন্স হালনাগাদ করতে উৎস কর প্রদান করতে হচ্ছে। একইভাবে অন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩শ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা এবং পৌরসভা সদর এলাকায় ৩শ’ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা এবং পৌরসভায় ১শ টাকার পরিবর্তে ৫শ টাকা করা হয়েছে। এতে শুধু ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নয় পুরো দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা নতুন ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইনেন্স করতে নিরুৎসাহিত হয়েছে।

জানা গেছে,এ অর্থবছরের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি বাড়াতে আয়কর অধ্যাদেশের ৫২ কে ধারায় সংশোধন আনা হয়েছে অর্থ বিলে। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিটিতে তিন হাজার টাকা কর দিতে হবে। যা গত অর্থবছরে দুই সিটির ব্যবসায়ীদের ৫০০ টাকা করে কর দিতো। 

দেশের অন্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে ৩০০ টাকা কর দেয়ার বিধান ছিল। চলতি অর্থবছরে তা বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা হয়। এ ছাড়া পৌরসভাগুলোতে ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে বিদ্যমান ১০০ টাকার কর বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন,আকস্মিকভাবেই মহাবিপাকে পড়েছেন দেশের ৯০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। নীরবেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি পাঠানো হলেও তখন লাইসেন্স নবায়ন মৌসুম না হওয়ায় এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেননি। সম্প্রতি লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত দিতে হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চোখে অন্ধকার দেখছেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বলেছেন,আগে শুরু করি। কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা যাবে। তিনি আরও বলেন,সারা দেশে যত বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে,এর ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান (এসএমই)। তাদের কাছে পৌঁছাতে পারলে আমরা অনেক ভ্যাট পাব। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) ইউসুফ আলী সরদার দৈনিক জাগরণকে বলেন,ট্রেড লাইসেন্স ফি বাড়িয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই। আর কেউ ব্যবসা বন্ধ করে ট্রেড লাইসেন্স সারেন্ডার করতে চাইলে তাকেও এসব ফি দিয়ে ব্যবসার ইতি টানতে হবে। অন্যথায় করপোরেশন তার বিরুদ্ধে মামলা করার এখতিয়ার রাখে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া দৈনিক জাগরণকে বলেন, সরকার নবায়ন ফি নতুন করে যা নির্ধারণ করে দিয়েছে এ আদেশ মানতে সবাই বাধ্য। সুতরাং এখন এটা ব্যবসায়ীদের দিতেই হবে। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন দৈনিক জাগরণকে বলেন, ট্রেড লাইসেন্সের ফি বাড়ানোর ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। নতুন উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারকে ঠান্ডা মাথায় ট্রেড লাইন্সেস ফি বাড়ানোর আগে চিন্তা করার বিষয় ছিল। ট্রেড লাইসেন্সের ওপর আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার এবং যুক্তিসঙ্গত হারে ট্রেড লাইসেন্স ফি নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দেশের ১১ সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোতে শ্রেণী ভেদে ট্রেড লাইন্সেস ফি বাড়ালে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হতো। এখন তারা ব্যবসায় নামতে নিরুৎসাহিত হবেন। এখানে ব্যবসার বদলে অল্প পুজির মানুষজন অন্য পেশায় চলে গেলে নানা অপকর্ম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। বিষয়টি  সরকারের উচ্চ মহলে চিন্তা করে কর কমানোর পক্ষে মত দেন তিনি। 

টি এইচ/বিএস