• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০১৯, ০৮:৩৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৬, ২০১৯, ১০:৩২ এএম

‘গরু-ছাগলও এইখানে গোসল করানো যাবে না’

‘গরু-ছাগলও এইখানে গোসল করানো যাবে না’
ময়লা-আবর্জনায় বেহাল অবস্থা বিশাল এই পুকুরটির- ছবি: জাগরণ

ময়লা-আবর্জনায় যাচ্ছেতাই অবস্থা মহাখালীতে অবস্থিত জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান (আইপিএইচ) মালিকানাধীন বিশাল পুকুর। এর অবস্থান আইপিএইচ মসজিদের পশ্চিমদিকে (সাততলা বস্তিতে যেতে বা দিক)। এটা পুকুরপাড় নামেই পরিচিত।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে পুকুরের চার পাড় ঘুরে দেখা গেল, দুই পাড় জুড়ে রয়েছে বড় বড় কাঁঠালগাছ, নারিকেলগাছ। ময়লা আবর্জনায় গিজগিজ করছে চারটি পাড়ই। বিশাল এই পুকুর দেখাশোনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি নেই। সিমেন্টের পিলার দিয়ে বসানো কাঁটাতারের বেড়া হয়ে আছে অস্তিত্বহীন। গৃহস্থলির আবর্জনা, রাস্তাঘাটের আবর্জনা, পঁচে যাওয়া কচুরিপানা, পলিথিনসহ নানা ধরনের আবর্জনা রয়েছে।

পুকুরের পাড়ে একটি সাইন বোর্ড দেখা গেল। এতে লিখা- ‘জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতি দ্বারা পরিচালিত ও সংরক্ষিত পুকুর’।

এ সাইন বোর্ডে পাঁচটি নির্দেশনা দেয়া আছে। এসব হচ্ছে- জনসাধারণের পানি ব্যবহারের উন্মুক্ত, পানিতে গরু-ছাগল বা অন্য কোনো পশু গোসল করানো নিষিদ্ধ, পুকুরের পানিতে বা পুকুরের চার পার্শ্বে কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ বা ময়লা আবর্জনা ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে পুকুরের মাছ ধরা নিষিদ্ধ।

এসব লেখা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রাসেলের সাথে দৈনিক জাগরণ কথা বলে। ব্যঙ্গ করে রাসেল বলেন, পানির যে চেহারা, এটা জনসাধারণের ব্যবহার যোগ্য নয়। দেখেন, পঁচা পানি, ময়লা ভাসছে। মানুষ তো দূরে থাক, গরু-ছাগলও এইখানে গোসল করানো যাবে না।

সরেজমিনে দেখা গেল- পুকুরের চারপার্শ্বের মধ্যে দুই পাশে সড়ক রয়েছে, যাতে নিয়মিত যানবাহন চলাচল করে। বাকি দুই পাশে ঘরবাড়ি রয়েছে। সেখান বরাবর পাড়ে ময়লা আবর্জনার পরিমাণ বেশি দেখা গেল। গৃহস্থালির যত ধরনের আবর্জনা আছে, সব ফেলা হচ্ছে পুকুর পাড়ে।

এখানে একটি বাড়ির বাসিন্দা জুলেখা। তাকে ময়লা আবর্জনা ফেলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, আর কই ফালামু, কাছে তো কোনো ডাস্টবিন নাই, ময়লার গাড়ি নাই।

পুকুর পাড় ঘেঁষা বসতবাড়িগুলোর আরও কিছু বাসিন্দার সাথে এ বিষয়ে কথা হয়। তাদের বক্তব্য প্রায় জুলেখার মতনই।

পুকুরে ইট সিমেন্টে বাধা একটি ঘাট আছে। সেটা বাঁশ ফেলে বন্ধ করা। এই বাঁশ ডিঙিয়ে মাঝেমাঝে স্থানীয় শিশুকিশোররা ঘাটের দু’পাশে থাকা বসার স্থানে বসে গল্পগুজব করে, পানি ধরে খেলাধূলা করে। 

৮ বছর বয়সী রাব্বি জানায়- আগে আরও খারাপ ছিল। কচুরিপানায় ভরপুর ছিল। এগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে।

পুকুরের ঘাটের পাশে একটি দোকান রয়েছে। সেই দোকানের ক্রেতা মিরাজ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে যখন তোলপাড় শুরু হলো, তখন এসব কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়। দেখেন, এখনো পাশে পঁচা কচুরিপানা দেখা যায়, এগুলো পুকুরেই পড়ে আছে। এতে পানি আরও দূষিত হচ্ছে। তাহলে কচুরিপানা পরিষ্কার করে কী লাভ হলো?

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. সুলতান মাহমুদ শামসুজ্জামান। পুকুর দূষণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা সেখানকার বাসিন্দারা। তারা যত ধরনের ময়লা আবর্জনা আছে, সব পুকুরের পাড়ে ফেলেন। গত আগস্টেই পুকুরটি পরিষ্কার করা হয়।

তিনি বলেন, আসলে এসব সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে গণপূর্ত অধিদপ্তর। যখনই প্রয়োজন পড়ে, তখনই তাদেরকে জানানো হয়। তারা কাজ করে যায়। কিন্তু আশপাশের মানুষ যদি সচেতন না হয়, তাহলে পরিষ্কার রাখা দুঃসাধ্য।

এতো বড় পুকুর দেখাশোনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রয়োজন আছে কি-না? এমন প্রশ্নে পরিচালক ডা. সুলতান মাহমুদ শামসুজ্জামান আরও বলেন, প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমাদের লোকবল সংকট আছে। ওইখানে কাউকে দিলে, অফিসের সমস্যা।

পুকুরটি দূষণমুক্ত করার জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান সুলতান মাহমুদ শামসুজ্জামান।

আরএম/টিএফ

আরও পড়ুন