• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ১২:০৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ১২:০৯ পিএম

বিনোদকে বাঁচাতে তৎপর ডিএসসিসির কর্মকর্তারা 

বিনোদকে বাঁচাতে তৎপর ডিএসসিসির কর্মকর্তারা 
দক্ষিণ করপোরেশনের লোগো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রয় ও ভান্ডার বিভাগ। এ বিভাগের নিম্নমান সহকারী-কাম মুদ্রাক্ষরিক বিনোদ চন্দ্র সরকার সংস্থার শীর্ষকর্তা-ব্যক্তিদের সুবিধা দিতেই তাকে চারটি পদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে গত ১০ অক্টোবর দৈনিক  জাগরণে প্রকাশিত ‘ডিএসসিসির ভাণ্ডার বিভাগ একাই চারপদে বিনোদ চন্দ্র সরকার’ শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি বিনোদকে  দুদক থেকে বাঁচাতে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন মেয়র সাঈদ খোকনের স্বাক্ষরের পর দুককে যাচ্ছে। বিষয়টি টক অব দ্যা ডিএসসিসিতে পরিণত হয়েছে।

ডিএসসিসির একটি সূত্র জানায়,অনিয়মের আশ্রয় নেয়া বিনোদ চন্দ্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগপত্র দায়ের করেন চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আর এই অভিযোগের সবগুলো মিথ্যা বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করছে, ডিএসসিসির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিনোদ সুকৌশলে কর্তাদের হাত কছলাইয়া নিজের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। স্বাক্ষর হলেই প্রতিবেদন দুদকে জমা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। 

তদন্তে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন,দুদকের  অভিযোগের তদন্ত  তাদের করাই ভাল ছিল। সংস্থার দুর্নীতিবাজকে বাঁচাতে সংস্থার খাম খেয়ালী থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। আর অনিয়ম না করলে তার বিরুদ্ধে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুদকে অভিযোগের প্রশ্নই উঠতো না বলে জানান তিনি। বিনোদ চন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসিতে) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। 

কমিটির প্রধান ডিএসসিসির প্রধান বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা (উপ-সচিব) এ কে এম লুৎফুর রহমান সিদ্দিকী বলেন,তদন্ত শেষে প্রতিবেদন ডিএসসিসির সচিবের দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে,২০১৫ ও ২০১৭ সালে  বিনোদ চন্দ্রের অনিয়মের কারণে চাকরি থেকে সায়মিক বরখাস্ত করা হয়। পরে চলতি বছরের ২০ মে তার বিরুদ্ধে ফের অভিযোগ উঠায় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয় দুদক।  
ডিএসসিসির নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে নিদোর্ষ প্রমাণিত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তবে প্রতিবেদনটি এখনও দুদকের কাছে জমা দেয়া হয়নি।

সূত্র জানায়,ডিএসসিসির নিম্নমান সহকারী-কাম-মুদ্রাক্ষরিক বিনোদ দীর্ঘ ২৩ বছর একই বিভাগে কর্মরত থাকায় ভান্ডারে চরম দুর্নীতির আখড়া,ক্ষমতার অপব্যবহার,অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা, বিভিন্ন ঠিকাদারের সঙ্গে সাব-কন্টাকে ব্যবসা করে বর্তমানে ১৬ গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডের ২টি পদ, ১৩তম গ্রেডের একটি পদ ও মূল পদসহ ৪টি পদ দখল করে বিভিন্ন উপায়ে ঘুষ নেয়ার শীর্ষ রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, ভান্ডার রক্ষক এর নথিপত্র তৈরি করার জন্য আর্থিক ও প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য বাজার যাচাই-বাছাই করে নথি উপস্থাপন করার সময় প্রতিটি নথি থেকে ৭ ভাগ নিয়ে থাকেন। এরপরে নথি অনুমোদনের পরে ইজিপি টেন্ডার আহ্বান করার জন্য  ভাগ নেন। টেন্ডারের কার্যক্রম অর্থাৎ নোটিশফিকেশন এওয়ার্ড দেয়ার সময় প্রতিটি নথি থেকে ৫ হাজার টাকা নেন। এছাড়া কার্যাদেশ ইস্যু করার সময় প্রতিটি নথি থেকে ৩ ভাগ নেন।

একাই চারটি পদের দায়িত্ব পাওয়ায় প্রতিটি পদ থেকে মাসে উৎকোচ নিয়ে থাকেন ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা। গুদাম হতে বিভিন্ন বিভাগের চাহিদাকৃত ইন্ডেন্টের মালামাল বিতরনের সময় পরিমান কেটে দেয় এবং মালামাল নাই বলে ইন্ডেন্টের মধ্যে কেটে দেন। মওজুদ বহি পরীক্ষা করে দেখলে এর সঠিক প্রমাণ পাওয়া যাবে।

অভিযোগ উঠেছে, ভান্ডার রক্ষক (সাধারণ), ভান্ডার রক্ষক (মোটরপাটর্স) এবং ব্যক্তিগত সহকারীর পদসহ মোট ৪টি পদ দখল করে ঠিকাদারদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করেন তিনি। এই ঘুষের টাকা মেয়রসহ প্রধান ভান্ডার কর্মকর্তাসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের পকেটেও যাচ্ছে। এই ঘুষের টাকা সরবরাহ করছেন ডিএসসিসির মেয়রের আস্থাভাজন দু’জন ঠিকাদার। তারা হলেন,জসিম উদ্দিন সবুজ ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। আর দুই ঠিকাদার এককভাবে ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের টেন্ডার জালিয়াতি, ভান্ডার বিভাগের মশার ওষুধসহ গাড়ির টায়ার ক্রয়,কোদাল টুকরি ক্রয়সহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন বিনোদ।

জানা যায়, দু’জন ঠিকাদারের সঙ্গে রফাদফা করে বাকি ঠিকাদারদের জিম্মি করার অভিযোগে ৪ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক বিনোদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, বিনোদ চন্দ্র দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার,স্বেচ্ছাচারিতা,বিভিন্ন ঠিকাদারের সঙ্গে সাবকন্টাকে ব্যবসা করেন। 

এনব বিষয়ে বিনোদ চন্দ্র সরকার বলেন,আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা,বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর। এসব অভিযোগের বিষয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। এছাড়া প্রশাসন যেখানে কাজ করতে বলে আমি সেখানেই কাজ করি। আমাকে কি কারণে চারটি দায়িত্ব দেয়া  হয়েছে তা সচিব স্যার জানেন।
 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব (যুগ্ম সচিব) মো.মোস্তফা কামাল মজুমদার বলেন, ভান্ডারের বিনোদ চন্দ্রের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে। আর প্রতিবেদনটি ডিএসসিসির সহকারী সচিব-২ কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি। পরে কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,প্রতিবেদনটি এখনও আমাদের হাতে রয়েছে এটি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার হাত হয়ে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের কাছে যাবে। মেয়রের স্বাক্ষর শেষে প্রতিবেদনটি দুদকে জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি। 

টিএইচ/বিএস 
 

আরও পড়ুন