• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০১৯, ১১:৪৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৭, ২০১৯, ১১:৪৯ এএম

ঢাকা দুই সিটির কাউন্সিলরদের নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন

ঢাকা দুই সিটির কাউন্সিলরদের নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন

ক্যাসিনো কাণ্ডে দুই সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কাউন্সিলর জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আওয়ামী যুব লীগে। দলটির ইতিহাস-ঐহিত্য ধরে রাখার স্বার্থে ক্যাসিনোকে ইস্যু করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শুদ্ধি অভিযান চলছে। এর মধ্যে ডিএনসিসির ১৪ কাউন্সিলর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩ কাউন্সিলর এখন দৌড়ের ওপর রয়েছেন।  

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ক্যাসিনোর সাথে জড়িত থাকায় আগেভাগেই দেশ থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। ২০ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ রতন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মানিকসহ সাঈদ খোকনের আস্তাভাজন কয়েকজন কাউন্সিলরকে আর আগের মতো সিটি করপোরেশনে দাপটে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে না। এ নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জণ ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ বলছেন, মেয়রের আস্তাভাজনরা গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন।

শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে মূল ধারার নেতা-কর্মীরা দলের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জায়গা পেতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক ভিপি রফিকুল ইসলাম পিন্টু। তিনি বলেন, শুধু ক্যাসিনো নয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুই মেয়রের আশেপাশে থেকে যারা টেন্ডারাবাজি, মার্কেটের দোকান বরাদ্দ, বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি, নগরীর বিভিন্ন স্থানে পশুরহাট নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্মের সাথে জাড়িত তাদের দলীয় পদ থেকে সরানো উচিত। তাদের কারণেই দল সমালোচিত হচ্ছে। এরা দলে থাকলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা কলঙ্কিতত হবে। সময় এসেছে এসব সুবিধাবাদীদের দল থেকে উৎপাটন করার। 

জানা গেছে, দুর্নীতিবাজ কাউন্সিলরদের পাশে নেই ঢাকা দুই সিটির মেয়র। তবে সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন কাউন্সিলরদের সাথে বৈঠক করে বলেছেন, দক্ষিণ সিটির কোনও কাউন্সিলর গ্রেফতার হবে না। তাদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন, আপনারা নির্ভয়ে কাজ করে যান। তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে তিনি দুর্নীতিবাজ কাউন্সিলরদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, তার আস্কারা পেয়ে দুর্নীতিবাজ ওয়ার্ড কাউন্সিলররা ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেগাপ্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির রাম-রাজস্ব বানিয়ে রেখেছে।

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আকতকুল ইসলামে সম্প্রতি ১৪ কাউন্সিলরকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন। টানা তিন থেকে ৬ বোর্ডসভায় উপস্থিত ছিলেন না তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ১৪ কাউন্সলদের চিঠির জবাব সন্তোষজনক না হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। এরপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।

মেয়র আতিকুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, যারা বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন তাদের চিঠি পাঠিয়েছি। তাদের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ‘পদ’ পদবি ব্যবহার করে, স্থানীয়ভাবে যারা জমি দখল, চাঁদাবাজি, ফুটপাত দখল, সন্ত্রাসীদের সাথে আঁতাত করে অর্থবিত্তের মালিক বনে গেছেন এসব কাউন্সিলরদের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারই বহির্প্রকাশ ক্যাসিনো কাণ্ড। এ কারণে দলীয় লোকদের শৃঙ্খলা-ভঙ্গের অভিযোগ থাকায় দলের মধ্যে দুর্নীতি পরায়ন কাউন্সিলরসহ অনেক দলীয় প্রভাবশালী নেতা পদ-পদবি হারাতে পারেন। এ ধরনের বার্তা এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে বিশেষ করে যুবলীগের চেয়ারম্যানের অপসারণ, ক্যাসিনো সম্রাট, খালেদ,শামীমকে বহিষ্কার করার কারণে কাউন্সিলররা এখন সর্তক হয়ে গেছেন। 

এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দু’জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) মানি লন্ডারিং মামলায় কারাভোগ করছেন। ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব জমিদখল, চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, ১৪ কাউন্সিলরকে কারণ দর্শানোর নোটিশের মাধ্যমে একটা বার্তা দেয়া হয়েছে। আর সেই বার্তা হলো দলীয় শুদ্ধি অভিযান। তবে কারণ দর্শানো নোটিশের মাধ্যমে কাউন্সিলররা আগামী বোর্ডসভায় উপস্থিত হওয়ার বিষয়ে গাফিলতি করবেন না আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ত্যাগী দলীয় নেতাদের বাছাই করে আগামীতে সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দেয়া সহজ হবে।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম গত ২৩ অক্টোবর ১৪ কাউন্সিলরকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েই ব্যাপক আলাচনায় এসেছেন। তবে কয়েকজন কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক জাগরণকে বলেন, সিটি করপোরেশনের ম্যানুয়াল অনুসারে ৫ বছরে ৫৪টি বোর্ডসভা হওয়ার কথা। সেখানে হয়েছে মাত্র ২০টি বোর্ডসভা। আর সিটি করপোরেশনের কয়েকটি কমিটি থাকার কথা সেখানে ব্যতয় ঘটানো হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মেয়রের বিরুদ্ধে। 

ঢাকা উত্তর সিটির ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমার জানামতে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৩টি বোর্ড সভা হয়েছে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক বোর্ড সভা করেছেন, বর্তমান মেয়রও বোর্ড সভা  করছে। সভা নিয়ে কোনও বাধ্য-বাধকতা নেই। কি কারণে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হলো এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওনি নগরপিতা। নগরীকে গতিশীল করার জন্য হয়তো কাউন্সিলরদের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছেন। এ কারণে নোটিশ দিয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। 

ঢাকা উত্তর সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান দৈনিক জাগরণকে বলেন, কারণ দর্শানো নোটিশের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বলেছেন, এটা কেনো করেছেন সেটা মেয়র ভালো্ই জানেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কাউন্সিলর দৈনিক জাগরণকে বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং দলে ভাবমূর্তি নষ্ট করার কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটাকে সাধুবাদ জানাই। সিটি করপোরেশন মিনি পার্লামেন্ট। এখানেও জাতীয় সংসদেও ন্যায় মাসিক সভা হয়। কমিটি থাকে কিন্তু মেয়রের কাছে আমার প্রশ্ন তিনি কয়টা কমিটি করেছেন। কোন রেজুলেশন করেছেন কি?

কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া কাউন্সিলরদের মধ্যে রয়েছেন-৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেগম মেহেরুন্নেসা হক, ৭ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর খালেদা বাহার বিউটি, ১২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার ডেইজী, ১৬ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলোরা পারভীন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুর রউফ, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ রজ্জব হোসেন, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাছির, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মুজিবুর রহমান, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান, ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুল ইসলাম রতন, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈমুর রেজা, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোতালেব মিয়া।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন- ২০০৯ এর ধারা- ১৩ এর উপধারা- ১  এ বলা হয়েছে, ‘‘মেয়র এবং কাউন্সিলর নিজ পদ হতে অপসারণ যোগ্য হবেন, যদি তিনি যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া পরপর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন।

টিএইচ/এসএমএম
 

আরও পড়ুন