• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০১৯, ০৩:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৬, ২০১৯, ০৩:২৩ পিএম

ভয়ঙ্কর দুর্বৃত্তায়নের চক্রের কবলে দেশ : সুলতানা কামাল

ভয়ঙ্কর দুর্বৃত্তায়নের চক্রের কবলে দেশ : সুলতানা কামাল
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল-ফাইল ছবি

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন,  বহু ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ আমরা স্বাধীন করেছি, সেই দেশটিকে আজকে আবার দেখছি ভয়ঙ্করভাবে একটা দুর্বৃত্তায়নের চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে।

শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর তোপখানার বিএমএ মিলনায়তনে জাতীয় কনভেনশনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী সকল প্রকল্প’ বাতিলসহ ৫ দফা দাবিতে জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহের সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ,  ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। 

সুলতানা কামাল বলেন, শুধু একটা ভূখণ্ড দখলের জন্য যুদ্ধ করিনি। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম আমাদের সামনে কতগুলো নির্দিষ্ট নৈতিক নির্দেশনা ছিল। আমরা ভেবেছিলাম এই দেশটা সব মানুষে দেশ হবে। সেখান প্রাণ, প্রকৃতি, মানুষের মর্যাদা, ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার ৪৮ বছরে দাঁড়িয়েও আমাদের উপলব্ধি করতে হচ্ছে সেসবের সুরাহা আমরা করতে পারিনি। সেই জায়গা থেকে আমরা নিজেরাই সরে গেছি বা সেই জায়গায় পৌঁছাবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছি। এখন সেই বাধা অপসারণ করার একটা নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্ব আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে নৈকট্য বোধ করি, আনুগত্য বোধ করি তাদের।

এই সরকার জনবান্ধব ও নারীবান্ধব সরকার থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা এখন শুধু ব্যবসা কিংবা ব্যবসায়ী বান্ধব সরকারে পরিণত হয়েছে।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে বিপদগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। এই বিপদ মোকাবেলায়র জন্য উপকূল হচ্ছে সবেচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই উপকূল অঞ্চলে জলবায়ু মোকাবেলার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী না করে সরকার করছে উল্টো কাজ।

তিনি বলেন, সরকার বিশ্ব দরবারে গিয়ে বলছে জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কথা, আর দেশের মধ্যে নদী, বন, মানুষ বিনাশী সকল প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশেকে জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে আরও ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে নিক্ষেপ করছে। উপকূলজুড়ে কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত প্রায় ২২টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আয়োজন করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পানি অধিকার নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। উজানে ভারতে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করেছে। এসব কারণে আমাদের পানির ন্যায্য প্রাপ্যতা নিয়ে আন্দোলন করতে হবে।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এমন এক সময়ে আমাদের কনভেনশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশে উন্নয়নের একটা বিশাল জোয়ার চলছে, উন্নয়নের জোয়ার একটা ভয়ঙ্করের জোয়ারে পরিণত হয়েছে। বিষাক্ত জোয়ারে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের নামে বাংলাদেশে সরকার একটা উল্টো যাত্রা করছে।

তিনি বলেন, যদি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থাকতো তাহলে আমাদের আন্দোলন এত দীর্ঘ আন্দোলনের দরকার হত না, কারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষ মত, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, তত্ব ও বিশেষজ্ঞ মত, সেগুলো গুরুত্ব পায়। সেগুলো গুরুত্ব পেলে সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্প বহু আগেই বাতিল হত, জনবহুল দেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলও হতো। 

তিনি বলেন, সরকার ক’দিন পর পর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য আবার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এই যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এর ফলাফল আমরা সবাই জানি। কিন্তু কেন এটা সরকার করছে? করছে এই কারণে, সরকার যে ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা করছে তাতে তার বিদ্যুতের দাম বাড়াতেই হবে। কারণ তার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ নয়, বিদ্যুতের নামে দেশি-বিদেশি, চীন, ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানকে ব্যবসা দেয়া। আর তাদের আধিপত্যের বিনিময়ে নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। আর দেশের ভেতরে বৃহত্তর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আছে তাদের লুণ্ঠন, দুর্নীতি-আগ্রাসন, জমি দখল সেগুলোকে নিশ্চিত করা।

তিনি জানান, জাতীয় কমিটির মহাপরিকল্পনার খসড়া সরকারকে দেয়া হয়েছে। সরকার এখন পর্যন্ত এটি নিয়ে কোনও আলোচনা করেনি। জনগণের স্বার্থে বিকল্প মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই সামনের দিনে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের কর্মসূচি থাকবে। আমরা জানি ভয়-ভীতি-নিপীড়নের চেষ্টা হয়। আমরা এটাও জানি এসব মোকাবেলার পথ হচ্ছে আরও বেশি সোচ্চার ও সক্রিয় হওয়া। তারা যত বেশি ভয় দেখাবে আমাদের আরও বেশি সবর ও সোচ্চার হতে হবে।

টিএস/এসএমএম

আরও পড়ুন