• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২০, ০৯:৩৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১২, ২০২০, ০৯:৪৭ এএম

রাজধানীর রেললাইনের দু’পাশ অপরাধীদের অভয়ারণ্য

রাজধানীর রেললাইনের দু’পাশ অপরাধীদের অভয়ারণ্য

বিমানবন্দর ও রেলস্টেশন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ৬টি স্থান জনসাধারণের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের পূর্ব দিক ও কমলাপুর ওভার ব্রিজে মাদকসেবী ও ছিন্নমূলের দৌরত্ব বেড়ে চলেছে। অহরহ ঘটছে ছিনতাই ও মারপিটের ঘটনা। ভোরে ও সন্ধ্যায় নারী যাত্রীদের জন্য এই রাস্তা নিরাপদ নয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে টহল বাড়িয়েছে রেল পুলিশ।

ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনের পূর্বদিকে তাকালেই চোখে পড়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরিত্যক্ত মালগাড়ি। পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত এইসব গাড়ি দীর্ঘ দিন ধরে এখানে ফেলে রাখা হয়েছে। এই সুযোগে এসব গাড়ি ছিন্নমূলদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। সেখানে মাদক সেবন ও বিক্রিসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে। 

ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে চলে গেছে দুটি সরু রাস্তা। পথচারী ও স্থানীয়রা সাধারণত পায়ে হেঁটেই রাস্তাটিতে চলাচল করেন। স্থানীয়রা বলছেন, সন্ধ্যার পর কুর্মিটোলা ও শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে এ পথে যাতায়াতের সময় প্রতিনিয়ত তারা ছিনতায়ের কবলে পড়ছেন। এছাড়া সন্ধ্যা নামলেই এখানে মাদক বিক্রেতা ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ব বাড়তে থাকে।

বিমানবন্দর ও তেজগাঁও রেলস্টেশনের পূর্বদিক থেকে দক্ষিণখান যাওয়ার রাস্তাটির চিত্রও একই। সেখানে সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় ছিনতাকারীদের অবাধ বিচরণ। এদিকে

কমলাপুর রেলস্টেশনের ওভার ব্রিজ দিয়ে চলাচল করেন মুগদা, মানিকনগর, মতিঝিল ও আরমবাগের বাসিন্দারা। সন্ধ্যার নামলেই ব্রিজটি ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সেখানে নারী পথচারীরা বেশি হেনস্তার শিকার হন।

পাশাপাশি উত্তরা থেকে শুরু করে কদমতলীর ওয়াসা রেললাইন পর্যন্ত দু’পাশে রেলওয়ের ৩৩ দশমিক ২ কিমি জায়গায় গড়ে উঠেছে ছোট বড় কয়েকশ বস্তি। যা চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধের কেন্দ্রবন্দিুতে পরিণত হয়েছে। শুধু রাজধানীর টঙ্গীই নয়, গাজীপুরসহ সারা দেশের ট্রেনস্টেশন ও রেললাইনের পাশে দিন দিন বেড়েই চলেছে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড।

খিলক্ষেত-কুড়িল ও শেওড়া এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, সন্ধ্যার পর বনানী থেকে বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার পথ এমনকি প্রধান সড়কেও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। সড়কের আশপাশ অন্ধকার। সন্ধ্যার পর রেললাইনে ও সড়কের আশে-পাশের ঝোঁপ মাদকসেবী ও যৌনকর্মীদের অবস্থানস্থলে পরিণত হয়। 

এলাকায় ১০ বছর ধরে বাস করছেন এক ভবঘুরে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কমলাপুর, বনানী এবং বিমানবন্দর স্টেশনের অনেক ভবঘুরের আস্তানা এটি। নেশা করার পাশাপাশি সন্ধ্যার পর এখানে পথচারীদের টার্গেট করে ছিনতাই করা হয়। ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল, হাতঘড়ি, গলার চেইন, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস কেড়ে নেয়া হয়। অনেকেই আবার অন্য জায়গায় অপরাধ করে এখানে এসে আশ্রয় নেয়।

নাসির নামে এক পথচারী বলেন, নির্জন এ পথ দিয়ে চলাচল করতে ভয় লাগে। ভবঘুরে, নেশাখোররা যেন পুরো রেললাইন অপরাধের আখড়া বানিয়ে ফেলেছে। ভয়ে কিছু বলতেও পারি না। শেওড়া, কালশী, জোয়ার সাহারার বাসিন্দাদেরই বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

স্থানীয়রা লোকজন বলছেন, মূলত সন্ধ্যার পর টোকাই, ভবঘুরেরা এখানে বেশি আসে। বনানী থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটারের এই সড়কটিতে যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করলেও পথাচারীরা পড়েন বিপদে। ফুটপাত জুড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের বাতি থাকলেও তা পথচারীদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।  ঢাকার অন্য প্রধান সড়কে ৫২ ফিট পরপর লাইট থাকলেও এ সড়কে আছে ৮৪ ফিট পর পর। তাই গাড়ির আলোই পথচারীদের একমাত্র ভরসা।

গুলশান জোনের  উপ-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, এলাকাটি সংরক্ষিত। বিশেষ করে বিভিন্ন বাহিনীর অফিস, বাসাবাড়ি। পাশেই রয়েছে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা। তারপরও পুলিশের নিয়মিত টহল থাকে। ইতোমধ্যে অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের টহলও বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি এসব স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হচ্ছে।

এ বিষয়ে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান সরওয়ার বিন কাশেম সাংবাদিকদের জানান, ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন ও বিমানবন্দর সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি জন্য এক প্রকার ঝোঁপ-ঝাড় রয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এই এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাই, চুরিসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এইচএম/একেএস

আরও পড়ুন