• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ১০:০০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ১০:০০ এএম

হাতিরঝিলে বিষফোড়া

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া স্থবির

বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া স্থবির
রাজধানীর হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবন - ফাইল ছবি

রাজধানীর হাতিরঝিলের বিষফোড়া হিসেবে আলোচিত ‘বিজিএমইএ ভবন’ ভাঙার প্রক্রিয়ার স্থবিরতা নিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মুখ এখন বন্ধ। গণমাধ্যমের সঙ্গে এ বিষয়ে তারা কোনো কথা বলতে নারাজ। সরেজমিনে রাজউক কার্যালয়ে তাদের পাওয়া গেলেও ব্যস্ততার অজুহাতে দেখা করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন তারা। কবে নাগাদ এ ভবন অপসারণ বা ভাঙা হবে এ বিষয়ে পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকেও মিলছে না কোনো সঠিক তথ্য।  

উচ্চ আদালতের সর্বশেষ সময় বেঁধে দেয়ার পর ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবন খালি করে দেয়া হয়। ওইদিনই তালা ঝুলিয়ে ভবনের দখল নেয় রাজউক। মূলত, এরপর থেকেই ভবনটি ভাঙতে ঠিকাদার নিয়োগের নামে চলছে শুধুই সময় ক্ষেপণ। যদিও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গত বছরের ১৮ অক্টোবর রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, দুদিনের মধ্যেই বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে। মন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ঠিকাদার নিয়োগের কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে। 
 
গত ১ ডিসেম্বর এ বিষয়ে রাজউক কর্মকর্তা ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) রায়হানুল ফেরদৌস দৈনিক জাগরণকে জানিয়েছিলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হবে। তার এমন বক্তব্যের পর গত দেড় মাসেও ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা জানান। 

জানা গেছে, ভাঙার প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতা সরে যাওয়ায় পর গত ডিসেম্বরেই দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতা ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজকে এ কাজ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই উদ্যোগের দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিই সম্পাদন করতে পারেনি রাজউক।

রাজউকের অপর একটি সূত্র জানায়, বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে রাজউকের দরপত্র আহ্বানের পর সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স, ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ, পি অ্যান্ড এস এন্টারপ্রাইজ, চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ এবং সামিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়। তারা ভবন ভাঙতে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার দর জমা দেয়। পূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স ভবন ভাঙার কাজ থেকে সরে দাঁড়ায়। আর এর পরই দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতা ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক। অজ্ঞাত কারণে সেই প্রক্রিয়াও থমকে যায়। 

প্রসঙ্গত, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে ২০১০ সালে আদালতে অভিযোগ আনেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, ভবন ভাঙার বিষয়ে সর্বশেষ আদালত যে সময় দিয়েছিলেন, তা অনেক আগেই শেষ হয়েছে। ভবনটি ভাঙতে যদি রাজউক আরও সময় নেয় বা গড়িমসি করে তবে তিনি আবারও আদালতের শরণাপন্ন হয়ে আদালত অবমাননার মামলা করতে বাধ্য হবেন।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করেন। রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে সেটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ৬ মাস এবং পরে ৭ মাস সময় দেয়া হয়। সর্বশেষ গত বছর আবারও এক বছর সময় বাড়ানো হয়। সেসময় ভবিষ্যতে আর সময় চাইবে না বলে মুচলেকা দেয় বিজিএমইএ। সেই সময় শেষ হয়েছে গত ১২ এপ্রিল। এরপর ১৬ এপ্রিল বিজিএমইএ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।

এমএএম/ এফসি