• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০১৯, ০৯:৪২ পিএম

গোয়েন্দা নজরদারিতে শ্রমিক সংগঠনের প্রবীণ নেতারা

গোয়েন্দা নজরদারিতে শ্রমিক সংগঠনের প্রবীণ নেতারা
কালশীতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বিক্ষোভ - ফাইল ছবি

 

গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে শ্রমিক সংগঠন সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনে তারা সম্পৃক্ত করছে। তারা  ৪/৫টি মোটরসাইকেলে চড়ে রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী, কালশী ও তার পার্শ্ববর্তী সাভার,আশুলিয়া,টঙ্গীতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের কর্মস্থল থেকে রাস্তায় নামানোই হচ্ছে তাদের কাজ। 

তারা বিভক্ত হয়ে উল্লেখিত এলাকায় গিয়ে পোশাক শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছে বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে গোয়েন্দারা একটি নামের তালিকাও করেছেন। ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ৫/৬ জনকে গ্রেফতারও করেছে।তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

উস্কানিতে সংশ্লিষ্ট অন্যদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী খুঁজছে। তাদের মধ্যে টঙ্গী পশ্চিম এলাকায় কালা হাশেমের নেতৃত্বে রয়েছে সোহেল, আরমান, খোরশেদ। এক সময় হাশেম বিএনপির একনিষ্ট কর্মী ছিলেন। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের সময়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করে এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এরা মোটরসাইকেলে চড়ে শ্রমিকদের উস্কানি দিচ্ছে। সরকার ঘোষিত সর্বশেষ মজুরি কাঠামোকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলন ও বিক্ষোভ আজ রোববারও অব্যাহত রয়েছে। সরকার নির্ধারিত নতুন বেতন কাঠামো সমন্বয় ও বাস্তবায়নের দাবিতে সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ চলছে। এ দাবিতে গত সাত দিন  ধরে আন্দোলন করে আসছেন শ্রমিকরা।
  
এছাড়া উত্তরা থেকে আবদুল্লাহপুর, দক্ষিণ খান ও বিমান বন্দর এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় জাফর, রাশেদ, শিউলী ও মিনা বেগম। এরাও মোটর সাইকেলে করে শ্রমিকদের কর্মস্থল ও বাসায় গিয়ে আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

অন্যদিকে আশুলিয়া, জামগড়া ও সাভার এলাকায় রয়েছেন জামাল হোসেন, ইমন, খাদিজা বেগম ও মনির হোসেন। এরা মোটর সাইকেলে চড়ে বিক্ষোভে যাওয়ার জন্য শ্রমিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করে থাকে। কর্মস্থল থেকে তাদের রাস্তায় নামিয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে থাকে। এছাড়া মিরপুর ও কালশী এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের নেতা আল-আমিনের নেতৃত্বে রয়েছেন ৪/৫ জন। এরা স্থানীয় মিরপুর ১, টেকনিক্যাল, সাড়ে ১১, পূরবীসহ এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিক বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন।
     
গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, আন্দোলনে উস্কানি দাতা হিসেবে সম্পৃক্ত অধিকাংশই স্থায়ী ভাবে কোনও গার্মেন্টসে চাকরী করছে না। তাদের কাজ হচ্ছে, কোথাও গার্মেন্টস শ্রমিকদের মধ্যে বেতন ভাতা বা আনুসাঙ্গিক বিষয়ে অসন্তোষ দেখা দিলে সেখানে  গিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, শুধু মোটরসাইকেল বাহিনী নয়, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের প্রবীণ নেতাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এরা হচ্ছেন, বাহেরানে সুলতান বাহার, মোশরেফা মিশু, মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, বজলুর রহমান বাবলু, আমিনুল হক আমিন ও মতিন মাষ্টার। সূত্র আরও বলেছে, উল্লেখিত নেতাদের মোবাইলফোনে আঁড়ি পাতা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবদুল মতিন মাষ্টার ও মাহবুবুর রহমান ইসমাঈলের মোবাইলফোনের কথা রেকর্ড করা হয়েছে। তারা দুজন আন্দোলনরত শ্রমিকদের উস্কানি দেয়ার তথ্য প্রমাণ গোয়েন্দারা সংরক্ষণ করেছেন বলে দাবি করেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা। 

এদিকে পোশাক শ্রমিকরা কাজে না ফিরলে মজুরি তো দেওয়া হবেই না বরং ওইসব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। 

পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের নামে যারা ব্যক্তিস্বার্থ বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। গত শনিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলনের পেছনে কেউ উস্কানি দিয়ে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে কিনা সেটা খতিয়ে  দেখতে গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শ্রমিকদের দাবি বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়, বিজিএমইএ কাজ করছে। খুব শিগগির তাদের দাবি মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে। 

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যৌক্তিক হারে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোববার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এ ঘোষণা  দেন। এর আগে সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে শ্রমিকদের স্বার্থে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর  গ্রেডে মজুরি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

শনিবার আশুলিয়ায় বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার আশুলিয়া ও সাভারে বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়ার জামগড়া ও নরসিংহপুরের অন্তত ৫০টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এলাকায় পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন রয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক শেষে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য দূর করা হয়েছে। বৈঠক শেষে আজ রোববার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রী নতুন বেতন গ্রেড ঘোষণা করেন। এতে চিকিৎসা, যাতায়াত এবং বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়াও বেসিক বেতনের সঙ্গে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা দেন। বেতনের এই নতুন গ্রেড ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। যা ফেব্রুয়ারিতে বেতনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।  

এইচএম/বিএস