• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০১৯, ০৯:৫৭ পিএম

ত্রুটিপূর্ণ ফ্লাইট, যাত্রী কমছে অভ্যন্তরীণ রুটে

ত্রুটিপূর্ণ ফ্লাইট, যাত্রী কমছে অভ্যন্তরীণ রুটে
ইউএস বাংলার একটি এয়ারক্রাফট -ফাইল ছবি

 

আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলাসহ অন্যান্য কোম্পানির ফ্লাইট টাইম সিডিউল ধরে রাখতে পারছে না। শুধু তাই নয়, কয়েকটি কোম্পানির ‘লক্কর-ঝক্কর’ ফ্লাইটে কারিগরি ত্রুটির কারণে আকাশপথে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরও রয়েছে। এসব কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী কমতে শুরু করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিছু ফ্লাইট সময়মতো ছেড়ে যেতে পারছে না। এগুলোর মধ্যে ইউএস বাংলা ও বাংলাদেশ বিমানের ‘ড্যাশ’ ফ্লাইটের সংখ্যা বেশি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ফ্লাইটের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যাত্রীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। 

জানা গেছে, গত দেড় মাসে বিমানের বেশ কিছু ফ্লাইট সময়সূচি অনুযায়ী পরিচালনা করা যায়নি। বহরে থাকা তিনটি ড্যাশ এইট- এজিকিউ, এজিডব্লিউ ও এজিআরে প্রায় সময়ই কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ছে। গত ২৫ জানুয়ারি এজিকিউ-এর বড় ধরনের মেরামত ‘সি’ চেকের জন্য ভারতের হায়দরাবাদের জিএমআর অ্যারো টেক কোম্পানিতে পাঠানো হয়। প্রায় দেড় মাস পর গত ৬ মার্চ উড়োজাহাজটি ঢাকায় আসার আগেই আবার বিকল হয়। এজিডব্লিউ প্রতিদিনই টেকনিক্যাল সমস্যায় পড়ে ফ্লাইট সিডিউলে বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। অবশিষ্ট ড্যাশ এইট এজিআর দিয়ে কোনোরকম চলছে অভ্যন্তরীণ ৭টি রুটের ফ্লাইট। এ কারণে প্রতিদিন অন্তত চার-পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। যাত্রী কমতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটে। সব মিলিয়ে আকাশপথে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটের সেবার প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন যাত্রীরা।

এদিকে, ইউএস বাংলার অধিকাংশ ফ্লাইটে ত্রুটির কারণে কোম্পানিটির ইমেজ নষ্টের পাশাপাশি ভ্রমণকেও ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেক নিয়মিত যাত্রী। কারিগরি ত্রুটির কারণে গত এক সপ্তাহে প্রতিদিনই ইউএস বাংলার কোনো না কোনো ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। 
 
আজ বুধবারও (১৩ মার্চ) চাকা ফেটে যাওয়ায় ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করেছে। কক্সবাজার থেকে আসা ড্যাশ-এইট কিউ ফোর হান্ড্রেড মডেলের ওই ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। এতে শতাধিক যাত্রী ছিলেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম একটি সংবাদমাধ্যমকে জানান, উড়োজাহাজটি কক্সবাজার থেকে ওড়ার পর পাইলট দেখতে পান চাকা খুলে নিচে পড়ে আছে। পরে তিনি ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে বিষয়টি জানান।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইউএস বাংলাসহ অভ্যন্তরীণ রুটে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির ফ্লাইট চলাচলে যাত্রীসেবার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী ড্যাশ-৮ ফ্লাইট ‘মুড়ির টিনে’ পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময় ফ্লাইট বাতিলের ফলে যাত্রীরা বেশি ভাড়ায় অন্য এয়ারলাইন্সে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। 

ফ্লাইট অপারেশন সূত্র জানায়, গত সোমবার বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়ার কথা ছিল বিমানের বিজি-৪৯১ ফ্লাইটটির। কারিগরি ত্রুটির কারণে ফ্লাইটটি যথাসময় উড্ডয়ন করতে পারেনি। ৩৪ অন-বোর্ড যাত্রী নিয়ে একসময় সেটি আকাশে ওড়ে। কিন্তু আকাশেই ফের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ঢাকার কন্ট্রোল টাওয়ার সেটিকে রাজশাহী যেতে বারণ করে। ফলে ওই ফ্লাইট ফের ঢাকায় ফিরে আসে। বিকাল ৩টায় বিজি-৪৯১ রাজশাহীর উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। একই দিনে প্রায় ৫ ঘণ্টা বিলম্বে ৫১ যাত্রী নিয়ে রাজশাহী থেকে ছাড়ে ঢাকাগামী বিজি-৪৯২।

এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল আলম বলেন, কিছুটা সমস্যা থাকলেও তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট নিয়মিত হতে শুরু করেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, এয়ারক্রাফটের টেকনিক্যাল সমস্যায় কারও হাত নেই। উন্নত যাত্রীসেবা নিশ্চিতে বিমান বদ্ধপরিকর। কোনো এয়ারক্রাফটে ছোটখাটো সমস্যা হলে আমাদের পাইলটরা সেটা নিয়ে অপারেশনে যেতে চান না। সেফটিকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করেন তারা। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি বিধায় তারা এ কাজ করেন।

এইচ এম/ এফসি