• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২০, ২০১৯, ১১:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২০, ২০১৯, ১১:৪১ এএম

ঈদ টার্গেটে নতুন হচ্ছে লক্কর-ঝক্কর বাস

ঈদ টার্গেটে নতুন হচ্ছে লক্কর-ঝক্কর বাস
বাসের সংস্কার এবং মেরামতের কাজ করছে শ্রমিকরা- ফাইল ছবি

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে এখন রাজধানীর আশপাশে এবং জেলা শহরে অধিকাংশ গ্যারেজগুলোতে চলছে দিনরাত কাজ। এসব গ্যারেজে লক্কর-ঝক্কর ও পুরাতন বাসগুলোকে মেরামত ও রং করে ঈদে যাত্রী বহনের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। সেইসঙ্গে চলছে চালু থাকা বাসগুলোরও সংস্কার এবং মেরামত কাজ। আর এ কাজে গত প্রায় এক মাস ধরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট গ্যারেজ মালিক ও শ্রমিকরা। ঈদ ঘনিয়ে আসায় এখন চলছে গ্যারেজগুলোতে কাজের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি । 

ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে হঠাৎ কিছু রং মাখানো বাস দেখা যাচ্ছে। রং মাখলেও এসব বাসের গ্লাস ভাঙ্গা, লুকিং গ্লাস নাই, সামনের পিছনের বাম্পার খোলা, জানলার কাঁচ অর্ধভাঙ্গা হয়ে ঝুলে আছে, বডি দুমড়ানো-মুচরানো। বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে যাত্রীদের শরীর ভিজে যায়। অন্যান্য বছরের মত এবারও ঢাকার আশপাশের এলাকায় ওয়ার্কশপগুলো এই লক্কর-ঝক্কর পুরানো বাসগুলো মেরামত ও রং করায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। 

গ্যরেজ মালিকরা বলেন, ঈদের আগে প্রতি বছরই পুরাতন গাড়ির মেরামত ও রং করার ধুম পড়ে যায়। তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

পরিবহন শ্রমিকরা জানায়, এক শ্রেণির অতি মুনাফা লোভী গাড়ির মালিকরা ঈদকে টার্গেট করে রাখে। তারাই সুযোগ বুঝে পুরাতন লক্কর-ঝক্কর ফিটনেসবিহীন গাড়ি রং করে রাস্তায় নামায়। এসব গাড়িই মানুষের জন্য মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়ায়। পথিমধ্যে নষ্ট হয়ে সৃষ্টি করে যানজটের। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের সামনে চলাচলের অযোগ্য এসব গাড়ি দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে এক শ্রেণির পরিবহণ মালিকরা। সেবা তো দূরের কথা যাত্রীদের কোন নিরাপত্তা নেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ গাড়িতে।

চালকরা বলেন, গাড়ির মালিকরা ত্রুটিপূর্ণ অকেজো গাড়িগুলো কোন মতে মেরামত, রং চং করে রাস্তায় ছেড়ে দেয়। সেক্ষেত্রে আমাদের করার কিছুই নেই।

মালিক ও পরিবহন নেতারা বলেন, গাড়ির জ্বালানি এবং যন্ত্রাংশের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যবসায় বেশি লাভ হচ্ছে না। দুই ঈদ এবং পূজার সময় যাত্রীদের চাপ বেড়ে গাড়ির সংকট দেখা দেয়। এসময় একটু বাড়তি আয় করতে পুরাতন গাড়িগুলো ঠিক করে রাস্তায় নামানো হয়। এতে যাত্রী সেবাও হলো আমাদের ইনকামও হলো। এছাড়া গাড়ির ফিটনেস থাকলেও রোডে পুলিশকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে পুলিশ নানা ধরনের হয়রানি করতে থাকে। ফলে গাড়িগুলো কোন রকম জোড়া তালি দিয়ে চালানো ছাড়া কোন উপায় নেই।

এদিকে রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডা-মেরুল বালুরমাঠ, কেরানীগঞ্জ কদমতলী, সানারপাড়, রায়েরবাগ, আমিনবাজার থেকে শুরু করে সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার আশপাশের গ্যারেজগুলোতে এমনই চিত্র দেখা যায়। গ্যারেজের শ্রমিকরা জানায়, ভোরে সেহেরির পর থেকেই শুরু হচ্ছে তাদের কাজ। চলছে প্রয়োজনীয় বিরতি দিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত।

গ্যারেজ মালিকরা জানান, আসন্ন ঈদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে ঘরে ফিরবেন দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার অধিকাংশ মানুষ। তাই ঈদে যাত্রীদের চাপ সামলাতে লক্কর-ঝক্কর বাসগুলো মেরামত ও নতুন করে রং করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে মেরামত করা হচ্ছে চালু থাকা বাসের টুকিটাকি সমস্যাও।

জানা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘেঁষে আমিন বাজার, হেমায়েতপুর, সাভার গেন্ডা ও মানিকগঞ্জের বৈতরা, উচুটিয়া ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বেশ কয়েকটি গ্যারেজ। সারাবছর কাজ থাকলেও মাসখানেক ধরে এসব গ্যারেজে চলছে কর্মব্যস্ততা।

স্থানীয় সানি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী সেকেন্দার আলী জানান, এক মাস ধরে কাজের খুব চাপ যাচ্ছে। ঈদের আগেই গ্যারেজে থাকা ৮টি বাসের ৬টির রং করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে হবে। 

একই এলাকার রাব্বি মটরসের এক শ্রমিক জানান, তাদের এখানে ৬টি বাসের অন্যান্য কাজ শেষে এখন চলছে রং করার কাজ। 

চাঁন মিয়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক চাঁন মিয়া জানান, রং ছাড়াও বাসগুলোর ছোট-খাটো কাজ করাচ্ছেন বাস মালিকরা। সব বাস মালিকদের টার্গেট ঈদের যাত্রী। তাই যেকোনো মূল্যেই ২০ রোজার মধ্যে যাবতীয় কাজ শেষ করতে হবে।

এদিকে বাড্ডা মেরুল, কুড়িল বিশ্বরোড ও আবদুল্লাহপুর, দক্ষিণখান, আশুলিয়া বেড়িবাঁধের পাশে প্রতিটি গ্যারেজ ঘুরে দেখা গেছে যেসব বাসে মেরামত ও রং করা হচ্ছে তার অধিকাংশ বাসেরই ফিটনেস নেই। ফিটনেসবিহীন এসব বাস চাকচিক্য করে মহসড়কে ঈদের যাত্রী বহনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব বাস মূলত স্থানীয়ভাবে গার্মেন্টস কর্মীদের আনা-নেয়া করে। কিন্তু ঈদে মহাসড়কে নামানো হলে দুর্ঘটনার হার বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা রয়েছে।

নতুনের মোড়কে ফিটনেস ছাড়া বাসের বিষয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল আলম বলেন, মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচলের ওপর আমরা বিশেষ কোনো অভিযান পরিচালনা করি না। তবে যেসব যানবাহন প্রয়োজনীয় কাগজ দেখাতে পারে না, সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে।

এইচ এম/টিএফ