• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০১৯, ০৮:৩১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৯, ২০১৯, ০৮:৩১ এএম

তবুও মিটারে যায় না সিএনজি অটোরিকশা

তবুও মিটারে যায় না সিএনজি অটোরিকশা
যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ সিএনজি অটোরিকশা চালকরা; ছবি- দৈনিক জাগরণ


রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের সামনে শুক্রবার সকালে ৩০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে ছিল দুটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা। এই সময়ের মধ্যে তিনজন যাত্রী এসেছেন। তিনজনই মিটারে যেতে চেয়ে ফিরে যান।

সিএনজি চালক আনোয়ার জানান, রাইড শেয়ারিং অ্যাপস আসার পর মানুষ সিএনজি বিমুখ হয়ে গেছে। যে কারণে সিএনজি চালকরা বিপদে।

সিএনজি চালক মোস্তাফিজ বলেন, সারাদিনের জন্য সিএনজি জমা লাগে ৯০০ টাকা। কিন্তু মালিকরা আমাদের কাছ থেকে ১১০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। এরপর সারাদিনের জন্য গ্যাস লাগে ৩০০ টাকার। সারাদিনের নিজের লেবার খরচ, খাওয়া-দাওয়া আছে। মিটারে গেলে লোকসান মিস নাই। আগে যদি সারাদিনে ১০টা ট্রিপ মারতাম এখন সেটা হয়ে গেছে ৫/৬টা। আগে সব খরচ বাদ দিয়ে সারাদিনে ১২০০/১৫০০ টাকা ইনকাম করলেও এখন আয় হয় ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।

তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডে পাওয়া যায় সিএনজি অটোরিকশা বাদশা মিয়াকে। তিনি বলেন, এত সব খরচের মধ্যে যদি সরকার নির্ধারিত মিটারে চলাচল করি তাহলে কীভাবে পোশায়? মিটারে গেলে পেশা ছেড়ে দিতে হবে।

২০১১ সালে সিএনজি অটোরিকশার সরকার নির্ধারিত কিলোমিটার প্রতি ভাড়া বাড়িয়ে ৭ টাকা ৬৪ পয়সা এবং বিরতিকালীন চার্জ ১ টাকা ৪০ পয়সা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ভাড়া ও জমা বাড়ানো হয়। ২০১৫ সালে সিএনজির জমা ৯০০ টাকা এবং যাত্রীদের জন্য প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়া ৪০ টাকা, পরে প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা এবং বিরতিকালীন চার্জ প্রতি মিনিটে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কোনো সিএনজি চালক এই ভাড়া একদমই মানেন না। বরং তারা তাদের নিজেদের ইচ্ছে মতো যাত্রীদের কাজ থেকে ভাড়া আদায় করেন।

রাজধানীর বনানী থেকে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে যেতে সিএনজির অপেক্ষায় ছিলেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, সিএনজি থেকে নির্ভরশীলতা এখনও ছাড়তে পারিনি। এই দেখেন, কয়েকটা সিএনজিকে ডাকলাম, কিন্তু তারা মিটারে যাবে না।

এ প্রতিবেদকের সাথে কথা শেষ করে তিনি উবারের প্রাইভেট কারে চড়ে গন্তব্যে রওয়ানা দেন। যাবার সময় তিনি বলেন, দেখছেন তো, কোনো ঝামেলাই নেই।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অনুসারে অটোরিকশা নৈরাজ্য চিত্রে উঠে এসেছে সিএনজি অটোরিকশা চুক্তিতে চলে ৯৮ ভাগ, বকশিশ দাবি করে ৯২ ভাগ, পছন্দের গন্তব্যে যায় না ৮৮ ভাগ, মিটারবিহীন চলে ৬২ ভাগ।

‘প্রতিস্থাপনের পর কেমন চলছে অটোরিকশা?’ এই শিরোনামে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির সদস্যরা সম্প্রতি রাজধানীর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ২৫৬টি অটোরিকশায় যাত্রী সেবার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এই সময়ে ৩১০ জন অটোরিকশা যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত অটোরিকশার ৯৮ ভাগ চুক্তিতে চলাচল করছে। মিটারে চলাচলকারী অটোরিকশার ৯২ শতাংশ ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া বা বকশিশ দাবি করে। তবে বৃষ্টি বা সরকারি ছুটির আগেরদিন অথবা গণপরিবহন সংকটকালীন সময়ে এই বকশিসের পরিমাণ ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। যাত্রীদের চাহিদার গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৮৮ ভাগ অটোরিকশা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী- প্রাইভেট অটোরিকশা ভাড়ায় যাত্রী বহন এবং ঢাকা জেলার অটোরিকশা বেআইনিভাবে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রবেশ করে ৬২ শতাংশ গাড়ি মিটারবিহীনভাবে চলাচল করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া বা অটোরিকশা চালকের পছন্দের গন্তব্যের সাথে মিললেই যাত্রীর পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হয়। চুক্তিতে চলাচলকারী অটোরিকশায় মিটারের ভাড়া থেকে সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ সর্বোচ্চ ৭১০ দশমিক ৮১ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দৈনিক জাগরণকে বলেন, প্রতিস্থাপনের পরও সিএনজি অটোরিকশায় শৃঙ্খলা ফেরেনি। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের যাত্রী সাধারণের বাহন হিসেবে পরিচিত দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসে নামমাত্র খরচে পরিচালিত সিএনজি চালিত অটোরিকশায় মালিক, চালক, সরকার মিলে যাত্রীস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ৪ দফা ইকোনমিক লাইফ ও ৪ দফা যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি, পরে একই মালিকের হাতে নতুন অটোরিকশা তুলে দিয়েও এই সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। ভাড়া নির্ধারণে এক লাফে যাত্রী ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়িয়েও এই সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি।

আরএম/আরআই