• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০১৯, ০৯:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৩, ২০১৯, ০৯:২৩ পিএম

১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ কার্যকর

১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ কার্যকর

ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান ও গণপরিবহন চালালে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ তে।

আইনটি আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার (২২ অক্টোবর)। আর এর মধ্য দিয়ে ১৯৮৩ সালের মোটর যান অধ্যাদেশ রহিত হয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী আইনে কোনও ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই এ আইনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে।

জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর গত বছরের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর গেজেট প্রকাশিত হয়।

সড়ক-মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামের স্বাক্ষর করা গেজেটে বলা হয়েছে, ‘এসআরও নং ৩৩৩-আইন/২০১৯, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ (২০১৮ সনের ৪৭ নং আইন)’-এর ধারা ১-এর উপধারা (২)-এ ক্ষমতাবলে সরকার  চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে এই আইন কার্যকর হবে। এই গেজেট অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর থেকে সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা রইলো না।’

এই আইনে উদ্দেশ্য-প্রণোদিত হত্যাকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা রাখা হয়েছে। এসব ধারার মধ্যে অধিকাংশের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা।

আইনটিতে দেখা গেছে, কঠোর নিয়ম-কানুন আরোপ করা হয়েছে। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ থেকে শাস্তির কঠোরতাও বেশি। আইনে যে অপরাধে যে শাস্তির বিধান করা হয়েছে, তার কিছু অংশ দৈনিক জাগরণ পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো।

আইনে বলা আছে- লাইসেন্স ব্যাতীত গণপরিবহনের কন্ডাক্টরের কাজ করা যাবে না। এটা অমান্য করলে অনধিক ১ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

রেজিস্ট্রেশন না করে মোটরযান চালালে অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

ভূয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার ও প্রদর্শন করলে অনূন্য ৬ মাস, অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনূন্য ১ লাখ টাকা, অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

মালিকানা পরিবর্তন ছাড়া মোটরযান পরিচালনা করলে অনধিক ১ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

ফিটনেস সনদ ছাড়া, মেয়াদোত্তীর্ণ ফিটনেস সনদ ব্যবহার, ইকোনমি লাইফ পার হওয়া বা ফিটনেস অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ মোটরযান পরিচালনা করলে অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

ট্যাক্স টোকেন বাদে বা মেয়াদোত্তীর্ণ ট্যাক্স টোকেন ব্যবহার করে মোটরযান চালানো হলে অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হবে।

রুট পারমিট ছাড়া পাবলিক প্লেসে পরিবহন যান ব্যবহার করলে অনধিক ৩ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

গণপরিবহনে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করলে ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি বা আদায় করলে অনধিক ১ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। একই সাথে চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কাটা হবে।

মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করলে অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ড বা স্থায়ী স্থাপনার ক্ষেত্রে অনধিক ৫ লাখ টাকা এবং অস্থায়ী স্থাপনার ক্ষেত্রে অনধিক ৫০ হাজার টাকা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

মোটরযানে এমন কোনও পরিবর্তন যদি আনা হয়, যাতে চালক সমস্যায় পড়েন বা পরিবেশ ও জনবান্ধব নয়, তেমন পরিবর্তন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। যেমন- হর্ন, হুইল বেইস, বডি, ধোঁয়া নির্গমনের রাস্তা, হেডলাইট ইত্যাদি পরিবর্তন। এসব পরিবর্তন করা হলে- অনূন্য ১ বছর, অনধিক ৩ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

ট্রাফিক সাইন ও সংকেত অমান্য করলে অনধিক ১ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দোষসূচক হিসেবে ১ পয়েন্ট কাটা হবে।

অতিরিক্ত ওজন বহন করে মোটরযান চালালে অনধিক ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দোষসূচক হিসেবে ১ পয়েন্ট কাটা হবে।

বেপরোয়া গতি বা নির্ধারিত গতিসীমা অতিক্রম করলে অনধিক ৩ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দোষসূচক হিসেবে ১ পয়েন্ট কাটা হবে।

হাইড্রলিক হর্ন, হলার অর্থাৎ এমন কিছু মোটরযানে থাকা, যা শব্দদূষণ করবে, সেক্ষেত্রে অনধিক ৩ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দোষসূচক হিসেবে ১ পয়েন্ট কাটা হবে।

অনির্ধারিত স্থানে মোটরযান পার্কিং এবং যাত্রী বা পণ্য উঠানামা করলে অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দোষসূচক হিসেবে ১ পয়েন্ট কাটা হবে।

ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মোটরযান চালনার ফলে দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধন হলে সংশ্লিষ্ট মোটরযান চালক বা কন্ডাক্টর বা সহায়তাকারী ব্যক্তি অনধিক ৩ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একইসাথে আদালত অর্থদণ্ডের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে প্রদানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।

২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-বিল’টি সংসদে তোলা হয়। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর তা সংসদে পাস হয়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর ৮ অক্টোবর আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এর আগে একই বছরের ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেয়া হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’। তবে আইনটির ১-এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির গেজেটের পর আইনটি কার্যকর করতে সরকারের পক্ষ থেকেও গেজেট প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু মালিক শ্রমিকদের আপত্তির কারণেই এতদিন সরকার সেই গেজেট প্রকাশ করেনি। এ কারণেই এতদিন কার্যকর হয়নি আইনটি। অবশেষে  আইনটি কার্যকর করতে গেজেট প্রকাশ করলো সরকার।

আরএম/এসএমএম

আরও পড়ুন