• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০২:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০২:১৭ পিএম

পরিবহন ধর্মঘট 

অচল চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর, ফাঁকা মহাসড়ক

অচল চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর, ফাঁকা মহাসড়ক

নতুন সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত রাখাসহ নয় দফা দাবিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের কবলে পড়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বুধবার (২০ নভেম্বর) ভোর থেকে পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরেও পণ্য খালাসে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এতে ফাঁকা হয়ে পড়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কও।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম জানান, ধর্মঘটের কারণে বন্দরের ফটকগুলোতে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইম মুভার দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো রকম আমদানিপণ্য ডিপো থেকে পরিবহন করা হচ্ছে না। রপ্তানিপণ্য পরিবহনও বন্ধ রয়েছে। ফলে বন্দরে জাহাজ থেকে নামানো কনটেইনার রাখার জায়গা ধীরে ধীরে কমে আসছে। 

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ চললেও আমদানি পণ্য পরিবহন না হওয়ায় বন্দরে কনটেইনার জট বাড়ছে। এতে খুব অল্প সময়ে বন্দরে পণ্য খালাসেও অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। এমনকি ডিপোগুলো থেকে পণ্য পরিবহন না হাওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে। 

তিনি বলেন, বন্দরে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার নেওয়া হয় কনটেইনার ডিপো থেকে প্রাইম মুভার ট্রেইলারে করে। কিন্তু বুধবার সকালে ডিপো থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী গাড়ি বের হয়নি। যেসব জাহাজ বন্দর জেটি ছেড়ে যাওয়ার কথা, সেগুলোতে রাতেই রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বোঝাই হয়েছে। 
আগামীকাল যেসব জাহাজ বন্দর জেটি ছেড়ে যাবে, সেগুলো রপ্তানি পণ্য বোঝাই করার জন্য বুধবার রাতেই ডিপো থেকে বন্দরে পাঠাতে হবে। না হলে রপ্তানি পণ্য পরিবহনও বন্ধ হয়ে পড়বে। কিন্তু প্রাইম মুভার ট্রেইলার শ্রমিকরাও ধর্মঘট পালন করছে। 

প্রাইম মুভার ট্রেইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি প্রাইম মুভার ট্রেইলার চলছে না। শ্রমিকেরাও পরিবহন ধর্মঘট পালন করছেন। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনোরকম পণ্য পরিবহন হচ্ছে না। এতে মহাসড়ক ফাঁকা হয়ে পড়েছে। 

তিনি জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত রাখাসহ নয় দফা দাবিতে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এর আগে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিল পরিবহন সংগঠনগুলো। কিন্তু সরকার তাতে কোসন সাড়া দেয়নি। 

পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ধর্মঘটের কারণে বুধবার সকাল থেকে পণ্যবাহী কোনো ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বের হয়নি। আবার বন্দরে যেসব গাড়ি রাতে ঢুকেছে, সেগুলো বন্দরেই রয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সমুদ্রপথে দেশের ৯৩ শতাংশ পণ্য পরিবহন হয়। আর কনটেইনার পরিবহন হয় ৯৮ শতাংশ। পরিবহন ধর্মঘটে এই বন্দরেই বেশি প্রভাব পড়ে। এই বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। এই বন্দরের যে কোনো প্রভাব আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যসহ পুরো দেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করবেই।

এদিকে, যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের কারণে মোংলা বন্দরে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় মোংলা বন্দর জেটি থেকে কোন আমদানি পণ্য বের হচ্ছে না। অপরদিকে রফতানিযোগ্য পণ্যও বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছে বন্দর ব্যবহারকারীরা। পণ্য পরিবহন ধর্মঘটে মোংলা বন্দরের শিল্প এলাকার ২০টি এলপিজি ফ্যাক্টরি, ৫টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ ইপিজেডের পণ্য পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃক্ষের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মো. সোহাগ বলেন, পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের কারণে মোংলা বন্দর জেটি থেকে সড়ক পথে দেশের বিভিন্নস্থানে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে বন্দরে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলেও তিনি জানান। 

মোংলা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মো. মাহাবুবুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ট্রাক-ট্রলি চলাচল বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে। তবে ইপিজেডের সকল কল কারখানায় কাজ চলছে। 

এছাড়া বুধবার তৃতীয় দিনের মত মোংলা-খুলনা, মোংলা-রুপসা, মোংলা-বাগেরহাটসহ সকল রুটে যাত্রীবাহী বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি এখন চরমে পৌঁছেছে। 

ট্রাক চালক নজরুল শেখ ও হাফিজ উদ্দিন বলেন, নতুন আইনে ৫ লাখ টাকা জরিমানার যে বিধান করা হয়েছে তা আমরা মানি না। এ আইন মেনে গাড়ি চালানো সম্ভব না। তাই আমরা গাড়ি বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছি এবং আইন শিথীলের দাবি জানাচ্ছি। 

কেএসটি

আরও পড়ুন