• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০১৯, ০৯:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৩০, ২০১৯, ০৯:৫৮ পিএম

যে ধারা প্রয়োগ করলে গণপরিবহন চলতে পারবে না...

যে ধারা প্রয়োগ করলে গণপরিবহন চলতে পারবে না...
একটি বাসের সুদৃশ্য আসন- ছবি : সংগৃহীত

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮

.................

কোম্পানি সরবরাহকৃত গণপরিবহনের আসন সংখ্যা শুরুতে যা ছিল তা-ই রাখতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটালে কড়া শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে। ঢাকা শহরে চলাচলরত সব ধরনের গণপরিবহনে নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি আসন রেখেছেন মালিকরা।

ট্রাফিক পুলিশের বক্তব্য, এ বিষয় যদি ধরা হয় তাহলে ঢাকায় কোনও গণপরিবহনই চলতে পারবে না। 

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর সপ্তম অধ্যায় প্রস্তুত করা হয়েছে। শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘মোটরযানের নির্মাণ, সরঞ্জাম বিন্যাস ও রক্ষণাবেক্ষণ’। এ অধ্যায়ে লেখা আছে— ‘‘কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কারিগরি বিধি-নির্দেশের (টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন) ব্যত্যয় ঘটাইয়া কোনও মোটরযানের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, আসন বিন্যাস, হুইল বেইজ, রিয়ার ওভার হ্যাংগ, ফ্রন্ট ওভার হ্যাংগ, সাইড ওভার হ্যাংগ, চাকার আকৃতি, প্রকৃতি ও অবস্থা, ব্রেক ও স্টিয়ারিং গিয়ার, হর্ন, সেফটি গ্লাস, সংকেত প্রদানের লাইট ও রিফ্লেক্টর, স্পিড গভর্নর, ধোঁয়া নির্গমণ ব্যবস্থা ও কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ, শব্দ নিয়ন্ত্রণের মাত্রা বা সমজাতীয় কোনওকিছুই পরিবর্তন করা যাইবে না। রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরযানের কোনও কারিগরি, অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে অনুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে। যদি এসব অমান্য করা হয় তাহলে অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড, সর্বনিম্ন ১ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার কথা বলার পাশাপাশি সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড দেয়া হবে।’’

ট্রাফিক পুলিশের বক্তব্য, সদ্য বিলুপ্ত মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী এসবের শাস্তি ছিল ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। তবে অতিরিক্ত আসন সংখ্যা বাড়ানোর  অভিযোগে তেমন একটা আইন প্রয়োগ করা হতো না।

ঢাকা নগরীর বাসচালক ও হেল্পারদের বক্তব্য, বাসে ৩৫টির বেশি আসন থাকে না। কিন্তু অতিরিক্ত আয়ের জন্য গাদাগাদি করে ৫০-৫৫ আসন বানানো হয়। কিছু বাস আছে ৪৫ আসনের। সেগুলোও রূপান্তর করা হয় ৫৫ থেকে ৬০ আসন পর্যন্ত। এক্ষেত্রে বাস মালিকের ইচ্ছাই সব। বিআরটিএ থেকে কোনও অনুমতি নেয়া হয় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, আসন সংখ্যা বাড়ানোর পরেও গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে বাসগুলো।

লেগুনাগুলোর অবস্থাও একই। যে লেগুনায় স্বাভাবিকভাবে ৮ জন যাত্রী বসতে পারেন। সেখানে অতিরিক্ত দুইজন নেয়া হয়। স্টিয়ারিংয়ের পাশেও  দুইজন যাত্রী বহন করা হয়। বিআরটিসি তাদের বাসে আসন সংখ্যা না বাড়ালেও অনেক সময় বাদুড়ঝোলা করে যাত্রী পরিবহন করা হয়।

সোনারগাঁও-পান্থপথ ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কথা হয় ২০১৫ সালে নিয়োগ পাওয়া এক ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্টের। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, আসলে এই বিষয়টা কখনই ধরা হয় না। ঊর্ধ্বতনরা কখনও এটা নিয়ে আমাদের নির্দেশনা দেননি। আমার মনে হয়, যেহেতু এটি জনগণ-পরিবেশের জন্য কোনও ক্ষতি করে না, তাই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা আমাদের দেয়া হয় না।

ফার্মগেট ট্রাফিক পুলিশ বক্সে কর্তব্যরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহনের স্বল্পতা আছে। সে কারণে বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় দেখা হয়, আইন প্রয়োগের নির্দেশনা আমরা পাই না। তবে ভবিষ্যতে নির্দেশনা যে একেবারেই আসবে না, তার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। কিছু গণপরিবহন আছে, সেগুলো যখন যাত্রী বোঝাই থাকে, তখন মনে হয় একেকটা বাস যেনো একেকটা পশুর হাট। আসনে বসলেও পা সোজা করে রাখা যায় না। চিন্তা করে দেখেন, পরিবহনগুলো কী পরিমাণে অতিরিক্ত আসন বাড়িয়ে এ অবস্থা করেছে। তাতেও এদের পেট ভরে না। আবার দাঁড়িয়েও যাত্রী বহন করা হচ্ছে।

বিহঙ্গ পরিবহনের চালক বরকত আলী বক্তব্য, আসন সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে মামলার কথা কোনও দিন শুনি নাই। আসলে সব বাস মালিকের ইচ্ছা। নির্ধারিত আসনের বাইরেও যে যাত্রী নেয়া হয়, সেগুলো না নিলে আমাদের পোষায় না।

গাবতলী-যাত্রাবাড়ী রুটে ৮ নম্বর বাসের কন্ডাক্টর আবু তাহেরেরও একই বক্তব্য বলেন, যানজটসহ নানা কারণে আয় ভালো হয় না। তাই আসন সংখ্যা না বাড়িয়ে কোনও উপায় থাকে না আমাদের। দাঁড়িয়েও যাত্রী বহন করতে হয়। 

আইন প্রয়োগ নিয়ে এখনও অস্পষ্টতা থাকায় এ বিষয় নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের একটি জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) এই প্রতিবেদককে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি জানান, আসন সংখ্যা অবৈধভাবে বৃদ্ধি করার জন্য মামলা দেয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা আছে। তারপরও আমরা দিচ্ছি না। দেবো না, সেটা বলা যাচ্ছে না। নতুন আইন যেহেতু হয়েছে, ভবিষ্যতে তার প্রয়োগও হতে পারে। 

আরএম/এসএমএম

আরও পড়ুন