• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৫, ২০১৯, ১২:৫০ পিএম

যাত্রী কল্যাণ সমিতি

২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭,২২১

২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭,২২১
প্রতীকী ছবি

 

২০১৮ সালে সারা দেশে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে মোট ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭৯৬ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮০ জন।

এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনাই ঘটেছে ৫ হাজার ৫১৪টি। এতে নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ২২১ জন। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৪৬৬ জন।

এছাড়া রেলপথে ৩৭০টি দুর্ঘটনায় ৩৯৪ জন নিহত ও ২৪৮ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৫০টি দুর্ঘটনায় ১২৬ জন নিহত ও ২৩৪ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৩৮৭ জন। আর নেপালে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাসহ আকাশপথে ৫ টি দুর্ঘটনায় গতবছর ৫৫ জন নিহত ও ৩২ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদের আলোকে তারা এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও হতাহতের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে।

২০১৭ সালে ৪ হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল, আহত হয়েছিলেন ১৬ হাজার ১৯৩ জন।

২০১৮ সালে সড়কে যাদের প্রাণ গেছে, তাদের মধ্যে ৭৮৭ জন নারী ও ৪৮৭ জন শিশু। ১ হাজার ২৫২ জন চালক ও শ্রমিক, ৮৮০ জন শিক্ষার্থী, ২৩১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১০৬ জন শিক্ষক, ৩৪ সাংবাদিক রয়েছেন।

সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে গাড়ি চাপায়। ৪১ দশমিক ৫৩ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে গাড়ি চাপায়, ২৯ দশমিক ৭২ শতাংশ ক্ষেত্রে দুই বাহনের মুখোমুখি সংঘর্ঘে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, আর গাড়ি খাদে পড়ে ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ মৃত্যু ঘটেছে।

দুর্ঘটনায় বেশি পড়েছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। এ ধরনের বাহনের দুর্ঘটনায় পড়ার হার মোট দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ, বাস ১৮ দশমিক ৯২, অটোরিকশা ৯ দশমিক ৬১, নছিমন-করিমন ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ।

সমিতিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপদজনক ওভারটেকিং, সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, মহাসড়ক ও রেলক্রসিংয়ে ফিডার রোডের যানবাহন উঠে পরা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, যানবাহনে অতিরিক্ত পণ্য বা যাত্রী বহন এবং সড়কে ছোট যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধিবিধান সম্পর্কে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। একইসঙ্গে টিভি-অনলাইন, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সড়ক সচেতনতামূলক বা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ থেকে হাট-বাজার অপসারণ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা, জেব্রাক্রসিং দেওয়া, চালকদের পেশাগত প্রশিক্ষণ ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, যাত্রীবান্ধব সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিবিধান প্রণয়ন, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতিগত উন্নয়ন-আধুনিকায়ন, মহাসড়কে কমগতি ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা এবং লাইসেন্স নবায়নের সময় চালকদের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করার কথা এসেছে তাদের সুপারিশে।

সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানোর পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল গঠনের সুপারিশও করেছে তারা।  

গতবছর ২৩ জুন একদিনে ৬২ জনের প্রাণহানির খবর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় মন্তব্য করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “এহেন উদ্বেগজনক হারে প্রাণহানিতে ২৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সড়ক নিরাপত্তায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন। এছাড়া নতুন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকারের প্রতিফলনের জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।”

সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

 

জাহো/সাইসে