• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৯, ০৮:৩৪ পিএম

চট্টগ্রামে কমান্ডো অভিযানে বিমান ছিনতাইকারী নিহত

চট্টগ্রামে কমান্ডো অভিযানে বিমান ছিনতাইকারী নিহত
বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের অত্যাধুনিক বিমান ‘ময়ূরপঙ্খী’ -ফাইল ছবি

 

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কমান্ডো অভিযানে বিমান ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে। আইএসপিআরের বরাত দিয়ে একাধিক টেলিভিশন এ তথ্য জানিয়েছে। 

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি-১৪৭ ‘ময়ূরপঙ্খী’ ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে এ ঘটনার সূত্রপাত। সেনা কমান্ডোদের বিশেষ অভিযানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অস্ত্রধারী ছিনতাইকারীকে পরাভূত করা হয়। এ ঘটনায় যাত্রী ও ক্রু কেউ হতাহত হয়নি। 

সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আইএসপিআরের পরিচালক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ রাত ৮টা ৫ মিনিটে দৈনিক জাগরণকে বলেন, ছিনতাইকারী আহত নাকি নিহত, তা এখনই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে এটা নিশ্চিত, সেনাবাহিনীর অভিযানে অপরাধী পরাভূত হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাঈম হাসান, ছিনতাইকারী একজন বিদেশি, তার বুকে বোমা বাঁধা ছিল।

বাংলাদেশ বিমানের নতুন উড়োজাহাজ ‘ময়ূরপঙ্খী’ ১৪২ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে দুবাইয়ে রওনা দেয়। আজ রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। আকাশে ওড়ার পরপরই উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। পুরো কাজটি করেন অস্ত্রধারী এক ব্যক্তি।

একজন ক্রু জানান, সাড়ে ৪টায় কিছু সময় পর ময়ূরপঙ্খী আকাশে প্রায় ১৫ হাজার ফুট ওপরে দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। তখন উড়োজাহাজের ভেতরে যাত্রীদের আসনে থাকা এক ব্যক্তি উঠে ককপিটের দিকে আসেন। এ সময় ওই ব্যক্তি এক ক্রুর কাছে যান। কাছে গিয়ে তিনি ওই ক্রুকে ধাক্কা দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে একটি পিস্তল ও বোমাসদৃশ একটি বস্তু বের করে বলেন, ‘আমি বিমানটি ছিনতাই করব। আমার কাছে পিস্তল ও বোমা আছে। ককপিট না খুললে আমি বিমান উড়িয়ে দেব।’ এর মধ্যে অন্য কেবিন ক্রুরা ককপিটে থাকা পাইলট ও সহকারী পাইলটকে গোপনে সাংকেতিক বার্তা দেন যে, উড়োজাহাজে অস্ত্রধারী আছে, উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা হচ্ছে। ঠিক এ সময় উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করছিল।

ওই ক্রু বলেন, গোপন সাংকেতিক বার্তা পেয়ে পাইলট মো. শফি ও সহকারী পাইলট মো. জাহাঙ্গীর ককপিটের দরজা বন্ধ করে দেন এবং কৌশলে জরুরি অবতরণের জন্য চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে বার্তা পাঠান। 

উড়োজাহাজে থাকা একটি সূত্র জানিয়েছে, ককপিটের দরজা না খোলায় অস্ত্রধারী ব্যক্তিটি চিৎকার করছিলেন। একপর্যায়ে ওই অস্ত্রধারী উড়োজাহাজের ভেতরে ‘বিস্ফোরণের’ মতো ঘটান। ততক্ষণে উড়োজাহাজটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে। কৌশলে উড়োজাহাজের ডানার পাশের চারটি ইমারজেন্সি গেট দিয়ে যাত্রীরা নেমে পড়েন।

বিকালে বিমানবন্দর সূত্র জানায়, রানওয়েতে দুটি গুলির শব্দ শোনা গেছে। পুরো বিমানবন্দর নিরাপত্তা বাহিনী ঘিরে রেখেছে। ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।  

সেসময় বিমান সচিব জানান, একজন যাত্রী এবং কেবিনক্রু এফ এস সাগর ছাড়া বাকি সব যাত্রীকে নিরাপদে বের করে আনা হয়েছে। 

উড়োজাহাজে থাকা এক যাত্রী জানান, তিনি নেমে আসা পর্যন্ত ক্রু সাগর ছাড়া ককপিটের ভেতরে তখন পর্যন্ত দুজন বৈমানিক ছিলেন।

জানা গেছে, বিমানে যাত্রী ছিলেন ১৪২ জন, কেবিন ক্রু ৫ জন এবং ককপিট ক্রু ২ জন। 

বিমানের যাত্রী ছিলেন জাসদ নেতা ও চট্টগ্রামের বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য মইনুদ্দীন খান বাদল। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমি দেখেছি বিমানটির ভেতরে হাইজাকার আছে একজন বাঙালি। সে গুলি করেছে। বিমান থেকে সব প্যাসেঞ্জার (যাত্রী) রিমুভ করেছে। আর পাইলট নেমে এসেছে। প্লেন সেভ। ক্রু সেভ। সমস্ত যাত্রী সেভ। এখন ওই হাইজাকারকে নামানোর চেষ্টা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেষ্টা করছে। পাইলট আমার কাছে এসেছিল। বলেছে একজন শুট (গুলি) করেছে। পাইলট তাকে পারসু (প্রভাবিত) করার চেষ্টা করেছে। হাইজাকার বলেছে, সে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে চায়।’

সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী ও নৌ কমান্ডো। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরে অবস্থান নেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৪টি ইউনিট।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বহরে যুক্ত করা হয় নতুন প্রজন্মের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের দুটি অত্যাধুনিক বিমান। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি ১৬২ আসনের ‘মেঘদূত’ ও ‘ময়ূরপঙ্খী’ ফ্লাইট দুটির সংযোজন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

এফসি