• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯, ০২:৪২ পিএম

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি’র আহবানে আলোর পথে ৭৭৫ মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি’র আহবানে আলোর পথে ৭৭৫ মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। ছবি- জাগরণ

 

‘হেমিলিয়নের বাঁশিওয়ালা’ গল্পটি প্রায় সকলেরই জানা। যিনি বাঁশি বাজিয়ে ইঁদুর মুক্ত করেছিলেন শহরকে। বর্তমান যুগের তেমনই একজন বাঁশিওয়ালা বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। যিনি মাদকের বিরুদ্ধে আলোর দিশারী হয়ে কাজ করছেন। এই অঞ্চলের মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের ফিরিয়ে নিয়ে আসছেন আলোর পথে। এরই মধ্যে তার হাত ধরে সুস্থ জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পন করেছেন বরিশাল বিভাগের ৭৭৫ জন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী। যাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন ডিআইজি। এর ফলে বরিশাল জেলা এবং উপজেলাগুলোতে কমতে শুরু করেছে মাদকের আগ্রাসন।

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ২০১৭ সালের আগস্টে বরিশালের ডিআইজি হিসেবে যোগদান করেন মো. শফিকুল ইসলাম। যোগদানের পর পরই বরিশালের ৬টি জেলাকে মাদক মুক্ত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। যার একটি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের সুস্থ জীবন ও আলোর পথে নিয়ে আসা।

তার ধারাবাহিকতায় ডিআইজি শফিকুল ইসলাম যোগদানের তিন মাসের মাথায় ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর বরিশাল জেলার ১২৮ জন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন। বরিশাল পুলিশ লাইন্স কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের হাতে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন ডিআইজি। সেই ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আরো ১১ জন মাদক ব্যবসায়ী আলোর পথে ফিরতে আত্মসমর্পণ করেছে।

এদিকে, রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সহিদুল আলম জানান, ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত প্রায় দেড় বছরে বরিশাল রেঞ্জে ৭৭৫ জন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী আত্মসমর্পণ করেছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলার ১৯০ জন, পটুয়াখালীর ১৫২ জন, ভোলার ১০৩ জন, বরগুনার ১৩৬ জন, পিরোজপুর জেলার ১০০ জন ও ঝালকাঠি জেলার ৯৪ জন।

সহিদুল আলম বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের মধ্যে ৪১১ জন মাদক ব্যবসায়ী ও ৩৬৪ জন সেবনকারী। যাদের মধ্যে নারী মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে ১৬ জন। যারা আত্মসমর্পণ করেছিল তাদের মধ্যে ৪৩ জন পুনরায় মাদকের সংস্পর্শে চলে যায়। যে কারণে তাদের মাদক দ্রব্যসহ আটক করে মামলা দিয়ে জেলে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ৭৩২ জনকে পুনর্বাসন, চাকরি ও মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে এরা সবাই এখন সুস্থ, সুন্দর ও নিরাপদ জীবন যাপন করছে।

এসআই সহিদুল আলম আরো জানান, যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের মধ্যে ১৯৪ জনকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবসা করা হয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল জেলার ৩০ জন, পটুয়াখালী জেলার ৩৫ জন, ভোলার ৩৫ জন, বরগুনার ৩৫ জন, পিরোজপুরের ২৬ ও ঝালকাঠির ৩৩ জন। তাছাড়া ২৮৭ জনকে বিভিন্নভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

তাছাড়া ১৩২ জনকে সেলাই মেশিন, ১০ জনকে রিক্সা, ১৭ জনকে ভ্যান গাড়ি, ১৯ জনকে চা বিক্রির জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল কিনে দেয়া হয়েছে। ১১ জনকে মাছ ধরার জাল, ১২ জনকে চাহিদা অনুযায়ী নগদ অর্থ প্রদান, ৫ জনকে কাজের ব্যবস্থা করে দেয়া ছাড়াও আরো ৮১ জনকে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম-বিপিএম বলেন, মাদক আমাদের দেশের একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যে কারণে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেও জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছেন। তাছাড়া মাদক নির্মূল করতে হলে আগে এর সংকট সৃষ্টি করতে হবে। তবেই মাদক নির্মূল সম্ভব।

এ জন্যই আমরা মাদক নির্মূলে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়েছিলাম। এতে আমরা অনেক সফলতাও পেয়েছি। মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীরা আত্মসমর্পণ করে অন্ধকার জগদ থেকে আলোর পথে ফিরছে। আত্মসমর্পণকারী অনেকেই বৈধ আয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে।

ডিআইজি বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছে তাদের নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসিরা প্রতি মাসে একটি করে সভা করছে এবং রিপোর্ট প্রদান করছেন। তাছাড়া প্রতিটি থানার উপ-পরিদর্শকদের ট্যাগ করে দিয়ে তাদের কাছ থেকেও নিয়মিত রিপোর্ট গ্রহণ করা হচ্ছে। সমাজের সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এ কার্যক্রমে আরো সুফল আসবে বলেও মনে করেন ডিআইজি শফিকুল ইসলাম।


কেএসটি