• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০১৯, ০৯:২৯ এএম

হবিগঞ্জে নিয়ম-নীতি না মেনেই চলছে লাগামহীন ইটভাটা

হবিগঞ্জে নিয়ম-নীতি না মেনেই চলছে লাগামহীন ইটভাটা
জেলার বাহুবল উপজেলার মিরপুর এলাকার এমবিসি ইটভাটা- ছবি: জাগরণ


হবিগঞ্জে বাহুবল উপজেলায় ধানক্ষেতে কিংবা নদীর পাড়ে বনাঞ্চল এবং মহাসড়ক ঘেঁষে ইটভাটা নির্মাণের হিড়িক চলছে। যেন কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা নেই। যে যেভাবে পারছে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। প্রভাবশালী মহল সরকারি দলের নেতাদের পার্টনারশীপে  ইটভাটা করা হয়েছে। কৃষিজমি, বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বনাঞ্চল রয়েছে-এর আশে-পাশের জায়গায় ফ্রি-স্টাইলে ইটভাটা করা হয়েছে। এসব ইটভাটার মালিকরা সরকারি খাসজমি দখল করেছে শত শত একর। কেটে নেয়া হচ্ছে কৃষিজমির টপসয়েল। পরিবেশ অধিদফতরের কোন নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। জেলা উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে ৫/৭টি ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। করা হয়েছে জেল-জরিমানা। কিন্তু অবৈধভাবে ইটভাটা তৈরির কাজ বন্ধ থাকছেনা। ফলে মহাসড়কে এলাকার পরিবেশ  কৃষিজমি এখন চরম বিপর্যয়ের শঙ্কায় রয়েছে।

জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক ইটের ভাটা। এদের অধিকাংশেরই নেই পরিবেশ ছাড়পত্র। জেলার বাহুবল উপজেলায় এর সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। লোকালয়ের আশে-পাশে গড়ে উঠা পরিবেশ বান্ধব চুল্লিবিহীন এসব ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোয়ায় চরম ভাবে দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, বাড়ছে রোগ-বালাই। শুধু তাই নয়, এসব ইট ভাটায় মাটি বহনকারী যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের কারণে ধ্বংস হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি রাস্তা। ট্রাক্টরের কারণে সৃষ্ট ধুলিঝড়ে চরম বিব্রতকর ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন পথচারী ও এলাকাবাসী। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হল, ইটের ভাটায় মাটি ব্যবহারের কারণে উর্বরতা হারাচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি। এছাড়া ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করায় উজার হচ্ছে এলাকার গাছগাছালি ও বনাঞ্চল।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে ৮২টি ইটভাটা। এর মধ্যে ৬৮ ইটভাটার লাইসেন্স আছে। অবশিষ্ট ১৪টি ইটভাটা লাইসেন্স বিহীন। এতে সরকারি অনুমোদন না থাকলেও এ সব ইটভাটার কার্যক্রম থেমে নেই। তবে বেসরকারি হিসেবে, জেলায় ইটভাটার সংখ্যা শতাধিক। আবার অনেক ইটভাটা চলছে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে চলছে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম।

সরকারি বিধান হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট মালিক ইটভাটা স্থাপনের আগে পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন করবেন। এরপর সরেজমিনে তদন্ত করে পরিবেশ অধিদফতর প্রতিবেদন দিলে জেলা প্রশাসক ইট পুড়ানো লাইসেন্স দেবেন। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরে আবেদন করেই কার্যক্রম শুরু করেছেন অধিকাংশ ইটভাটা মালিক। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের কোনো তদারকি নেই। যে কারণে দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ইটভাটার কার্যক্রম। সরকারি রাজস্বও ফাঁকি দেয়া হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। ভূমি ব্যবহার প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের চুক্তিপত্র, কৃষি অধিদফতরের নীতিমালার কোনো তোয়াক্কাই করা হচ্ছে না হবিগঞ্জের ইটভাটায়। এতে চরম হুমকির মুখে পড়েছে জেলার পরিবেশ, ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট ও বনাঞ্চল।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) ২০১৩ এ বলা হয়েছে- লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা করা যাবে না। কোন ব্যক্তি ইট প্রস্তুতে কৃষিজমি কিংবা পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার করতে পারবে না। অনুমতি ছাড়া খাল, পুকুর, নদীরপাড় কিংবা চরাঞ্চল কেটে মাটি সংগ্রহ করতে পারবে না। ৫০ শতক ফাঁপা ইট (হলো ব্রিক) প্রস্তুত করতে হবে। এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত কোন সড়ক ইটসহ কাঁচামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোন ধরনের কাঠ পোড়ানো যাবে না। এমনকি মান সম্পন্ন কয়লা পোড়াতে হবে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, এসব ইটভাটায় কয়লার পাশাপাশি জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। আর ইটভাটার ইট পরিবহনে ব্যবহৃত ছয় চাকার অবৈধ দৈত্যাকৃতির যান ট্রলি ব্যবহৃত হওয়ায় সরকারি অর্থায়নে করা রাস্তাঘাট ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। এনিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে ক্যাডার দ্বারা লাঞ্ছিত করা হয় সাধারণ মানুষকে। এসব অবৈধ ইট ভাটায় মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান পরিচালিত হলেও নেয়া হচ্ছে না কঠোর ব্যবস্থা। যে কারণে থামছে না ইট ভাটার ভয়াবহতা।

এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জসিম উদ্দিন  জানান, বাহুবল উপজেলায় তালিকাভূক্ত ৪০টি ইটভাটা রয়েছে। এরা কোনো না কোনো ভাবে লাইসেন্স পেয়ে গেছে। এর বাইরে অবৈধ ইটভাটা আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত ইট ভাটাগুলোর লাইসেন্স নবায়ন হয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৯টি ইট ভাটায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

এনআই/টিএফ