• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০১৯, ১২:১১ পিএম

মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন

তালার তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদ

তালার তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদ
তালার তেঁতুলিয়া শাহী মসজিদ- ছবি: জাগরণ


১৮০০ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। প্রায় দেড় শত বছরের পুরাতন ঐতিহাসিক মসজিদটি স্থানীয়ভাবে মিয়ার মসজিদ হিসেবে পরিচিত। মূলনাম খান বাহাদুর কাজী সালামতউলাহ জামে মসজিদ হলেও বর্তমান এটি তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ নামেই পরিচিত।

‘মোগল মুমেন্টস অব বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থ দ্বারা প্রকাশিত হয় মৌলভী কাজী সালামতউল্লাহ খান বাহাদুর তেঁতুলিয়ার একজন জমিদার ছিলেন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় ব্রিটিশ শাসনামলের ডেপুটি কালেকটর এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।

জমিদার কাজী সালামতউলাহ ১৮০০ শতকের দিকে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে জন প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সাল নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। ১৮১৮, ১৮২৫ কিংবা ১৮৫৮-১৮৫৯ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। মসজিদের খুব কাছে “সালাম মঞ্জিল” টিও সমসাময়িক কালে কাজী সাহেব প্রতিষ্ঠা করেন।

মসজিদটি খুলনা-পাইকগাছা সড়কের কোল ঘেঁষে তালা উপজেলা সদরের ২/৩ কিলোমিটার উত্তরে আঠারো মাইল অভিমুখে আঞ্চলিক সড়কের পাশে এক একর জায়গা জুড়ে অবস্থান করছে। মসজিদের সাথেই প্রায় ২ একর আয়তনের একটি বিশাল পুকুর রয়েছে। মসজিদটিতে রয়েছে ৭টি দরজা। প্রতিটি দরজার উচ্চতা ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। ১০ বর্গফুট বেড় বিশিষ্ট ১২টি পিলারের উপর মসজিদের ছাদ নির্মিত। চুনসুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদটিতে ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ৬ টি বড় গম্বুজ এবং ৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ১৪টি মিনার রয়েছে। এছাড়া ২৫ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট চার কোনে ৪টি মিনার রয়েছে। মসজিদের ভিতরে ৫টি সারিতে ৩২৫জন ও মসজিদের বাইরের চত্বরে ১৭৫ জন নামাজী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি বাংলাদেশের সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর তাদের আয়ত্বে নিয়েছে।

মসজিদের সামনে তৈরি একটা পেটে লন্ডন প্রবাসী মন্টি সিদ্দিকী (কাজী সালামতউলাহর বংশধর) নামের ঐ ব্যক্তির দেয়া তথ্য মতে, মসজিদটির সঙ্গে ১৮৪০-৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কোলকাতার শাহজানী বেগম মসজিদ এবং ১৮৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত কোলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সাদৃশ্য লক্ষ্ করা যায়।
বর্তমানে অযত্ন আর অবহেলায় ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হতে বসেছে। ৭টি মিনার ভেঙে পড়ার উপক্রম। মসজিদের বাউন্ডারি এলাকায় বহু অজানা ব্যক্তিদের কবরের চিহ্ন থাকলেও সেগুলো অরক্ষিত। মসজিদটির ফ্লোরে ও পশ্চিম পাশের দেয়ালের উপরের অংশে ফাটল ধরেছে। যদি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হয় তবে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষী তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদটি কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে বলে সচেতন এলাকাবাসী মনে করছে।

এআর/টিএফ