• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০১৯, ০২:২৪ পিএম

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের পানিতে ব্যাকটেরিয়া, ৫ জনের মৃত্যু

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের পানিতে ব্যাকটেরিয়া, ৫ জনের মৃত্যু

 

ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানিবাহিত ডায়রিয়ায় সহস্রাধিক আক্রান্ত হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের সরবরাহ করা পানিতে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ‘ফিক্যাল কলির্ফম’ নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- নগরীর কাচিঝুলি এলাকার মমতাজ বেগম, হামিদ উদ্দিন রোড এলাকার বাদশা মিয়া, সাহেব কোয়ার্টার এলাকার রওশন আরা খাতুন, পুলিশ লাইন্স এলাকার উম্মে কুলসুম ও রোকেয়া বেগম।  

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে সরেজমিনে কাজ করছেন দুটি মেডিকেল টিম।

১১ মার্চ সিটি কর্পোরেশনের সরবরাহকৃত পানি পরীক্ষার জন্য স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করেন সংশ্লিষ্টরা। ওই পরীক্ষায় সিটি কর্পোরেশনের সরবরাহকৃত পানিতে মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর ‘ফিক্যাল কলির্ফম’ নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। 

এদিকে, গবেষকদের ধারণা, ক্ষতিকর এ ব্যাকটেরিয়ার কারণেই পানিবাহিত এ রোগের প্রকোপ সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পরীক্ষাগারের সিনিয়র ক্যামিস্ট মো. আনিছুর রহমান খান জানান, সিটি কর্পোরেশনের চিঠি পেয়ে ওইদিনই নগরীর পুলিশ লাইন, গলগন্ডা, খাগডহর, কাচিঝুলি, কাশর, ঢোলাদিয়াসহ ১০টি স্পট থেকে নমুনা পানি সংগ্রহ করি। ওই পানি পরীক্ষার পর ঢোলাদিয়া ও কাচিঝুলি এলাকার পানিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ‘ফিক্যাল কলির্ফম’ নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। 

পরীক্ষাগারের জুনিয়র ক্যামিস্ট শফিকুল ইসলাম জানান, সাধারণত পানিতে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকার কথা নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে পানি সরবরাহ লাইনের লিকেজ থেকে ক্ষতিকর এ ব্যাকটেরিয়া পানিতে মিশে গেছে। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট এরইমধ্যে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।  

স্থানীয় সূর্যকান্ত (এসকে) হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. প্রজ্ঞানন্দ নাথ জানান, প্রতিদিন নগরীর নতুন নতুন এলাকার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলা থেকেও রোগী আসছে। তবে তা শহরের তুলনায় অনেক কম। বেশি আক্রান্ত এলাকাগুলো হলো নগরীর কাচিঝুলী, কাশর, তিনকোনা পুকুরপাড়, ঘুণ্টি, খাগডহর ও মালগুদাম। 

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন গড়ে অর্ধশতাধিক বিভিন্ন বয়সী রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৫২২ পুরুষ ও ৪১৭ নারীসহ প্রায় সহস্রাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে কী কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে তার কারণ এখনো জানা যায়নি।  

ময়মনসিংহ স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ কে এম আবদুর রব জানান, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নজরে আসলে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এ নিয়ে দুটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে,  দূষিত পানি পান এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার বা অন্য কোনো কারণে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।   

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে পানি এবং স্বাস্থ্য শাখার ৪টি টিম সরেজমিনে কাজ করছে। এরইমধ্যে পানি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়েছি। যে দুটি এলাকার পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে ওইসব এলাকাবাসীকে সরবরাহকৃত পানি পান না করার জন্য সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচারণা চলছে।  

নগরীর একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, সিটি কর্পোরেশনের দূষিত পানি পান করার কারণেই ডায়রিয়ায় রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক সময়ে ড্রেনের ময়লা পানির চেয়েও খারাপ পানি আসে সিটি কর্পোরেশনের সরবরাহকৃত লাইন থেকে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বার বার জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি।  

তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের পানি বিভাগের প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান জানান, পানির সমস্যা নিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। 

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, সরবরাহকৃত পানিতে কোন সমস্যা আছে কিনা, তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। তবে সিটি কর্পোরেশনের পানি গৃহস্থালি কাজের জন্য সরবরাহ করা হয়। এটা সেইফ ওয়াটার না। এ পানি পান করতে হলে ফুটিয়ে নিতে হবে। এনিয়ে বিভ্রান্ত হবার কিছু নেই।  বিষয়টি নিয়ে একাধিক মেডিকেল টিম কাজ করছে। কারণ অনুসন্ধানে অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সিটি প্রশাসক জানিয়েছেন। 

কেএসটি