• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০১৯, ০৯:১৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১০, ২০১৯, ০৯:১৯ পিএম

বান্ধবীর কাছে লেখা রাফির আবেগঘন চিঠি উদ্ধার

বান্ধবীর কাছে লেখা রাফির আবেগঘন চিঠি উদ্ধার

গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টার শিকার নুসরাত জাহান রাফির লেখা একটি চিঠি জব্দ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে তার পড়ার টেবিল থেকে আবগঘন ওই চিঠিটি জব্দ করা হয়।

তবে পুলিশ বলছে, চিঠিতে দিন-তারিখ লেখা না থাকলেও নিজ মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার কাছে যৌন হয়রানীর শিকার হওয়ার পর যে তিনি চিঠিটি লিখেছেন সে বিষয়টি স্পষ্ট। তাই চিঠিটি তারা আলামত হিসাবে সংগ্রহে রেখেছেন। কারন তার পড়ার টেবিলে খাতায় দুই পাতার ওই চিঠিতে তামান্না ও সাথী নামের দুই বান্ধবীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছে রাফি। তাছাড়া ওই চিঠিতে রাফি আত্মহত্যা করবেনা বলেও উল্লেখ করে। তবে যৌন হয়রানির ঘটনার পর সিরাজ উদদৌলাহ গ্রেফতার হলে তার মুক্তির দাবিতে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাফি। তাকে নিয়ে বান্ধবীদের বিভিন্ন কটুক্তিতেও তার মর্মাহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

চিঠিটি নিচে দেয়া হলো-

‘তামান্না, সাথী। তোরা আমার বোনের মতো এবং বোনই। ওই দিন তামান্না আমায় বলেছিল, আমি নাকি নাটক করতেছি। তোর সামনেই বললো। আরো কি কি বললো, আর তুই নাকি নিশাতকে বলেছিস আমরা খারাপ মেয়ে। বোন প্রেম করলে কি সে খারাপ ??? তোরা সিরাজ উদ দৌলা সম্পর্কে সব জানার পরও কীভাবে তার মুক্তি চাইতেছিস। তোরা জানিস না, ওইদিন রুমে কি হইছে ? উনি আমার কোন জাগায় হাত দিয়েছে এবং আরো কোন জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করেছে, উনি আমায় বলতেছে- নুসরাত ডং করিসনা। তুই প্রেম করিসনা। ছেলেদের সঙ্গে প্রেম করতে ভালো লাগে। ওরা তোরে কি দিতে পারবে ? আমি তোকে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন দেবো। আমি শুধু আমার শরীর দিতাম ওরে। বোন এই জবাবে উত্তর দিলাম। আমি একটা ছেলে না হাজারটা ছেলে...। আমি লড়বো শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত। আমি প্রথমে যে ভুলটা করেছি আত্মহত্যা করতে গিয়ে। সেই ভুলটা দ্বিতীয়বার করবো না। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। আমি মরবো না, আমি বাঁচবো। আমি তাকে শাস্তি দেবো। যে আমায় কষ্ট দিয়েছে। আমি তাকে এমন শাস্তি দেবো যে তাকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিবে। আমি তাকে কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দেবো। ইনশাআল্লাহ।

এদিকে গত ৬ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফিকে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার পর থেকে কেউ কেউ ঘটনাটিকে আত্মহত্যার চেষ্টা বলেও ধারণা করেছেন। তবে উদ্ধার হওয়া চিঠিটিতে রাফির ভাষ্য ভিন্ন।

সোনাগাজী মডেল থানার (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন চিঠিটি উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এটিও ওই ঘটনার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে। চিঠিতে উল্লেখিতদের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় ওই ছাত্রী। এ সময় তাকে কৌশলে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে ৪ থেকে ৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

এসসি/