আসছে ১৪ এপ্রিল বাঙ্গালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আর এই বৈশাখকে বরণ করার জন্য সারা দেশ জুড়ে চলছে নানা প্রস্তুতি। বৈশাখকে সামনে রেখে বাহারি কাগজ, কাপড় ও শোলা দিয়ে কৃত্রিম ফুল তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁ জেলার জামগ্রামের কুঠির শিল্পের কারিগররা। এই গ্রামে গোলাপ, স্টার, সূর্যমুখী, কিরণমালা, মানিক চাঁদ, জবা, বিস্কুট, গাঁদাসহ নাম না জানা বিভিন্ন ফুল তৈরি করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের একেবারেই প্রত্যন্ত একটি গ্রাম জামগ্রাম। নেই কোন পাকা রাস্তা। রাতের আঁধারে গ্রামবাসীদের এখনও বিদ্যুৎবিহীন ঘুমাতে হয়। অথচ বাংলাদেশের মধ্যে এটিই একমাত্র গ্রাম যেখানে কাগজ, কাপড় ও শোলার বাহারি নকশার কৃত্রিম ফুল তৈরি করা হয়। এখানকার তৈরি ফুলই বিভিন্ন উৎসবে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুরুষরা ফেরি করে বিক্রি করে। লাভও দ্বিগুণ। কিন্তু যোগ্য পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখনও এই হস্ত শিল্পটি আধুনকিতার দোর গোড়ায় পৌঁছায়নি। গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে গাছের ছায়া ভেজা বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন মিলে বসে বসে ফুল তৈরি করছে। বাংলাদেশে রঙ্গিন ফুল তৈরিতে জামগ্রাম সকলের কাছে বেশ পরিচিত। কারণ বাহারি নকশী ফুল শুধুমাত্র এই গ্রামেই তৈরি করা হয়। তারপর পরিবারের পুরুষরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে তা বিক্রি করে। তবে দুই ঈদে, বিভিন্ন পূজা, মেলা ও পহেলা বৈশাখে এসব ফুলেরচাহিদা বেশি থাকে। প্রায় ৫০-৬০ বছর পূর্বে গ্রামে ফুল তৈরি করা শুরু হয় কিছু সনাতন ধর্মালম্বী মানুষের হাত ধরে। এখন তা পুরো গ্রামের মানুষের বেঁচে থাকা ও আয়ের একমাত্র উৎসে পরিণত হয়েছে। এ ব্যবসায় লাভজনক। প্রতিটি ফুল প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে এই গ্রামের প্রায় ৭শ পরিবার এই বাহারি ফুল তৈরি করার কাজে নিয়োজিত। সংসার দেখভাল করার পাশাপাশি গ্রামের মহিলা, পুরুষ ও ছোট-বড় সবাই এই ফুল তৈরি করে।
গ্রামের মো. হোসেন আলী জানান, এক সময় এই গ্রাম খুবই অবহেলিত ছিল। রাস্তা-ঘাট কোনটিই ছিল না। কিন্তু বর্তমানে একটু হলেও উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ আসে নাই। তাই কারিগরদের শত ইচ্ছা থাকলেও রাতে ফুল তৈরির কাজ করতে পারে না। আমাদের এই শিল্পটিকে আরও গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ।
রুখসানা আখতার জানান, আমরা আমাদের সংসারের সব কাজ শেষ করে পরিবারের পুরুষদের ফুল তৈরিতে সাহায্য করি। ফুলের ব্যবসায় লাভ জনক। আগে পুরুষরা বাহিরে গেলে দুবৃর্ত্তরা মাঝে মাঝে সবকিছু ছিনতাই করে নিতো কিন্তু এখন আর তা হয় না। এখন শুধু আমাদের এই গ্রামটিকে আধুনিক মান সম্মত গ্রামে পরিণত করা প্রয়োজন।
জনি ইসলাম জানান, ফুল তৈরিতে পরিবারের গৃহিনীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন বে-সরকারি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই ব্যবসা করে আসছে। মাস শেষে লাভের বেশি ভাগই দিতে হয় ওই সব এনজিওতে। তাই সরকার যদি এই শিল্পর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য বিনা সুদে ঋণ দিতো তাহলে এই হস্ত কুঠির শিল্পটি আগামীতে আরও বেশি বিস্তার লাভ করতো। তাই এই গ্রামবাসীর সরাসরি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম এটি একটি ঐতিহ্যপূণ শিল্প। যার কদর সারা দেশে। সৌখিন মানুষ ও শিশুদের কাছে এই বাহারি কৃত্রিম ফুলগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। এই শিল্পটিকে আরো সম্প্রসারিত করার জন্য সরকারের এগিয়ে আশা উচিত। এই গ্রামের মানুষদের আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারলে তারা এই শিল্পটিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। এতে সরকার এই শিল্প থেকে অনেক অর্থ রাজস্ব হিসাবে আয় করতে পারবে। এসব কারিগরদের জন্য যদি হস্ত শিল্পটির উপড় উন্নত মানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হতো তাহলে এই শিল্পটি আরো আধুনিক ও মান সম্মত হতো। তাদের সহযোগিতা আমি তাদের পাশে আছি।
একেএস