• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৩, ২০১৯, ১১:১৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৩, ২০১৯, ১১:১৬ এএম

ফণীর প্রভাবে উপকূলের লাখো মানুষ আতঙ্কিত 

ফণীর প্রভাবে উপকূলের লাখো মানুষ আতঙ্কিত 

উপকূলবাসীর চোখে ঘুম নেই। ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ কারণে সুন্দরবন ছেড়েছেন পর্যটকরা। সুন্দরবন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ভয়াল ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ধেয়ে আসছে উপকূলের দিকে। এর প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রার আশপাশের নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল থেকেই বাগেরহাটের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হয়েছে। এরই মধ্যে নিম্নাঞ্চলের মানুষদের সাইক্লোন শেল্টারে নেয়া হয়েছে।

উপকূলে ধেয়ে আসা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সুন্দরবন সন্নিহিত সিডর-আইলা কবলিত বাগেরহাটের বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা, খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা শ্যামনগর, আশাশুনি উপজেলার লাখো মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদহানির আশঙ্কাও করছেন অনেকে। বৃহস্পতিবার দিনভর মাইকিং করে সতর্ক বার্তা প্রচার করেছে রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা। বিকেলে খুলে দেয়া হয়েছে সাইক্লোন শেল্টার।

নিরাপত্তার কারণে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের শেলারচর বন বিভাগের অফিস বন্ধ করে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরিয়ে আনা হয়েছে। করমজল ও হারবাড়ীয়া পর্যটন কেন্দ্র ছেড়েছেন পর্যটকরা।

ঘূর্ণিঝড় ফণী সুন্দরবনে আঘাত হানলে বন্যপ্রাণীর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনপূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান। তিনি জানান, সুন্দরবন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ নিরাপদে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুন্দরবনের করমজল ও হারবাড়ীয়া পর্যটন কেন্দ্রের পর্যটকদেরও সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এদিকে, মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠা-নামার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্দরে জারি রয়েছে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত। বন্দর জেটি ও আউটার অ্যাংকরেজে অবস্থানরত ১৬ জাহাজসহ সব ধরনের পণ্যবাহী লাইটার জাহাজকে বন্দরের পশুর চ্যানেল থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা করে ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার দুরুল হুদা

বাগেরহাট উপকূলে ঝড়ো হাওয়া বইছে। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে রয়েছে। ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার তালুকদার মোংলা ও রামপালের স্থানীয় প্রশাসনকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী এলাকা ঘুরে-ঘুরে সরেজমিনে ঘূর্ণিঝড়ের আগেই সাধারণ মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

এদিকে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসন আবারও সভা করেছে। জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা থেকে জানানো হয়, বাগেরহাট জেলার ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা সদরসহ ৯টি উপজেলার প্রতিটিতে একটি করে কন্টোল রুম খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮৬টি মেডিকেল টিম। জেলার সরকারি কর্মকতা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কয়েক হাজার উদ্ধার কর্মীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মজুত করা হয়েছে শুকনা খাবার ও সুপেয় পানি।এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ফণীর খবর পাওয়ার পরই সাগর থেকে ফিরে এসেছে অধিকাংশ মাছ ধরার ট্রলার। তবে এখনো কিছু কিছু ট্রলার ফিরে না আসায় আতঙ্কে রয়েছে ট্রলার মালিকরা।