কাকডাকা ভোরে ময়মনসিংহের ৩০ থেকে ৩৫ টি স্থানে কামলার বাজারে হাকডাক চলে। দর কষাকষি শেষে বোরো ধান কাটা শ্রমিকরা কামলাহাট থেকে চলে যান ফসলের মাঠে। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে একজন শ্রমিকের মজুরি এখন ১ হাজার টাকা। যেখানে বর্তমানে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।
সরেজমিন ময়মনসিংহের দাপুনিয়া, দেওখোলা, ফুলবাড়ীয়া, ধারা বাজারসহ বেশ কয়েকটি ঘুরে দেখা ভোরে কাঁচি ও দড়ি নিয়ে জড়ো হওয়া শ্রমিকরা প্রহর গুনছেন। এ বাজারে আধ ঘণ্টার দর কষাকষি শেষে কামলারা একেক জনের সঙ্গে চলে যায়।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ধারা বাজারেও এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে কামলার মুজরি। জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরি ১০০০ টাকা আর মণ প্রতি ধানের মূল্য ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। প্রতিবারের ন্যায় এবার মজুরি সবচেয়ে বেশি। বিরূপ আবহাওয়ার ফলেই মজুরি ওঠানামা করে। ফসল কাটার শুরুর দিক থেকে ৫শ টাকার মজুরি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০০ টাকায়।
উপজেলার ধারা গ্রামের শ্রমিক আব্দুল খালেক জানান, গৃহস্থ তাদের সাধ্যমতো কাজ করাতে চায়। রক্তচোষা জোঁক আর ক্ষেতে জমে থাকা পচা পানিতে দাঁড়িয়ে থেকে ধান কাটার কাজ করতে হয়।
অপর এক শ্রমিক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ভাই আমরা গরিব মানুষ। ৫ সদস্যের অভাবের সংসার দিন এনে দিন খাই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা কাজে থাকতে হয়। তাই বাড়িতে অলস বসে না থেকে কাজের জন্য ছুটে এসেছি।
কষ্ট অনুযায়ী মজুরি বেশি স্বীকার করে আরেক শ্রমিক হেকিম আলী বলেন, বাজারে কামলার বেশ চাহিদা। তাই আমাদের ডিমান অহন বেশি।
হাটে শ্রমিক নিতে আসা ধুরাইল ইউনিয়নের চরণদর গ্রামের জালাল উদ্দিন বলেন, প্রায় ৩ একর জমিতে ২৮ জাতের ধান করেছিলাম রোগে সব নষ্ট হইছে। শুকনো খড়সহ ধান গেলো ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে পানিতে ভাসছে। নিজের এলাকাতে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় শ্রমিক নেয়ার উদ্দেশ্যে ৭ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছি।
দরদাম যা থাকুক আজকের মধ্যে ধান কাটতেই হবে। শ্রমিক নিতে আসা ধারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, কষ্টের ফসলে ধানের নায্যমূল্য নেই। তার উপর পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা কৃষকরা এসে এই বাজারে ভিড় করছে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলে কামলার যে দ্বিগুণ মূল্য সেটা কম হতো। যে ধান পাই সেগুলো বিক্রি করলে শ্রমিকের বেতন দেয়াই কঠিন হয়ে পড়বে। ধানের বাজারে এই অবস্থা থাকলে ফসল বাবদ ঋণের ওপর ঋণ করতে হবে।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা সদরের বৃহস্পতিবার ভোরে কামলার বাজারে আসা মোফাজ্জলকে শ্রমিক হিসাবে নিতে আসা রাজ্জাক দরদাম করছিল। এক হাজার টাকার দর কষাকষিতে দুপুরে খাবার দেয়ার কথা বলে ৮শ টাকা দরদাম ঠিক করে কৃষক রাজ্জাক তাকে নিয়ে চলে গেলেন।
বাজারে আসা কৃষক মজিদ জানান, ক্ষেতে ধান পেকে গেছে। এখন আবহাওয়া ভাল তাই চড়া দামে শ্রমিক নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বোরো ধান কাটার ভরমৌসুম চলবে ১০/১২ দিন।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, সরকার কিছুদিনের মধ্যেই ধান কেনা শুরু করবে। যদি ধান কেনা শুরু হয়ে যায় তাহলে কৃষক তার ধানের ন্যায্যমূল্য পাবে। হালুয়াঘাটে এবার ৫ শত ৯২ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। তবে যদি আরও বেশি ধান কেনা গেলে ভালো হতো। বাজার মনিটরিং বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এই বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিবো, যাতে ধানের দাম অনুযায়ী শ্রমিক মূল্য পায়।
একেএস