• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১১, ২০১৯, ০৮:৫৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১১, ২০১৯, ০৯:৪৫ পিএম

বাগেরহাট

ধানের বাম্পার ফলন, ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না ৫০ হাজার কৃষক

ধানের বাম্পার ফলন, ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না ৫০ হাজার কৃষক
সরকারিভাবে ধান-চাল ত্রুয় শুরু না হওয়ায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে কম দামে বেপারিদের কাছে ধান বিক্রি করছেন -ছবি : জাগরণ

ধানের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বাগেরহাটের ৯ উপজেলার ৫০ হাজার কৃষক। এখনও সরকারিভাবে ধান-চাল ত্রুয় শুরু না হওয়ায় তারা ব্যাংক ও দাদন ব্যবসায়ীদের দেনার পাঁয়তারায় ফসল গোলায় না ভরে ফড়িয়া ও ব্যাপারিদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে হাসি নেই কৃষকের মুখে।

জানা যায়, উপজেলার চিতলমারীতে ৮০ হাজার ৯৫ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হলেও সরকারিভাবে ক্রয় করা হবে ৪০৩ মেট্রিকটন ধান। তাই বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের কাছে এ অঞ্চলের কৃষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের ঋণ পরিশোধ করতে কৃষকরা কম দরে ধান বিক্রি করতে বিভিন্ন ফড়িয়া ও ব্যাপারিদের শরণাপন্ন হচ্ছেন।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চিংড়ি চাষে বিপর্যয়ের পর এ অঞ্চলের মানুষ বড় আশা করে বোরো ধানের আবাদ শুরু করে। এ বছর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মোট ব্লকের সংখ্যা ছিল ২১টি। এর মধ্যে বড়বাড়িয়া ব্লকে ১ হাজার ৬৫৫ একর, হাড়িয়ারঘোপ ১ হাজার ১৮৫ একর, মাছুয়ারকু ১ হাজার ৮৭৭ একর, কলাতলা ১ হাজার ৩৫৮ একর, রহমতপুর ১ হাজার ২৯৬ একর, শৈলদাহ ১ হাজার ৩০৯ একর, হিজলা ১ হাজার ৩৪৬ একর, কুড়ালতলা ১ হাজার ৩৩৩ একর, শান্তিপুর ১ হাজার ১৯৭ একর, শিবপুর ৬৬৭ একর, বড়বাক ৬১৭ একর, চিতলমারী সদর ২ হাজার ৭৪ একর, শ্রীরামপুর ৩ হাজার ৩১০ একর, রায়গ্রাম ৩ হাজার ৮০৩ একর, চরবানিয়ারী ৭০৪ একর, খড়মখালী এক হাজার ৫০ একর, চরডাকাতিয়া ৫৫৫ একর, সন্তোষপুর ৭৯০ একর, দড়িউমাজুড়ি ১ হাজার ২২২ একর ও কচুড়িয়া ব্লকে ৯৬৩ একরসহ মোট ২৯ হাজার ৮৯৭.১ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২৮ হাজার ৪৯১.৪৫ একর জমিতে হাইব্রিড, ৪৮১.৬৫ একর জমিতে উফশী ও ৯২৪ একর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকার আক্রমণ না হওয়ায় এ বছর বেরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

সুরশাইল গ্রামের কৃষক শুধাংশু মণ্ডল, মুন্না শেখ, কুরমনির রেজাউল খান, বুদ্ধ বসু, কৃষ্ণ বিশ্বাস, উত্তম বসু, খিলিগাতির বাবলু মণ্ডল, শ্রীরামপুরের তাপস ভক্ত, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস ও খড়মখালীর পরিমল মজুমদারসহ অসংখ্য কৃষক জানান, এ বছর তারা স্বতস্ফূর্তভাবে ধান চাষ করেছেন। অনেক আশা ছিল এ বছর উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পেলে তাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসবে। ধারদেনা ও পাওনাদারদের তাড়া ঘুচবে। মুখে হাসি ফুটবে। কিন্তু এ উপজেলায় সরকারিভাবে এখনও ধান-চাল ক্রয় শুরু হয়নি। ফলে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। এখানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকা দরে।

এ বছর সরকার নির্ধারিত মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা। অথচ প্রতিদিন একজন কৃষকের মজুরি দিতে হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা। এতে সাধারণ কৃষকদের ধান কাটা ও শ্রমিকের মজুরির দাম পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তারা আরও জানান, উৎপাদিত ধান এখন আর তাদের গোলা ভরছে না। বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, দাদন ব্যবসায়ী ও সুদখোর মহাজনদের দেনার দায়ে ধান চলে যাচ্ছে ট্রাকে। ভরছে মহাজনের মিল ও গুদাম। তাই এ অঞ্চলের কৃষক পরিবারের কারো মুখে হাসি নেই। আছে দুঃখ-বেদনা আর পাওনাদারের তাড়া।

চিতলমারীর ধান ব্যাবসায়ী আসলাম বিশ্বাস, সুকুমার ঘটক, জাকির হোসেন ও রফিক আহম্মেদ জানান, এ উপজেলার উৎপাদিত ধান ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, মনিরামপুর, বসুন্দিয়া, খুলনা ও বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের রাইস মিলে বিক্রি হয়ে থাকে। মিল থেকে তারা যে দাম পান সেই হিসাবে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে থাকেন।

উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আদুরী রাণী ব্রহ্ম জানান, ধান-চাল ক্রয়ের চিঠি মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে। এ বছর সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা (প্রতি মণ ১০৪০ টাকা) ও প্রতি কেজি চালের দাম ৩৬ টাকা (প্রতি মণ ১৪৪০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে। মিটিংয়ের কারণে এখনও ধান-চাল ক্রয় শুরু হয়নি। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এ উপজেলায় মোট ৪০৩ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হবে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন জানান, উপযোগী আবহাওয়া, পোকা-মাকড়ের কম উপদ্রব ও যথাযথ পরিচর্যায় এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৭০ হাজার একর জমিতে এখানে কমপক্ষে ১২০ হাজার ৭৫ মেট্রিকটন ধান উৎপাদিত হয়েছে। তাই উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পেলে এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড শক্তিশালী হত।

একেএস